শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে নিজের কক্ষে শুক্রবার দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রুস্তম, যিনি ওই হল ছাত্রলীগের আসন্ন কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন।
ছাত্রশিবিরকে দায়ী করা হলেও এর সঙ্গে ছাত্রলীগের হল কাউন্সিলের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না- জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, কোনো কিছুই উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।
রাজশাহী উপ-পুলিশ কমিশনার (পূর্ব) প্রলয় চিচিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কাউকে সন্দেহের বাইরে রাখছি না।
“ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকেও ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আসলে পুলিশ সব কিছু বিবেচনা করে তদন্ত করছে।
”
হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা পরও পুলিশ জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার কিংবা পিস্তলটি উদ্ধার করতে পারেনি। রক্ত ছাড়া কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে ওসি জানিয়েছেন।
মতিহার থানার ওসি এবিএম রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশের বেশ কয়েকটি দল তদন্তে কাজ করছে।
“ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে এই ঘটনা ঘটতে পারে, আবার বাইরে থেকেও কেউ হলে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। ”
হত্যাকাণ্ডের পরপরই ছাত্রলীগের নেতারা ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে বক্তব্য দেন।
জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনটি তা অস্বীকার করলেও আগের বক্তব্যেই আছেন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
নিহত রুস্তম আলী আকন্দ
শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে হলের দ্বিতীয় তলায় ২৩০ নম্বর কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন হল ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুস্তম। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা যান, তিনি মারা গেছেন।
হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিনসহ ছাত্রলীগের নেতারা বলেছিলেন, খুনি কিংবা খুনিরা জানালা দিয়ে রুস্তমকে গুলি ছোড়ে।
সরেজমিন দেখা যায়, দ্বিতীয় তলার মধ্যব্লকে (পূর্বদিকে) রুস্তমের কক্ষের বাইরের জানালায় এমন কোনো গাছ নেই যে তা বেয়ে ওপরে উঠে কারো পক্ষে গুলি ছোড়া সম্ভব।
মই কিংবা কিছু ব্যবহার করে ওপরের ওঠার নজিরও চোখে পড়েনি হলের শিক্ষার্থীদের কাছে।
এই বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা তুহিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাছ বেয়ে না উঠতে পারলেও সিঁড়ি দিয়ে যে কেউ গিয়ে তার (রুস্তম) কক্ষের জানালা (ভেতরের) দিয়ে গুলি করতে পারে। গুলি করেই খুনিরা হলের ভেতরেই কোনো কক্ষে আত্মগোপন করে থাকতে পারে। ”
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই হলটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানার অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে। আর হলের ফটকেও পুলিশের অবস্থান ছিল।
সভাপতি রানার সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকদফা তার মোবাইলে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আগামী ১০ এপ্রিল হল ছাত্রলীগের কাউন্সিল হওয়ার কথা, আর তার পাঁচ দিন আগে খুন হলেন সভাপতি প্রার্থী রুস্তম।
সভাপতি পদে রুস্তমের পাশাপাশি আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সেলিম হোসেন, মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কবির হোসেনও প্রার্থী ছিলেন।
গুলিবিদ্ধ রুস্তমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল গালিবও ছিলেন,যাকে দুই মাস আগে ফি বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্র হাতে চড়াও হতে দেখা গিয়েছিল।
রুস্তমকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সময় গালিবের সঙ্গে ছিলেন কবির, সেলিম রেজা, শাহজাহান আলী সম্রাটসহ কয়েকজন।
চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রুস্তমকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান গালিব, সেলিম রেজা, কবির ও সম্রাট।
শিক্ষার্থীরা জানায়, গালিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেন সভাপতি প্রার্থী সেলিম হোসেন। আর তাদের অনুসারী কর্মী হলেন সেলিম রেজা, যার ছাত্রাবাস পাশের জিয়াউর রহমান হল।
২১৮ নম্বর কক্ষে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপসাহিত্য সম্পাদক শাহজাহান সম্রাট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি জুমার নামাজের জন্য বের হওয়ার ঠিক আগে তার ব্লকের পশ্চিম পাশে একটি শব্দ শুনতে পান। ছুটে গিয়ে দেখেন ২৩০ নম্বর কক্ষের মেঝেতে রুস্তমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
ওই গুলির শব্দ হলের অনেক শিক্ষার্থী শুনতে পেলেও ভয়ে কেউ বের হননি।
রুস্তমের পাশের কক্ষের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শব্দ হওয়ার পরপরই গালিব ও সেলিম রেজার তর্কাতর্কির আওয়াজ শুনেছিলেন তিনি।
“গুলির শব্দের কয়েক মিনিট আগে রুস্তমকে গোসল করে কক্ষে ফিরতে দেখি। ওই সময় ওই কক্ষে গালিব, সেলিম রেজাসহ কয়েকজন ছিলেন। ”
গুলির আওয়াজ পাওয়ার পর আতঙ্কে নিজের ক্ক্ষ থেকে বের হননি ওই শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি বলেন, কয়েকদিন আগে রুস্তমকে একটি পিস্তল দেয়া হয়েছিল।
হাসপাতালে রুস্তমের মৃত্যু ঘোষণার পর গালিব ও সেলিম রেজার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রুস্তম আলীর মায়ের আহাজারি
কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,লাশ নিয়ে তিনি, গালিব, সেলিম রেজা রুস্তমের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুরে গিয়েছিলেন।
রুস্তম আলীর মায়ের আহাজারি
গালিব ও সেলিমের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা আমি বলতে পারছি না। ”
কাউন্সিল নিয়ে রুস্তমের সঙ্গে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব ছিল না দাবি করে তিনি কবির বলেন, “রুস্তম ভাই সভাপতি হতে চাওয়ায় আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।
”
হত্যাকাণ্ডের জন্য শিবিরকে দায়ী করে তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতেও আমরা একসঙ্গে হলের বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে শিবিরের ছেলেদের হল ছেড়ে যাওয়ার জন্য কড়া ভাষায় বলে এসেছিলাম। এতে ক্ষুব্ধ হয়েই হয়ত শিবির ক্যাডাররা তাকে খুন করেছে। ”
কাউন্সিল নিয়ে সংগঠনের মধ্যে কোন্দলের কথা নাকচ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তুহিনও।
রুস্তম, গালিব ও সেলিম সবাই সভাপতি রানার অনুসারী জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে অন্তর্কোন্দলের কোনো সুযোগই নেই। কোনো একটি মহল গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।