শ্যাম্পেন ছিল না। ছিল এক বোতল মিনারেল ওয়াটার। কে একজন সেটা থেকেই পানি ছিটাতে লাগলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের ওপর। কিন্তু শ্যাম্পেনের কাজ কি আর মিনারেল ওয়াটারে হয়!
আসলে কাল শ্যাম্পেন থাকলেও শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের উৎসব পূর্ণতা পেত কি না, সন্দেহ। এ এমন এক উৎসব, যাতে আনন্দ সংগীতের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার বিদায়ের রাগিনী।
শিরোপা বঞ্চনার হাহাকার ঘোচানোর তৃপ্তি, এশিয়া কাপের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ—‘ডাবল জয়ের’ উৎসব মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে করে তুলল বর্ণিল, আলোকোজ্জ্বল। আর এই সবকিছুই শ্রীলঙ্কাকে উৎসর্গ করা।
ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে স্বয়ং ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি বলে দিলেন, শ্রীলঙ্কার জয়টা যত না ভারতের ব্যর্থতা, তার চেয়ে বেশি শ্রীলঙ্কারই কৃতিত্বে, ‘তারা সব পরিকল্পনাই দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। আগের ম্যাচগুলো খেয়াল করলে দেখবেন, তাদের বোলাররা সব সময় স্টাম্পের অনেক বাইরে ইয়র্কার করে গেছে। মালিঙ্গা এই বলটা করতে খুব পছন্দ করে।
ফাইনাল বলেই হয়তো বেশি চোখে পড়েছে, নয়তো শ্রীলঙ্কা এটা নিয়মিতই করে। প্রয়োজনে মাঝপথে পরিকল্পনা পরিবর্তনও করে। ’
অন্যদিকে ড্রেসিংরুমের পরিকল্পনা মাঠে কাজে লাগাতে পুরোপুরি ব্যর্থ ধোনির দল। শেষ ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান আসাটাকে তারই একটা প্রমাণ বলতে পারেন। ধোনি নিজেও বলছিলেন, ‘যত বেশি সম্ভব রান করতে হয় ওই সময়টাতে।
কিন্তু আমরা সেটা করতে পারিনি। এ জন্য অবশ্য শ্রীলঙ্কান বোলারদেরও কৃতিত্ব দিতে হবে। ’ অবশ্য বাকি সব ম্যাচ জেতার পর শুধু ফাইনালে হেরে যাওয়াতেই সব শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করেন না ভারত অধিনায়ক। সংবাদ সম্মেলনে বসেও পিঠ চাপড়ে দিচ্ছিলেন সতীর্থদের, ‘প্র্যাকটিস থেকে শুরু করে পুরো টুর্নামেন্টেই আমরা খুব ভালো খেলেছি। আমরা যে দলে খুব বেশি পরিবর্তন আনিনি, সেটাই এর প্রমাণ।
সবাই যেভাবে পারফর্ম করেছে, সব মিলিয়ে আমি খুশি। ’
ভারতের রানটা খুব বেশি না হওয়ার একটা বড় কারণ যুবরাজের ২১ বলে ১১ রান। সংবাদ সম্মেলনে আক্রমণাত্মক প্রশ্নগুলো তাই ওই যুবরাজকে ঘিরেই হলো। কিন্তু যুবরাজের হয়ে কি দারুণ ‘ব্যাটিং’ই না করে গেলেন ধোনি, ‘সবচেয়ে বড় কথা, ও চেষ্টা করেছে। এর চেয়ে বেশি আপনি কিইবা করতে পারেন।
হয়তো আজকের (গতকাল) রাতটাই তার ছিল না। ’
রাতটা ছিল আসলে কুমার সাঙ্গাকারার। নইলে যে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন, সেই ম্যাচেই কিনা ম্যান অব দ্য ম্যাচ তিনি! খেলা শেষে মাঠ প্রদক্ষিণ করলেন সতীর্থদের কাঁধে চড়ে। শেষ ম্যাচ বলে সেটা অবশ্য মাহেলা জয়াবর্ধনেও চড়েছেন। তবে শ্রীলঙ্কার বিজয় উৎসবে সাঙ্গাকারাই হয়ে ছিলেন মধ্যমণি।
তবে বিদায় উপহারটা যে কে কাকে দিলেন, সেটা চিররহস্যই হয়ে থাকবে। সাঙ্গাকারার ৩৫ বলে অপরাজিত ৫২ রান শ্রীলঙ্কাকে ফাইনাল জেতাল, নাকি শ্রীলঙ্কান সতীর্থরা শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শিরোপা উপহার দিলেন সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনেকে! যেটাই হোক, ম্যাচ শেষে সবার অভিনন্দনে সিক্ত সাঙ্গাকারা বলছিলেন, ‘অসাধারণ...। এই প্রথম বিশ্বকাপ জেতা কোনো দলের অংশ হলাম...কেমন লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। এর আগে চারবার আমরা হতাশ হয়ে ফিরে গেছি। কেমন যে লাগছে, আসলেই বোঝাতে পারব না...।
’
সাঙ্গাকারা বলে বোঝাতে না পারলেও ফাইনালে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গা যেন আগেই জানতেন কাল রাতের চিত্রনাট্যের কথা। সাঙ্গাকারার প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, ‘সাঙ্গাকারা এই টুর্নামেন্টে রান পাচ্ছিল না। আমি তাকে বলেছিলাম, ভালো কিছু থেকে মাত্র একটা ইনিংসই দূরে আছে সে। সেই ইনিংসটা আজই (গতকাল) খেলে দিল সাঙ্গাকারা। ’ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দল দিনেশ চান্ডিমালের নেতৃত্বে খেলতে এলেও শিরোপা জিতল মালিঙ্গার নেতৃত্বে।
এতে হয়তো একটু নাটকীয়তা আছে, কিন্তু মালিঙ্গার কথা শুনে মনে হলো, অধিনায়কত্বটা মোটেও কঠিন ছিল না তাঁর জন্য, ‘অধিনায়কত্ব আমি উপভোগই করেছি। কারণ আমি ১০ বছর ধরে এই দলে খেলছি। দলের কার কী ক্ষমতা, সেটা আমার ভালোভাবেই জানা আছে। ’
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত মালিঙ্গার সেই তালিকায় সবচেয়ে বেশি নম্বর সম্ভবত কুমার সাঙ্গাকারাই পেয়ে গেলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।