সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন ও প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। এখান থেকে এমপিদের ক্ষমতা কমাতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ডাটাবেজ তৈরি করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী অগ্রাধিকার প্রকল্প চিহ্নিত করে সেগুলো বাস্তবায়নে সচিবদের আরও জোরাল পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আদালত অবমাননার বিষয়টি অবগত আছেন বলে সচিবদের জানান। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সচিব-সভায় এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে বিকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সংবাদ সম্মেলন ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনার কথা জানা গেছে। এই মেয়াদে সরকার গঠনের পর সচিবদের সঙ্গে এটিই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম বৈঠক। এই বৈঠকে সরকারের ৬১ জন সচিব অংশ নেন।
বক্তব্য রাখেন ২২ জন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে একবার বক্তব্য দেন। পরে তিনি সচিবদের মতামত শোনেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সরকারের ভিশন, দর্শন ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে অতীতে সচিবরা যেভাবে কাজ করেছেন তার প্রশংসা করে ভবিষ্যতে সচিবদের আরও জোরালভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছর সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রাধিকার নির্ধারণ করে কাজ করার নির্দেশ দেন।
এ জন্য নির্বাচনী ইশতেহার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সংক্রান্ত যেসব দলিল আছে সেগুলো পাঠ করে তা অনুসরণ ও বাস্তবায়নের জন্য মনোযোগী হতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষায় জনপ্রশাসনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণের ওপর জোর দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের উদ্দেশে বলেন, সচিব ও তাদের অধীনস্ত কর্মকর্তারা যাতে মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রকল্প বাছাই করার ওপর গুরুত্ব্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পে যেসব সুবিধাভোগী রয়েছেন তাদের ডাটাবেজ করে সঠিক তালিকা করতে হবে যাতে ওভারলেপিং না হয়। আর প্রকল্প গ্রহণ ও বাছাই করার ক্ষেত্রে আন্তঃ মন্ত্রণালয় বৈঠকের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, যেসব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া বিল রয়েছে সেগুলো দ্রুত আদায় করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে গণশুনানির বিষয়টি আরও সম্প্রসারিত ও উন্নত করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উদ্দেশে বলেন, এটিকে একেবারে মাঠ প্রশাসন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে এই গণশুনানি শুধু জেলা প্রশাসক পর্যায়ে হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সচিবকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সুশাসন নিশ্চিত করা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সচিবদের নির্দেশ দেন।
এদিকে বৈঠক শেষে একাধিক সিনিয়র সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারে সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা কমিয়ে এটিকে শক্তিশালী করতে হবে। স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
একজন সিনিয়র সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৈঠকে আদালত অবমাননার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আদালত অবমাননার বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত অবমাননার আইন যে উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে সেটা হচ্ছে না।
আদালত অবমাননা আইনের বিষয়টি যাতে সঠিকভাবে প্রয়োগ হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ওই সিনিয়র সচিব আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী বুড়িগঙ্গা উদ্ধারের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, বুড়িগঙ্গার সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এটিকে বাঁচাতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধেও নিবিড় অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।