আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাম্প্রদায়িকতার ক্ষতে রাষ্ট্রীয় ক্ষতিপূ

ধর্মান্ধ কিছু মানুষের উন্মত্ত সহিংসতার ধ্বংসস্তূপ কেমন হয় সেটা দেখার সুযোগ ছিল না। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের ক্ষতের ওপর রাষ্ট্রীয় ক্ষতিপূরণে বদলে যাওয়া রামু ও উখিয়ার বৌদ্ধবিহারগুলো দেখে আসতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী যখন আমন্ত্রণ জানান তখনো বুঝা যায়নি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কী অসাধারণ নির্মাণযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র আট মাসের নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমে। সাদামাটা টিনের একচালা বৌদ্ধবিহার পরিণত হয়েছে তিনতলা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায়। এখন দেশি-বিদেশি ধর্মপ্রাণ মানুষের আকর্ষণীয় আরাধনা কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যের এই স্থাপনাগুলো।

গত ৩ সেপ্টেম্বর পুনর্নির্মিত ও সংস্কার হওয়া রামুতে ১২টি ও উখিয়ার ৭টি বৌদ্ধবিহার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ১৯টি বৌদ্ধবিহার পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গাইনাইজেশন (এসডবি্লউও) এর ১৭ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) দিন-রাতের নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমে নির্মাণ আদেশের আট মাসের মাথায় ১৯টি বিহার ও মন্দির পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারকাজ সম্পন্ন করে।

এর আগে ফেসবুকে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার একটি ছবি যুক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উগ্রপন্থি কিছু মানুষ রামু ও উখিয়ার বৌদ্ধপল্লীতে হামলা চালায়। এ সময় রামুর ১২টি প্রাচীন বৌদ্ধমন্দিরে এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ২৬টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া উখিয়ার আরও ৭টি বৌদ্ধমন্দির ও শতাধিক বসতঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎক্ষণিকভাবে বিহার ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দেন। তিনি ৮ অক্টোবর হামলার শিকার বৌদ্ধপল্লী পরিদর্শন করে সেগুলোর সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের আশ্বাস দেন। তার নির্দেশে সেনাবাহিনী গত বছরের ১ নভেম্বর ১৯টি বিহার ও মন্দিরের সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করে এবং মাত্র আট মাসের মাথায় ৩০ জুন সবগুলোর কাজ শেষ করে। মঙ্গলবার এসব নতুন স্থাপনা দেখতে দেশি-বিদেশি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ২৮ সাংবাদিক রামু পরিদর্শন করেন। সঙ্গে ছিলেন সেনা সদরের প্রতিনিধি লে. কর্নেল কাজী ইফতেখার উল আলম। এসডবি্লউও চট্টগ্রামের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সামছুল আলম খান বৌদ্ধবিহার ও মন্দির পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারকাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, টাকার কোনো সংস্থান ছিল না। সরকারি কাজের টাকা কত মন্থরগতিতে ছাড় হয় আপনারা জানেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা নিজেদের টাকায়ই এই কাজ শুরু করে দিই। কাজ শুরুর পাঁচ মাস পরে সরকারি টাকা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ১৯টি বিহার ও মন্দিরের মধ্যে টিন দিয়ে নির্মিত স্থাপনার স্থলে ১৩টি পাকা ভবন সম্পূর্ণ নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। কোনো কোনোটিতে তিন তলা ভবন পর্যন্ত করে দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে মাটি এনে চমৎকার ল্যান্ডস্কেপিং করা হয়েছে। ধর্মচর্চার পাশাপাশি স্থাপনাগুলো দেশি-বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করবে। রামু ও উখিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহার পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল জুলফিকার রহমান বলেন, ৬টি বিহার আংশিক পুনর্নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে এত অল্প সময়ে এত বিশাল কাজ করা সম্ভব হয়েছে। এদিকে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ২৬টি বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দেয়। আমাদের পরিদর্শনকালে ১৭০৬ সালে নির্মিত রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের ভিক্ষুু সত্যপ্রিয় মহাথেরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর আন্তরিক উদ্যোগে আমরা বৌদ্ধ সম্প্রদায় খুব খুশি। আমরা আমাদের ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছি। ঘটনার পর থাইল্যান্ড থেকে কিছু বুদ্ধমূর্তি উপহার পাওয়া গেছে। কিন্তু যেসব ঐতিহাসিক পুঁথিপত্র ও পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে দিয়েছে সেগুলো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। মূল ত্রিপিটকের বড় অভাব। তিনি বৌদ্ধবিহারের স্থায়ী নিরাপত্তার আবেদন জানিয়ে বলেন, যারা সে দিন হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শত শত পুণ্যার্থী নারী-পুরুষকে বিহারে ধর্মীয় আচারে অংশ নিতে দেখা যায়। সীমা বিহারের সামনে রামু কলেজের ছাত্র জীবক বড়ুয়া বলেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিছিল আসে। বেশির ভাগ লোক আসে মণ্ডলপাড়া থেকে। তিনি বলেন, আমরা এখন নিরাপদে আছি। তবে আমাদের ধর্মগ্রন্থ সব পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহার পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। রামুর উত্তর মিঠাছড়িতে অবস্থিত বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা বিহার ও ভুবনকান্তি ১০০ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধমূর্তির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক করুণাশী ভিক্ষুু বলেন, আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, ১২টি বুদ্ধমূর্তি ছিল। হামলার পর সেগুলো নিয়ে গেছে। পরে থাইল্যান্ড থেকে ২টি উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে। প্রায় ২ একর জায়গার ওপর নির্মিত স্থাপনাটিতে একটি টিনশেড ছিল। হামলার রাতে সেটি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তখন ভয়ে পাশের জঙ্গলে পালিয়ে ছিলেন ভিক্ষুুসহ বিহারের কর্মীরা। এখন সেখানে দোতলা ভবন করে দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার বিকালে পুরো বিহার এলাকাটি অসংখ্য নারী-পুরুষ দর্শনার্থীর মিলনমেলায় পরিণত হতে দেখা গেল।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সামছুল আলম খান বলেন, নির্মাণ কাজ শুরু করতে গিয়ে আমরা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়েছি। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর পাশাপাশি বৌদ্ধ স্থাপত্যশৈলী অনুসরণ করে বৌদ্ধমন্দিরের নকশা তৈরিসহ এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়েছি স্থপতি বিশ্বজিত বড়ুয়ার। নতুন করে নির্মিত বৌদ্ধবিহারগুলোর মধ্যে উ. মংরি বৌদ্ধ (লাল চিং) বিহারটির আগের শৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নকশা তৈরি করেছেন স্থপতি মংথেহেন। তিনি বলেন, কাজ করতে নেমে দেখি নতুন নতুন দাবি আসছে। আমরা সবার সব দাবি মিটিয়ে সবচেয়ে নান্দনিকভাবে বিহার ও মন্দিরগুলোর কাজ করেছি। এখন স্থাপনাগুলো আন্তর্জাতিক পর্যটকদেরও আকর্ষণ করবে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.