আপনার শখের কাশ্মীরি গোলাপের গাছটা বেশ বড়সড় হয়েছে। আপনি ব্যস্ত থাকায় সপ্তাহ কয়েক টব পরিষ্কার করতে পারেননি। একটু কষ্ট করে গাছের গোড়ার দিকে দেখুন। ওহ্ হো! একদম আগাছায় ভরে গেছে তাই না! কি সব জঙ্গল জন্মেছে। ধ্যাততেরি বলে হাত চালিয়ে দিলেন বিছের ভয় না করেই।
আরে! হাত থেমে গেল যে! ওওও…একটা ক্ষুদ্র উদ্ভিদ আপনার নজর কাড়িয়াছে। চিরি চিরি পাতা, চিকন প্রায় লতানো শাখা। আবার সেই শাখায় শ্বেত শুভ্র ফুটফুটে পুষ্প দেখিতে পাইয়াছেন তো! ঠিক ধরেছি। পাতায় জমা ভোরের শিশির। ঝলমলে রোদের ঝলকানিতে মনে হচ্ছে যেন সোনার বিন্দু ছড়িয়ে আছে পাতায়।
ঠোট বাঁকিয়ে ভাবছেন এইটুকুন একটা গাছ, তাও আগাছা তার আবার এত বাহার! কেন রে ভাই! বামন রমনীর রুপ থাকতে নেই, এ কথা কোন পুরানে আছে শুনি! অসাধারন দেখতে উদ্ভিদটির নাম ক্ষেত পাপঁড়া। যদিও এটি আমাদের কাছে আগাছা নামেই পরিচিত। আর হবে নাই বা কেন। এখানে সেখানে যখন তখন এটির দেখা পাওয়া যায়। যে কোন গাছ লাগালেই হলো ক’দিন পর আর কোনকিছু থাক বা না থাক ক্ষেত পাপড়া থাকবেই।
এত সহজলভ্য বলেই হয়তো অনাদর অবহেলায় দিন কাটে তার। কিন্তু এর যে ব্যপক ঔষধী গুন রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানি না।
বাচ্চাটার হঠাৎ ডায়রিয়া দেখা দিল রাতে। শশুরের গেল পেট ফেঁপে। রাত দুপুরে দোকান খোলা পাবেন তো? আবার বুড়ো মানুষের পেটে সইবে কি না! বাচ্চাটাও সেন্সেটিভ।
সব ওষুধ সয়না। হাতের কাছে ক্ষেত পাপড়া তো আছেই। কতগুলো পাতা বেটে নিয়ে একটু গরম পানিতে মিশিয়ে খাইয়ে দিন। কথা দিচ্ছি রাতের ভেতরই উপকার পাবেন। নো সাইড এফেক্ট।
বেড়াতে গিয়েছেন জঙ্গলে, পাহাড়ে। দিল চ্যালা কিংবা সাপে কামড়ে। আতংকিত না হয়ে চারপাশে খুজুন। ক্ষেতপাপড়া পাবেনই। গাছটাকে শেকড় শুদ্ধ তুলে নিন।
একটু থেতো করে লাগিয়ে দিন। ব্যস! আপাতত মিটে গেল। এরপর দ্রুত হাসপাতালে যান।
মুখে ব্রণ দেখা দিয়েছে। ফুল ফল সহ পাতা বেটে লাগাতে পারেন।
সাথে সাথেই কাজ দেবে বলছিনা, তবে দেবে।
ফিলিপিনোরা এর ক্বাথকে দুধ চিনি মিশিয়ে হজমী হিসেবে খেয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে লোকজন লিঙ্গের দুর্বলতা কাটাতে লিঙ্গের উপর ক্ষেতপাপড়ার শেকড়ের প্রলেপ লাগিয়ে থাকে। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মানসিক বিষন্নতার ওষুধ হিসেবে একে ব্যবহার করা হতো। এছাড়াও জ্বর, ব্যথা পেলে, ঘা হলে, লিভারের রোগে, গেটেবাতের ব্যাথায়, মলদ্বারের ব্যথায়, নিউমোনিয়া, মাম্পস, ম্যলেরিয়া, গ্যাস নিসরণে ক্ষেতপাপড়া কার্যকরী।
নিয়মিত ক্ষেতপাপড়ার রস খেলে লিভার, মলদ্বার, স্তন ক্যান্সারের ঝুকি অনেকটাই থাকেনা। আধুনিক চিকিতসা বিজ্ঞানে এসবের ওষুধ তৈরীতে ক্ষেতপাপড়া ব্যপক ব্যবহার তো হয়ই ইদানীং ক্যান্সারের ওষুধ তৈরীতেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
ক্ষেত পাপঁড়ার বৈজ্ঞানিক নাম- Oldenlandia corymbosa. এটি Rubiaceae পরিবারের Oldenlandia গোত্রভুক্ত। এই গোত্রের আরো ২৪০টি প্রজাতী রয়েছে। যেগুলোরও অনেকগুলোর ভেষজ গুন রয়েছে।
বাসস্থান? পথে, ঘাটে, মাঠে, লনে, বাগানে, দেয়ালে, টবে, ফুটপাথে সর্বত্রই জন্মায়। তবে হ্যা, রোদ্রৌজ্জল পরিবেশে। আসলে বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয় আর খুব দ্রুত বাড়ে বলে এদের সবখানে দেখা যায়।
কি ভাবছেন? নাহ! আর তো একে ফেলনা মনে করা যাবেনা। থাক তবে টবেই।
হুম, রাখুন। তবে আলাদা টবে। এরকম আরো বহু ছোটখাটো আগাছা রয়েছে যেগুলো আসলে আগাছা নয় ঔষধী গুন সম্পন্ন উদ্ভিদ। কিন্তু আমাদের না জানার কারনে এদের সদ্ব্যবহারের বদলে নির্মূল হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি থেকে। আর হ্যা, সব আগাছাকেই কিন্তু আবার কাজে লাগাতে যাবেন না।
ব্যবহার এবং রোপনের পূর্বে ভালো করে সেটির সম্পর্কে জেনে অবশ্যই নেবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।