আমরা চলতে চলতে...আমরা কি আসলেই চলছি? বুঝি না। আমাদের সাথে অনেক জ্ঞানী লোকজন আছেন, তাহারা আমাদের বুঝায় দিবেন, নো টেনশন। তাই আমরা চলতে থাকলাম। এক সময় আমাদের বিশ্রাম নেবার দরকার পড়লো। এমনিতে এমন চলায় আমরা মোটেই ক্লান্ত নই, আমরা এতেই অভ্যস্ত।
অতঃপর বিশ্রামের উছিলায় আমরা পরস্পর কথা বলা শুরু করলাম - আমি তো গর্ব করে আমার শ্রোতাদের দিকে তাকিয়ে বলেই ফেললাম- জানেন, দেশতো এগিয়ে যাচ্ছে। জাতি হিসাবে আমরা আরো শক্তিশালী হচ্ছি। চেতনায় জাগ্রত আমাদের কেউ আর দাবায় রাখতে পারবে না। শ্রোতারা আমার মুখে উপর থেকে চোখ সরিয়ে পরস্পরের দিকে চাইলেন। বৃদ্ধ দাঁড়িওয়ালা শ্রদ্ধেয় লোকটা গলা খাঁকারি দিয়া স্কুল মাস্টারের মতো বলা শুরু করলেন- “মানবজাতির স্বার্থে আমাদের খুব স্পষ্ট ভাবে বলতে হবে, সবাইকে সাবধান করে দিতে হবে যে, ন্যাশনালিজম অকল্যানের একটা নিষ্ঠুর মহামারী, যা বর্তমান যুগের মানুষের উপর দিয়ে সবেগে প্রবাহিত হচ্ছে এবং তার নৈতিক প্রানশক্তি ক্ষয় করে দিচ্ছে।
” এবং তিনি আবারও গলা খাঁকারি দিয়া বললেন- “মানুষ, যে এই যুগের অতিথি, তাকে আমাদের জায়গা করে দিতে হবে এবং আমাদের নিশ্চিত করতে যেন এই যুগের নেশান তার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। ”
পাশ থেকে জার্মান দেশীয় মহাকবি বলে উঠলেন- হুম, আমি যথার্থই দেখছি তারা তো আপনার গানকেই জাতীয় সঙ্গীত বানিয়ে লাখো কন্ঠে বিশ্ব রেকর্ড করছে। এবার আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আবারো- “মুক্তিই মানুষের মূল সাধনা এবং এই সাধনার সামনে জাতিতে জাতিতে ভেদের সীমারেখা লোপ পেতে বাধ্য। বিজাতি বিদ্বেষের উদ্ভব সংকীর্ণ বুদ্ধি থেকে। মন যেখানে অপরিণত, এ মনোভাব সেখানে খুব প্রবল।
মনের যতো বিকাশ ঘটে এ মনোভাব ততোই দুর্বল হয়ে আসে। ”
ওরে বাবা, এইদিকে আমি এমনিতেই কম বুঝি তার উপর আবার জ্ঞানী লোকের এইসব কথা শুনে ঘাবড়ায় গেছি। সবার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে মুচকি হেসে আমতা আমতা করতে থাকি...। দেখি আরেক কোনা থেকে আরেক বৃদ্ধ খ্যাপা বাউল তার একতারাটা বাতাসে একটা ঘূর্নি দিয়া কহিলেন-
জগৎ বেড়ে জেতের কথা
লোকে গৌরব করে যথাতথা
লালন সে জেতের ফাতা
বিকিয়েছে সাধ-বাজারে
তারপর কিছুক্ষন থাইমা নায়ক প্রসোনজিতের মতো মুচকি হেসে বাতাসে একতারাটা আরো একটা ঘূর্ণি দিয়া আবারো বলিলেন-
জাত না গেলে পাইনে হরি
কি ছার জাতের গৌরব করি
ছুঁসনে বলিয়ে।
লালন কয় জাত হাতে পেলে পুড়াতাম আগুন দিয়ে।
তারপর তিনজনই আমার দিকে পরস্পর মাথা নাঁড়িয়ে কোরাসের সহিত বলে উঠলেন- হে মানব সমাজ সময় এসেছে জাতীয়তা ভুলিয়া আন্তর্জাতিক হবার। আমরা সকলে মানুষ এই পরিচয় দেবার।
এরপর থেকে আমি ফিলিং আন্তর্জাতিক। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।