অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ভোটে জেতার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণের শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা।
তার তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন তিন বছর আগে যে প্রতিবেদন দেয়, তাতে জড়িত হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতাকে চিহ্নিত করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছেন-বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আব্দুল হাফিজ, এএমএইচ সেলিম (সিলভার সেলিম), সেলিম রেজা হাবিব, জামায়াতে ইসলামীর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে আগামী ১১ মে’র মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে বলেছে।
স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ অন্য বিবাদীদের এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
আদালতের প্রশ্নের জবাবে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংসতার বিষয়ে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। এখন গেজেট হয়েছে। এখন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো তদন্ত প্রতিবেদন গেজেট হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। ১ এপ্রিল কমিশনের প্রতিবেদন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
”
মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’- এর একটি আবেদনে হাই কোর্টের নির্দেশেই ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে (বর্তমানে দুদক কমিশনার) প্রধান করে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়।
ঘটনার প্রায় সাড়ে নয় বছর এবং কমিশন গঠনের প্রায় সোয়া এক বছর পর ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল সরকারকে ৫ খণ্ডের ১১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয় ওই কমিশন।
ওই প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য রিটকারী সংগঠনটি একটি সম্পূরক আবেদন করেছিলেন, তা নিয়ে একটি হাই কোর্টের একটি রুলও আসে। তার শুনানিতে বৃহস্পতিবারের আদেশ এল।
কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে ওই সময়ে ঢাকায় ২৭৬টি, চট্টগ্রামে ৪৯৭টি, সিলেটে ১৭টি, খুলনায় ৪৭৮টি, রাজশাহীতে ১৭০টি এবং বরিশালে সর্বাধিক ২২২৭টি সহিংস ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে ঢাকায় ৯২টি হত্যা, ১৮৪টি ধর্ষণ, গণ-ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ অন্যান্য গুরুতর অপরাধ সংগঠিত হয়। মামলা হয় ৫২টিতে, যার ৪৫টির চার্জশিট হয় এবং ৭টির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়।
চট্টগ্রামে ৯৭টি হত্যা সংগঠিত হয়। অন্য গুরুতর অপরাধ হয় ৩৫০টি। মামলা হয় ৪৯টি, যার মধ্যে ৪১টিতে চার্জশিট হয় এবং বাকিগুলোতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়।
রাজশাহীতে ৫৩টি হত্যা এবং ১১৭টি গুরুতর অপরাধ হলেও মামলা হয় ৩৭টিতে, যার ৩৩টি চার্জশিট এবং বাকিগুলোতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়।
২০০১ সালের নির্যাতন নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন।
খুলনায় ৭৩টি খুন এবং ৪০৫টি গুরুতর অপরাধের বিপরীতে ৪৪টি মামলা হয়, যার ৪০টিতে চার্জশিট হয় এবং বাকিগুলোতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়।
২০০১ সালের নির্যাতন নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন।
বরিশালে ৩৮টি খুন এবং ২১৮৯টি গুরুতর অপরাধ হয়।
যার বিপরীতে মামলা হয় ৩৯টি, যার মধ্যে ৩৫টিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয় এবং বাকিগুলোতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়।
সিলেটে ২টি হত্যা এবং ১৫টি গুরুতর অপরাধ হয়। এই অভিযোগে কোনো মামলা হয়নি।
সারাদেশে মোট মামলা হয় ২২১টি, যার মধ্যে ১৯৪টিতে অভিযোগপত্র দেো হয় এবং বাকিগুলোতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়।
এতগুলো মারাত্মক অপরাধের ঘটনায় মাত্র ২২১টি মামলায় হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট।
যেসব মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পুলিশি তদন্ত চালিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়ার পাশাপাশি রিভিশন বা আপিল করার সুপারিশ করেছিল কমিশন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।