আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন উদ্দোক্তা এর উত্থান-পতন - আমার কাহিনী

Mahabubur Rahaman Arman (Araz Rahaman Arman) একজন উদ্দোক্তা এর উত্থান-পতন - আমার কাহিনী (টিশার্ট ব্যবসায় যারা নতুন তাদের জন্য আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি আর কি) ঘটনা ২০১২ সালের। হঠাত খুব ইচ্ছে জাগে নিজের ডিজাইন করা টিশার্ট গুলো কে প্রিন্ট করে পরার। কয়েকটা অনলাইন ব্র্যান্ড এর সাথে যোগাযোগ ও করলাম। অথচ তারা যে প্রাইস বলল তা আমার দ্বারা বহন করা সম্ভব ছিল না। একটা সময় তারা পাত্তা ও দিচ্ছিলো না।

সেই থেকেই জিদ করলাম। যে নিজেই কিছু একটা করবো। কিছু বন্ধুদের সাথে কথা বললাম এ ব্যাপারে যে কি করা যায়। পরিকল্পনা শুনে প্রথম বার ওরা রাজী হলো না। তখন ভেবে নিলাম একাই করবো কিছু একটা।

যাই হোক। পরে পরিকল্পনা টা আরো দৃঢ় করলাম। এবার আবার ওদের বললাম এবার ওরা রাজি হয়ে গেলো। সবাই ১০০০ টাকা করে দিল। ৮ জন সদস্য এর মধ্যে ২ জন দিতে পারলো না।

বাকী টা আমি দিলাম, পুজি মাত্র ১৫০০০ টাকা। ডিজাইন আমার করা ছিলো। ফেইসবুক থেকে পরিচয় হওয়া এক বড় ভাই প্রথমে ব্যাপক সাহায্য করলেন। যা অকথ্য। তিনি একটা প্রিন্টিং আর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী যোগার করে দিলেন।

স্যাম্পল দেখে ভালো লাগলো। তাই কাপড় কিনে নেমে পড়লাম। প্রায় ২৫ কেজি কাপড় কিনলাম ব্ল্যাক আর হোয়াইট এর। কিন্তু কাপড়টা খারাপ ছিলো না যদিও তারপর ও অনেক কাপর নষ্ট হলো। কাপড় এর মাঝে অনেক গুলো অংশ গোল চাক্তির মত করে কাটা ছিল।

মাত্র ৮৮ টা টিশার্ট হলো। তার মধ্যে একটা চুরি গেলো। তার মধ্যে অনেক গুলা মানে ২০+ টিশার্ট নষ্ট হয়ে গেলো। প্রিন্ট জনিত কারনে। অগুলা এখনও পরে আছে।

বিক্রি করি নি। যাই হোক, তারপর থেকে শুরু, ভালো ফিডব্যাক পেলাম। এখনি.কম এর সাথে ডিল হয়ে গেলো। এর পরের বার কাপড় ইন্ট্যাক্ট কিনলাম গার্মেন্টস থেকে। আমার খালু এর পরিচিত এক গার্মেন্টস-এ দিলাম।

অরা ভালোই কাজ করল। ২৮ কেজি কাপড় থেকে ওরা আমাকে ১২০ টা বানায় দিলো। আর কয়েক্টা ব্ল্যাঙ্ক রাখলাম। একটু নাম কামালাম। অনেকদুর আগায় গেলাম।

আরেকজন যুক্ত হল আমাদের সাথে। সে বিনিয়োগ করলো সুদূর লন্ডন থেকে। আরো অনেক সাহায্য ও পেলাম উনার কাছ থেকে যা ভুলতে পারব না। আর কেউ কাজ করে না ২-৩ জন ছাড়া। তাই সদস্য কমানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

আমার আসবাবপত্র দরকার নাই। ঠেলাগাড়ি হলেও চলবে। আজ আরো এগিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু বিনিয়োগ এর অভাবে চেয়ে ও পারছি না। কিচ্ছু করার নাই। যাই হোক।

গত ১৯-২০শে সেপ্টেম্বর তারিখে ATTIRE FIESTA নামে একটা মেলা তে অংশ গ্রহন করলাম আমাদের ব্রান্ড টাকে নিয়ে। মেলা তে তেমন সাড়া পাই নি তবে অনেক কিছু পেয়েছি। অনেক ব্র্যান্ড এর মালিকদের সাথে পরিচয়, আড্ডা, আলাপ, হাসি ঠাট্টা আরো কত কি? মেলা তে আমার মতে বিক্রি করার চাইতে ব্র্যান্ডিং টা কেই আমি প্রাধান্য দিয়েছি। কারন মেলার ১ দিন আগ পর্যন্ত আমার কাছে একটা পণ্য ও ছিল না আমার। তারপর ও এখনি.কম থেকে আর এদিক অদিক থেকে ৬৬ টা টিশার্ট আর ২৫ টা শার্ট নিয়ে নেমে পড়লাম, উদ্দেশ্য টার্গেট মার্কেটিং, এবং ব্র্যান্ড প্রোমোশন।

যেভাবেই হোক। ভিজিটিং কার্ড ও করা হয় নি তবু কালার প্রিন্টিং করে টুকরো কাগজে নিজেদের সব কিছু জুড়ে দিলাম ডিজিটালি। ব্যানার বানালাম একটা বড় করে ৫’-৩’ সাইজ এর। সবার সাথে মিলেমিশে থাকলাম। ২ টা পণ্য বিক্রি হল, বাকী গুলো রয়ে গেলো।

কিন্তু মজার ব্যাপার ২ দিনে ২ টা বড় অর্ডার পেয়েছি যার যোগ্য আমি কিনা জানি নাহ। কিন্তু অনেক খাটতে হয়েছে। এখনো চোখ খুলতে পারছি না। তবে গর্ব করে বলতে পারি পুরো মেলা এর সবচেয়ে ভাল কাপড় এর টিশার্ট ছিলো আমাদের। যারা ছোটো ব্র্যান্ড ততটা নাম করতে পারছেন না বিজ্ঞাপনের অভাবে, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, মেলা আপনাদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।

আর এটাই আপনার পণ্য এর মান বাড়াতে পারে। এবারের কিছু কথা তাদের জন্য বলছি যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন টিশার্ট এর। আমার মত হাজার হাজার মানুষ এই ব্যবসা এর সাথে জড়িত। আমি ই যে সব তা না। তবে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতেসি: ১.ডিজাইন - আকর্ষণীয় ডিজাইন নিয়ে কাজ করুন।

মানুষ কিন্তু টিশার্ট একটা কারনেই কিনে থাকে আর তা হল ডিজাইন। ডিজাইন এর ব্যাপারে আমি আমার একটা নিয়ম ধরে হাটি, সেটি হল, SICK = S for Stylish, I for Innovative, C for Creative & Confident and K for Knowledge. ২. কাপড় ও সেলাই – কাপড় ও সেলাই ভালো দিতে হবে তাহলে ভালো রেসপন্স পাবেন। কাপড়ের মান যাচাই করে নিন আগে। কাপড়ের জিএসএম কত তা জেনে নিন। ১৬০ এর উপরের জিএসএম এর কাপড় আমার চোখে অনেক ভাল।

তবুও আমি ১৮০ কেই প্রাধান্য দেই। ৩. সাইজ – বিভিন্ন সাইজ এর করতে পারেন যা ভালো মনে করেন। সবি আপনার ইচ্ছা। তবে এশিয়ান, আমেরিকান, ইউরোপিয়ান সাইজ গুলা বেশি ভালো লোকাল এর চেয়ে। আমি ইউরোপিয়ান সাইজ করে থাকি।

কেয়ার লেবেল এ অবশ্যি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ ব্যবহার করবেন। ৪. টার্গেট মার্কেটিং - কাদের কাছে বিক্রি করবেন তার একটা টার্গেট লিস্ট বানান কাজে দিবে। কারন সবাই সব ডিজাইন পড়বে না। আর মনে আসছে না মনে পড়লে জানাবো। এটা শুধু আমার নিজের জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষা আর কিছু না।

অনেক হোচট খেয়েছি। বোল্ড ফন্ট এর লিখা গুলো আমাকে অনে নেগেটিভ করেছে তাও পিছপা হই নি। এই ব্যবসা করতে পারেন। কিন্তু ঘুম থেকে উঠেই একটা স্বপ্ন নিয়ে বস্লে হয় না লাগে প্রোপার প্ল্যানিং যা অত্যাবশ্যকীয়। আরো কিছু জানার থাকলে জানাবেন দয়া করে আর এবার দেখুন - টি-শার্ট ব্যবসা - কিভাবে শুরু করবেন আর কি কি করতে হবে? (Click This Link) মাহাবুবুর রহমান আরমান (আরাজ রহমান) টি-জোন (পোশাক) পূর্ব বাসাবো, ঢাকা-১২১৪ ফেইসবুকঃ https://www.facebook.com/arshadhin স্কাইপঃ arazmix টুইটারঃ arazmix ফোনঃ 01813854079 ই-মেইলঃ ব্র্যান্ড ফেইসবুক পেইজঃ https://www.facebook.com/TZONEBD ওয়েবসাইটঃ http://www.tzonebd.com ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.