নন্দন গড়ের রাজকন্যা সুবর্ণরেখা,লোকে বলে নন্দন শোভা,
আসছে পৌষে আঠারো ছোঁবে, বসিবে স্বয়ম্বর সভা।
রূপের কদর করিলে বুঝি গুনে ঘাটতি পড়ে,
গুনের তারিফ কেমনে করে, রূপে চোখ যায় জ্বলে।
পাকা জহুরীও হার মেনে যায়, করিতে সুবর্ণ বিচার,
রূপে- গুনে যেন লক্ষ্মী স্বরসতী, যুগল আশীর্বাদ।
‘রাজত্ব সহ রাজকন্যা, মিলিবে যদি কেহ চাও,
প্রশ্ন এক করিবে কন্যা, উত্তর যদি দাও। ’
ঢাক পিটিয়ে ডাকল ঘোষক, ছুটল রাজার দূত,
“স্বয়ম্বর সভা বসিবে, শোন হে পুরুষকুল” ।
রাজ্যের যত রাজার কুমার, উজির, নাজির,কৃত- অকৃতদার,
বিবাহযোগ্য উঠতি যুবা, কামুক বুড়ো, সকলে পাতিলো কান।
কিন্তু শর্ত আছে এক, ভীষন কঠিন বটে,
উত্তর যদি ভুল হয় তবে গর্দান দিতে হবে।
শর্ত শুনে আগুপিছু মনে, কিছু পিছু হটে যায়,
তবুও অনেক পুরুষ থাকিল, যারা পিছুপা নয়।
এমন সুযোগ বুঝি আর আসেনি কভু,
যায় যদি জীবন তবু যায় আসেনা কিছু।
নির্ধারিত ক্ষনে, সন্ধ্যা সভাতে উঠল ডঙ্কা বেজে,
সভা শুরু তবে, একে একে ডাক পরে অন্দরে।
পন্ডিত, জ্ঞানী, মূর্খ, বেনিয়া সকলে গেল রনে,
অবাক কান্ড, ফিরিল না কেহ, উত্তর না মেলে।
নড়েচড়ে উঠে সকলে এবার, বুঝিল সহজ নহে,
সুবর্নরেখা, সাথে রাজত্ব, অসম্ভবই বটে।
দিন বয়ে যায়, তবু কেহ নাই, যে পারে উত্তর,
রাজা শুধু ভাবে, রাজ্য কে পাবে, কি হবে সুবর্ন’র।
একদিন এক চারন কবি আসল গড়ের দ্বারে,
একতারাতে গান বেঁধে যায়, উড়ে উড়ে পথে পথে।
সকলের কাছে সকল শুনিয়া বলিল চারন হেসে,
ঠিক আছে তবে রাজন্যকে বল- কবি যুদ্ধে যাবে।
অনেকে কাঁদিল, নিষেধ করিল, বলিল যেওনা ভাই,
পথের পাখি তুমি, পথেরই গান, জীবন কি দামী নয়?
চারন তবুও নিষেধ মানেনা, যখন সুর্য গিয়াছে ডুবি,
ডঙ্কা বাজিয়ে ঘোষনা জানায়, দুয়ারে দাঁড়ায়ে কবি।
চারন কবিরে দেখিয়া সুবর্ন কহিল মায়া ভরে,
একি কবি? তুমি কেন? কি চাও আমার কাছে?
চারন হাসিয়া কহিল, “ দেবী, এসেছি তোমার তীরে,
উত্তর তুমি পাইবে আমাতে, এই বাসনা মনে” ।
সুবর্ণ কহিল, ‘ শর্ত কি তবে জানা আছে তোমার কবি?
শির দিতে হবে, যদি না পার, সঠিক উত্তর করি। ’
‘ জানা আছে দেবী, দেব দেব শির তোমার পায়ে ছুড়ে,
আমারও এক শর্ত আছে শুনতে তোমায় হবে। ’
‘উত্তর যদি দিতে পার কবি, তুমি হবে অধিপতি,
যা চাও তুমি, তাই হবে ত্বরি, এই শপথ করি।
’
এই বলিয়া সুবর্ণ কবিরে নিয়ে উঠিল প্রাসাদ শীর্ষে,
তারায় তারায় আকাশ সাজিছে, তারায় তারা ফুটিছে।
আকাশ পানে চাইয়া সুবর্ন উঠিল প্রশ্ন করি,
আকাশে মোট তারা কত আছে জান কি তুমি কবি?
তারার আলো চোখে মেখে নিয়ে চারন বলিল, “শোন তবে,
তোমার কেশ থেকে আকাশের তারা তিনখানি কম আছে”।
‘কিভাবে জানিলে? কিভাবে গুনিলে তিনখানি কম শুনি?’ ,
কাজল কালো ঝর্না দুলিয়ে শুধায় সুবর্ণ নারী।
চারন কহিল, ‘ঐ দেখ এক তারা খসিয়া যায় পূবে,
কেশ যদি সখী কম হত তবে, কবি আসিত না দ্বারে। ’
সুবর্ন হাসিয়া কহিল, ‘ জয় হোক,জয় হোক- কবি,
যা কিছু দেখ, আমি সহ আজ, জিতিয়াছ তুমি সবই
শর্ত তোমার, কি চাও তুমি, কহ আজ্ঞা করি।
’
চারন কহিল, ‘কন্যা, তবে শোন, এই আমি চাই,
পথে নামবে তুমি, হবে ভৈরবী, আমিই তোমার সাঁই’।
‘তবে তাই হোক’, বলিয়া সুবর্ণ ধরি হাত চারনের,
নামিল পথে, সঙ্গী চারন, জীবনের তরে জীবনের...
** অনেক আগে শোনা এক অজানা লেখকের গল্পকে উপজীব্য করে এই লেখা। গল্পটা আমার খিব প্রিয়। নাম না জানা লেখক কে ৎঁৎঁৎঁ কবি'র শ্রদ্ধা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।