ছবি লেখাটি ব্লগের পাঠকদের জন্য আই, সি,এস,এফ মিডিয়া আর্কাইভ হতে হুবহু কপি পেস্ট করা হল।
‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১, বাংলাদেশ’এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সাথে ব্রাসেলস প্রবাসী বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ডঃ আহমেদ জিয়াউদ্দিনের আইন বিষয়ক কথোপকথন হ্যাকিং এর মাধ্যমে লন্ডন ভিত্তিক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনোমিস্টের হাতে পাচারের ঘটনায় সন্দেহের তীর উঠেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির দিকে। বাংলারিপোর্টের এক অনুসন্ধানে উঠে আসে এ জাতীয় সন্দেহ।
গত ৬ ডিসেম্বর ২০১২ তে দ্য ইকোনোমিস্টের দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো চিফ এবং কেন্দ্রীয় সম্পাদকের বিরুদ্ধে ট্রাইবুনাল-১ এর জারিকৃত রুলে এই হ্যাকিং এর ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয় এবং দ্য ইকোনোমিস্টকে বে-আইনীভাবে গোপনীয় এবং স্পর্শকাতর তথ্যাদি প্রকাশ না করবার আদেশ দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ইকোনোমিস্ট কর্তৃপক্ষ প্রথমে এই তথ্যাদি তাদের নিজেদের সংগ্রহের কথা জানালেও পরবর্তীতে গত ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে সেগুলো তাদের ‘হাতে এসেছে’ বলে প্রকাশ করে।
তবে এই স্পর্শকাতর হ্যাকিং এর ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলারিপোর্টের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য!
দেখা যায়, ট্রাইবুনাল-১ কর্তৃক ইকোনোমিস্টের বিরূদ্ধের রুল ঘোষণার পরদিনই ফেসবুকের কিছু জামায়াত-বিএনপি মদদপুষ্ট বলে পরিচিত পেইজ’এ ছবি আকারে ট্রাইবুনাল চেয়ারম্যান এবং ডঃ জিয়াউদ্দিনের কথোপকথনের অংশবিশেষ প্রকাশিত হতে থাকে। যদিও সে অব্দি দ্য ইকোনোমিস্টের পক্ষ থেকে কোনোপ্রকার তথ্যাদি প্রকাশ করা হয়েছে বলে অস্বীকার করা হয়। এই প্রেক্ষিতে বাংলারিপোর্টের অনুসন্ধানে উঠে আসে ‘আওয়ামী ট্রাইবুনাল’ নামক ফেসবুক পেইজটির এডমিন হিসেবে পরিচিত একজন পেশাদার হ্যাকার’এর বৃত্তান্ত। এই পেইজটি এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই হ্যাকিং প্রসূত একাধিক ছবি এবং তথ্যাদি শেয়ার করেছে বলে দেখা যায়।
নাইট্রিক অক্সাইডঃ
‘নাইট্রিক অক্সাইড’ ছদ্মনামে ফেসবুকে পরিচিত এই হ্যাকার বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০০৫ ব্যাচের একজন ছাত্র বলে জানা যায়।
সে বাংলাদেশী হ্যাকার গ্রুপ ‘বাংলাদেশ সাইবার আর্মি’র-ও একজন প্রাক্তন সদস্য বলে ‘বাংলাদেশ সাইবার আর্মি’ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সাইবার আর্মির এডমিন সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলীর দেয়া তথ্যমতে, ‘নাইট্রিক অক্সাইড’ এর আগে ভারতীয় সাইবার গ্রুপ ‘ইনডিশেল’এর নাম ব্যবহার করে কিছু বাংলাদেশী সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করে। যার ফলে ভারতীয় সাইবার গ্রুপটির সাথে বাংলাদেশী সাইবার গ্রুপের একটি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এরই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ সাইবার আর্মি’র পক্ষ থেকে ‘নাইট্রিক অক্সাইড’কে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলে সে বেশকিছুদিনের জন্য ইন্টারনেট থেকে গা ঢাকা দেয়। তবে পরবর্তীতে নতুন রূপে ‘রেবেলিয়াস প্রোগ্রামার’ (বিদ্রোহী প্রোগ্রামার) ছদ্মনাম নিয়ে তার কার্যক্রম শুরু করে।
আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বরাত দিয়ে একটি সূত্র থেকে এও জানা যায় যে, এই ব্যক্তির আসল পরিচয় জানবার জন্য অনেক দিন যাবৎ চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তা পাওয়া মাত্রই তাকে আইনের আওতায় আনবার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া যায়।
ফেসবুক পেইজ’এ সন্দেহজনক কার্যক্রমঃ
এদিকে ‘আওয়ামী ট্রাইবুনাল’ নামক ফেসবুক পেইজটিতে যেটি মূলত আইসিটি- বাংলাদেশ’ এর ব্যাপারে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, বাংলারিপোর্টের অনুসন্ধানে সন্দেহজনক একাধিক ব্যাপার সেখানে লক্ষ্য করা যায়। দেখা যায় যে, জামাত এবং শিবিরের একাধিক রাজনৈতিক কার্যক্রমের অত্যন্ত স্পষ্ট ও উচ্চ-রেজুল্যুশনের ছবি গণ মাধ্যমে আসার পূর্বেই, এই পেইজটি থেকে শেয়ার করা হয়েছে। কেবলমাত্র গণ-মাধ্যম সংবাদদাতাদের কিংবা কর্মসূচির আয়োজকদের কারো সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ না থাকলে এমনটা সম্ভবপর নয় বলেই মন্তব্য করেন বেশ ক’জন সংবাদকর্মী। তাছাড়া, এই পেইজটি থেকেই সর্ব প্রথম এই স্কাইপ হ্যাকিং থেকে ফাঁসকৃত তথ্য হিসেবে দাবীকৃত ম্যাটেরিয়াল শেয়ার করা হয় বলে দেখা যায়।
এর পূর্বে দেশী বা বিদেশী কোনো গণ্যমাধ্যমেও তা প্রকাশিত হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে প্রযুক্তিগত দিক জানবার জন্য যোগাযোগ করা হলে, যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশান সাইন্সের একজন সহকারী অধ্যাপকের সাথে কথা বলে জানা যায়, হ্যাকিং এর সাহায্যে কম্পিউটারে এমন স্পাইওয়ার বসানো যেতে পারে যাতে করে রক্ষিত ফাইল তো বটেই, এমনকি গোপনে মাইক অন করে কম্পিউটারের আশে পাশের সব কিছু রেকর্ড করে পাচার করাও সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরেন সাম্প্রতিক কালের গাউস ও ফ্লেইম ম্যালওয়ার ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে ঘটে যাওয়া হ্যাকিং এর ঘটনাটি। তিনি আরো উল্লেখ করেন, এ জাতীয় হ্যাকিং টুল খুব সহজেই ইন্টারনেট থেকে নামমাত্র মূল্যে এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও নামিয়ে নেয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে ট্রাইবুনাল সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকেরই একই জাতীয় তথ্যগত ও ব্যক্তিগত ঝুঁকি থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ট্রাইবুনাল চলাকালে প্রসিকিউশনের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে এসে সেফহাউজে অবস্থান করা একাধিক সাক্ষীর ক্ষেত্রেই রহস্যজনকভাবে হঠাতই সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানাবার, এমনকি পালিয়ে যাবার ঘটনাও ঘটে।
ইকোনোমিস্টের কাছে থাকা তথ্যাদি দৈনিক আমারদেশের হাতে
এদিকে উল্লেখিত ফেসবুক পেইজ থেকে হ্যাককৃত তথ্য ছড়িয়ে দেবার অব্যবহিত পরেই দৈনিক আমারদেশ-ও একই তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করে এবং তদ পরবর্তীতে হ্যাককৃত একটি কথপোকথনও সেখানে অনুলিখিত হয়। তবে দৈনিক আমারদেশ দাবী করেছে, দেশীয় কোনো সূত্র হতে এই তথ্যাদি তারা পায়নি, বরং “বিদেশের একটি সূত্র” হতে এই তথ্য তাদের হাতে আসে বলে আমারদেশ প্রতিবেদক অলিউল্লাহ নোমান জানান। উল্লেখ্য যে, দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকাটি যুক্তরাজ্য হতে পরিচালিত হয়ে আসছে সুদীর্ঘ ১৬৯ বছর ধরে। ১৮৪৩ সালে জেমস উইলসনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত এই গণমাধ্যমটির রয়েছে দীর্ঘ সাংবাদিকতার ঐতিহ্য।
কিন্তু এক্ষেত্রে আমারদেশ কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ বা এ বিষয়ক কোনো নির্দেশনা দ্য ইকোনোমিস্টের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। আইনত এবং ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমের ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ অনুসারে অত্যন্ত গর্হিত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়া সত্বেও এ ব্যাপারে দ্য ইকোনোমিস্ট’এর এহেন রহস্যজনক নিরবতা আশ্চর্য করেছে সংশ্লিষ্ট মহলের অনেককেই। অনেকে দ্য ইকোনোমিস্টের ভবিষ্যতকে ‘নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’এর ভাগ্য বরণ করে নিতে হতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এ বছরের প্রথম দিকেই অনৈতিক হ্যাকিং এবং ব্যক্তিগত তথ্যাদির গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অস্ট্রেলিয় বংশোদ্ভুত মার্কিন ধনকুবের এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব রুপার্ট মারডকের মালিকানাধীন ব্রিটিশ পত্রিকা ‘নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ এর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয় এবং পত্রিকাটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ হয়। ঘটনাক্রমে, নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’এরও প্রতিষ্ঠালগ্ন ১৮৪৩ সাল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।