এই কয়েকদিনের আন্দোলনে একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলাম । বিদেশী মেহমান আমাদের দেশে আসার এবং যাওয়ার সাথে আন্দোলনের একটা মিল খুজে পেলাম । মেহমানেরা এয়ারপোর্টে পাঁ রাখতেই যেন দেশের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠলো । যেইনা মেহমানেরা চলে গেল সাথে সাথে আগুন নিভে গেল । গাড়ী ভাঙচুর, গাড়ীতে আগুন দেয়া, চাপাতি দিয়ে কোপা কোপি , হুড়া হুড়ির উৎসব, জ্বালাও পোড়াও এবং ফাপোড় দেয়া সব যেন বন্ধ হয়ে গেল ।
যদি এমন হয় মেহমান আসবার ব্যাপারে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মহলকে অবশ্যই সর্তক থাকতে হবে । তাছাড়া এমন যদি হয় অবস্থা তবে মেহমান বা অতিথীরা আসতে চাইলে মেজবানেরা আনেকটা নিরুৎসাহীত হবেন । প্রসংগক্রমে আমার ছোট ভাইর কথা মনে পরে যায় । ও যখন ছোট ছিলো তখন যদি আমাদের বাসায় কোন মেহমান আসতো সে সময় আমার ছোট ভাই ওর সহজে না পুরন হওয়া ইচ্ছাগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো । যেমন আমাদের শোকেজে সাজানো দামী দামী খেলনা গাড়ী দিয়ে খেলবার ইচ্ছা করতো, বাসায় কোন ভাল খাবারের জিনিষ যেমন চকলেট, বিস্কুট বা কোন ফল(আমাদের ভাই বোনদের মাঝে সমান ভাবে ভাগ করে দেয়ার পরেও যেটা অতিরক্ত থাকতো সেটা আমার আম্মা পরে আবার আমাদের সবাইকে সমান ভাবে ভাগ করে দিতো) ইত্যাদি ঐ মূহুর্তে খাবার ইচ্ছা প্রকাশ করতো ।
ওর এই ধরনের বায়না সবাইকে এমন ভাবে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিতো যে অনেক সময় মেহমান ওর আবদার রাখার জন্য পরোক্ষ ভাবে বলেই ফেলতো । আমার আম্মাতো চোখেঁ চোঁখে ইশারা দিতো এমটা না করার জন্য কিস্তু কার কথা কে শোনে, কখনো আম্মা সফল হতো না । ওই মূহর্ুতে আম্মা আমার ছোট ভাইয়ের দাবীর কাছে নিজেকে অসহায় মনে করতে করতে মেহমান চলে যাওয়ার সময় পর্যস্ত অপেক্ষা করতো আর মনে মনে প্লেন করতো মেহমান চলে গেলে কিভাবে ওকে সায়েস্তা করবে । যখন মেহমান চলে যেতো তখন আমার ছোট ভাইয়ের খেলার পর্ব প্রায় শেষ হয়ে যেতো । আম্মা আগে খেলানা গুলি যায়গারটা যায়গায় রেখে সুন্দর করে শোকেসটা গুছাইতো ।
তারপর আম্মার একটা তালের পাঙখা ছিলো সেটা দিয়ে মোটামুটি ভাবে কয়টা দিয়া লইতো তার পরে যা যা বুঝানের বুঝাইতো । তালের পাঙখার ব্যাপারটা আমার ছোট ভাই খুব ভাল করেই জানতো কিন্তু তবুও সে কিছুতেই মেহমান বেড়াইতে আসার সুযোগটা মিস করতে রাজি ছিলো না । আমার ছোট ভাইটা এখন অনেক বড় হয়েছে, সে তখন বুঝতোনা যে মেহমান আসলে আমাদের কি করা উচিৎ কি করা উচিৎ না । আমাদের আচার আচরনের উপর নির্ভর করে আমাদের সামাজিক অবস্থান, প্রতিবেশীদের সাথে আমাদের সম্পর্ক, বিপদ আপদে আমাদের প্রতি প্রসারিত বন্ধুত্বের হাত, আত্ম মর্যাদা এবং আরও অনেক কিছু । যদি আমার ছোট ভাইয়ের কারনে পারিবারিক/সামাজিক ভাবে আমাদের ইমেজ আক্রান্ত হয় সেটা অবশ্যই আমার পরিবারের কোন সদস্যদের কাম্য না ।
তাইতো মাঝে মাঝে আমার আম্মা তার তালের পাঙখাটা ব্যাবহার করতো । এখন বড় হয়েছি তাই এমন ভাবনা চলে আসে যে যদি অনেক বয়স হওয়ার কারনে আম্মাই মেহমান দেখলে আমার ছোট ভাইয়ের মত শুরু করে দেয় তখন কি উপায় হবে আমাদের ? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।