আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বজিত এবং আমার কয়েকটি ফেসবুক স্টাটাস (ইহা একটি ছাগুমুক্ত নিরীহ ধরনের পোষ্ট,নো ল্যাদালেদি)

uব্লগিং করলে নাকি জাতে উঠা যায় !জাতে ওঠার তীব্র আকুলতায় স্টাটাস নং ১ নিহত বিশ্বজিত ছাত্রলীগ না ছাত্রদল সেই তর্কে যাব না । প্রতিটি অপমৃত্যুই অনাকাঙ্খিত এবং কষ্টের । ক্ষত বিক্ষত বিশ্বজিত যখন হাত জোড় করে বলছিল ভাই আমি ছাত্রদল না আমি বিশ্বজিত আমি হিন্দু ! স্রেফ একটি দৃশ্যই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পাকিস্তানি হানাদারের বেনয়েটের খোচায় ক্ষত বিক্ষত হিন্দু নিরাপদ ঘোষের করুন আর্তির দৃশ্য ,আমি আমি হিন্দু না ,খালেক সাচ্চা মুসলমান । লা ইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মাদুর রসুল উল্লাহ । যারা বিশ্বকে একটার পর একটা আঘাত করছিল তারাত মানুষ ।

তারা নিশ্চয়ই আজ বাড়ীতে গিয়ে বাবা মায়ের সাথে টেবিলে বসে ভাত খাবে,ভাইয়ের কোন অবাধ্যতায় বিক্ষুব্ধ হবে,ছোট বোনটির চুলে বেনী কেটে দেবে । সামনের কোন এক বৈশাখে প্রেমিকাকে হয়ত নববর্ষের শুভেচ্ছাও জানাবে । কিন্তু রাতে যখন দু চোখের পাতা এক করবে একবারও কি ভেসে উঠবে না বিশ্বজিতের রক্তাত্ব মুখখানি । তাকে যারা এভাবে হত্যা করেছে তাদের সবাইকে আমরা মানুষ বলেই জানব । তারা মানুষ হয়েই হয়ত আমাদের আশেপাশে ঘুর ঘুর করবে ,আমাদের সিগারেটে আগুন ধরিয়ে দেবে ।

আমরা ব্যার্থ, মানুষ এবং জানোয়ারের পার্থক্য করতে পারি না । নয়ত আমরা নিজেরাই জানোয়ার ! অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল পারলাম না । বিশ্বজিত বড় বিরক্ত করছে । বারবার চোখের সামনে এসে চোখ ঝাপসা করে দিচ্ছে । বিচার পাই না তাই কারও কাছেই বিচার চাই না ।

স্টাটাস নং ২ বিশ্বজিত আজ মারা গেল এটা যতটা না ভয়াবহ ঘটনা তার চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল এমন নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের জন্য আমরা একসাথে কাদতে পারছি না । দলে দলে ভাগ হয়ে কাদছি । একদল মরাকান্না কাদছে একদল মায়াকান্না কাদছে । কেউবা এই নিষ্ঠুরতার পিছনে যুক্তি খুজে বেড়াচ্ছে । হায়রে বাঙ্গালী আমরা প্রথমে আওয়ামিলীগ-বি এন পি তারপরে মানুষ।

এখানে দেশের জন্য যাদের ভালো কিছু করার সাধ আছে তাদের সাধ্য সেই আর যাদের কিছু করার সাধ্য আছে তাদের সাধ নেই । আমরা সাধারনত প্রথম দলের নিপিড়িত জনতা অথচ আমাদের সংখ্যাই কিন্তু বেশী । উই আর নাইন্টি নাইন। স্টাটাস নং ৩ গতকাল থেকে বিশ্বজিতের খবর এড়িয়ে গেছি । পারত পক্ষে ওটার সাথে সম্পর্কিত কোন লিংকে খোচা দেইনি ।

বলতে পারেন আমি দুর্বল চিত্তের অধিকারী । একটি নিরস্ত্র ছেলেকে কতগুলো জানোয়ার একটার পর একটা আঘাত করে রক্তাত্ব করছে আর পাশের চায়ের দোকানদার চায়ে পরিমানমত চিনি দেয়া নিয়ে ব্যাস্ত,সাংবাদিকরা একটার পর একটা রক্তের স্নাপ নিয়ে ডি এস এল আর টা রক্ষা করে চলছেন,উতসুক জনতার তখনও বিক্ষুব্ধ না হয়ে ওঠা, এগুলো আমি সহ্য করতে পারি না । আমার যেকোন স্টাটাসে একটা আওয়ামী আওয়ামী গন্ধ থাকে এটা সত্যি। আমি আওয়ামীলীগের প্রতি সহানুভুতিশীল এটাও মিথ্যা নয়। তবে আজ বুঝতে পারলাম আমি শতভাগ আওয়ামীলীগার হতে পারি নি ।

যে বিশ্বজিতকে ওরা গতকাল মাংসের টুকরা করেছে সেই বিশ্বজিত কাল থেকে আমাকে আঘাত করে চলেছে । ওর আঘাতে হয়ত আমার শরীরের রক্তে রাজপথ রন্জিত হয়নি তবে সবার আড়ালে হৃদয়ের রক্তক্ষরন চলছে । আজকে প্রথম আলো ছুয়েও দেখিনি কেবল রসালো টা পড়েছি !কাজ হলনা চোখে তখনও বিশ্বজিত । টানা আধা ঘন্টা বিটিভির খবর দেখেছি ,বিশ্বজিত তখনও আমাকে কাদিয়ে চলেছে । এই জাতি এখন দুই দলে ভাগ হয়ে আছে একদল মাত্র মরল আরেকদল যারা মরতে চলেছে ।

সংগবদ্ধ শব্দটি লেখা যেমন কঠিন হওয়াটাও তেমনি কঠিন । তাই কাউকে এক হতে বলছি না । সবাই যার যার মত বাড়ীর পথ ধরুন । বিশ্বজিত মরে গেছে । সবাই মিলে আর ওকে বাচাতে হবে না ।

শীতের সকালে আগুন যতক্ষন পাশে থাকে ততক্ষন বেশ ভালই লাগে কিন্তু যখন নিজের গায় লাগে তখন কিন্তু আগুন অন্যের পাশে থাকে । নতুন বিশ্বজিতের অপেক্ষায় আছি । কাল হরতাল,যারা কাল মরবেন তাদের জন্য আজকে সহানুভুতি সমবেদনা সর্বোপরী শহীদের দরজা খুলে দিলাম। স্টাটাস নং ৪ আমার পাশের বিছানায় যে ছেলেটি ভয়ে কুকড়ে জড়সর হয়ে শুয়ে আছে সে ছাত্রদলের একজন নেতা এবং আমার বন্ধু । সকালে হয়ত এই ছেলেটিই লাঠি হাতে পিকেটিং করবে গাড়ী ভাঙ্গবে,জ্বালাবে পুলিশের দিকে তেড়ে যাবে ।

অথচ তার ঘুমন্ত মুখখানির দিকে তাকালে কি নিস্পাপই না মনে হয় । পুলিশের ধরপাকড়ে সে বাড়ী ছাড়া । ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত বলে সে আমার বাড়ীকে নিরাপদ আশ্রয় মনে করেছে । আমি তাকে নিরাশ করিনি । হয়ত সামনে কোন তীব্র শীতে কেবল একটি টি শার্ট পড়ে পুলিশের তাড়া খেয়ে আমাকেই তার বাড়ীতেই আশ্রয় নিতে হবে ।

কেউ হয়ত যুক্তি খুজে পেয়েছেন তারাও তো এমন করেছে । কিন্তু কথা হল চোখের বদলে যদি চোখ নেবার রীতি চালু হয় তবে কিন্তু পুরো পৃথিবীই একদিন অন্ধ হয়ে যাবে । আমাদের দুই নেত্রীর অন্তত একজনের কিছু ভাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করার চেষ্টা করতে হবে । শুরু করতে হবে অন্যের প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়ার । হয়ত ভোটের রাজনীতিতে তার এই সু উদ্দোগ কাজে দেবে না,হয়ত নির্বাচনে তিনি জিততে পারবেন না কিন্তু বেলা শেষে তিনিই কিন্তু টিকে থাকবেন ইতিহাসের পাতায় বছরের পর বছর ।

অন্তত দেশের জন্য স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের হিংস্র থাবা থেকে এই জনম দুখী মাতৃভুমিকে রক্ষা করার জন্য হলেও কিছুটা ছাড় দিতে হবে,একতাবদ্ধ হতে হবে। বেড়ালের গলায় ঘন্টা কে বাধবে এই তত্ব আর শুনতে চাই না । চাই কেউ একজন ঘন্টা বাধুক ,শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়া ! স্টাটাস নং ৫ গতকালের স্বপ্ন । সাম্প্রতিক ঘটনাবলী যে মনে উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে তা টের পেলাম গতরাতে । আজ হরতাল তাই একটু রাত করে ঘুমুতে গেলাম ।

স্বপ্নে দেখলাম হরতালে একলোক একটা পেট্রোল পাম্পে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে । গিয়ে হাত জোড় করে বললাম ভাই এইখানে আগুন ধরালে তুমি নিজেও কিন্তু পুড়ে কয়লা হবে । অতি আতংকে ছেলেটি উম্মাদ হয়ে গেছে । কোন কথাই শুনল না । বারুদের খোচা দিয়েই কঠিটি ছুড়ে দিল তেলের ট্যাংকিতে ।

আগুন কেমন ধরেছে দেখার সময় পেলাম না খিচে দেীড় লাগালাম । স্বপ্নের ভেতরেও ঘেমে উঠলাম । কিছুদুর গিয়ে দেখি পুলিশ আসছে । গাড়ী থামিয়ে বললাম স্যার ঐ পাম্পে কিছু মানুষ পুড়ে বারবিকিউ হচ্ছে,প্লিজ ফায়ার সার্ভিস খবর দিন । অফিসার আমার দিকে আড় চোখে তাকাল ।

অবস্থা সুবিধার ঠেকল না । আর অপেক্ষা না করেই আবার দেীড় । একবার পেছন দিক তাকালাম দেখলাম আগুন লাগান ছেলেটি পুড়ে একখন্ড কয়লার টুকরা হয়েছে । এতদুর থেকে কিভাবে দেখলাম ?হয়ত স্বপ্ন বলেই সম্ভব হয়েছে। আগুনের ফুলকি আমার পিছন পিছন ছুটে আসছে ।

আমি প্রান বাচাতে দেীড়াচ্ছি । হটাত খেয়াল করলাম আগুনের সাথে সাথে কিছু ছেলে রড,চাপাতি,লাঠি সোটা নিয়ে আমাকে ধাওয়া করছে । হটাত বিশ্বজিতের কথা মনে হল। সেও কি মৃত্যুর আগের দিন রাতে এমন কোন স্বপ্ন দেখছিল ? বাকী রাত আর চোখের পাতা এক করতে পারি নি কোন বিভতস হিংস্র মন খারাপ করা ছবি দিতে ইচ্ছে করল না । আমাদের মন সব সময়ই কষ্টে থাকে ।

সাধ করে কষ্ট বাড়িয়ে লাভ কি । যে যেখানে যে অবস্থায় আছেন সাধ্যমত ভাল থাকুন ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.