আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন অনন্য সাধারন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ...

আমি মনে প্রাণে একজন মুসলিম। ঘৃণা করি ধর্ম বিদ্বেষী নাস্তিকদের এবং ধর্ম ব্যবসায়ী ছাগু তথা উগ্রবাদীদের। ক্যঁচাল পছন্দ করিনা । । মসজিদে জুম্মার নামাজে আহমাদিনেজাদ বিশ্বের কতজন প্রেসিডেন্টের নাম জানি ? হাতে গোনা কয়েকজন কিন্তু ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে আমরা সবাই চিনি ।

অনেকেই আহমাদিনেজাদকে চিনেন একজন পশ্চিমা বিরোধী বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হিসাবে । পশ্চিমা পত্রিকা গুলোতে আহমাদিনেজাদকে ফায়াব্রান্ড লিডার বলা হয় কিন্তু এর বাইরেও আহমাদিনেজাদের আর একটা পরিচিতি আছে। তা হল তার ব্যক্তিগত সহজ সরল জীবন যাপন যা আধুনিক বিশ্বের যে কোন দেশের প্রেসিডেন্টকেও হার মানায়। আসুন এই অসাধারন মানুষটি সম্পর্কে কিছু জানি। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ১৯৫৬ সালের ২৮ আক্টোবর সেমনান প্রদেশের গারমশার নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।

খুব গরিব পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তিনি। তার বাবা ছিলেন পেশায় একজন কামার আর মায়ের নাম খানম। মায়ের উপাধি ছিল সাইয়েদা যা শুধু মাত্র মুহাম্মদ (সা ) এর বংশধর হলেই এই উপাধিতে ডাকা হয়। আহমাদিনেজাদের বয়স যখন চার বছর তখন তার বাবা জীবিকার সন্ধানে পরিবারসহ তেহরানে চলে আসেন। সেখানেই আহমাদিনেজাদের স্কুল জীবন শুরু।

১৯৭৬ সালে আহমাদিনেজাদ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন এবং তিনি ৪০০,০০০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৩২তম স্থান দখল করেন। তিনি ইরান ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড টিকনোলোজিতে সিভিল ইন্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন এবং ১৯৯৭ সালে তিনি ট্রান্সপর্টেশন ইন্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্লানিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। আহমাদিনেজাদ আশির দশকে ইরান ইরাক যুদ্ধে ভলান্টিয়ার যোদ্ধা হিসাবে অংশ গ্রহন করেন এবং বিশেষ কৃতিত্ব দেখান এবং জনশ্রুতি আছে যে আহমাদিনেজাদ ১৯৭৯ সালে ইউনিভার্সিটির ছাত্র কর্তৃক যুক্তরাস্ট্রের দুতাবাস দখলে অংশ গ্রহন করেছিলেন। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহন করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন ।

ডক্টরেট করা অবস্থায় নতুন প্রদেশ আরদেবিলের গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত হন কিন্তু খাতামি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আহমাদিনেজাদকে অপসারন করেন কারন আহমাদিনেজাদের সাথে খাতামির মতাদর্শে পার্থক্য ছিল। আহমাদিনেজাদ আবার শিক্ষকতায় ফিরে আসেন। আহমাদিনেজাদ হলেন একজন বাগ্মী, ক্যারিশম্যাটিক নেতা। ২০০৩ সালে তিনি তেহরানের মেয়র নির্বাচিত হন। এটাই ছিল তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।

তেহরানের মেয়র হওয়ার সুবাদে তিনি সারা দেশে একটা পরিচিতি পান। তেহরানের মেয়র হিসাবে তিনি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে থাকেন। শহরের মিউনিসিপ্যালিটি অফিসগুলোতে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা এলিভেটর স্থাপন, শহরের ট্রাফিক সিস্টেমে পরিবর্তন, গরীবদের জন্য ফ্রি স্যুপের ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোতে ধর্মীয় মুল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া, তেহরানের ঝাড়ুদারদের সাথে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া এবং সর্বপরি তার অতি সহজ সরল জীবন যাপনের কারনে তিনি আলোচনায় আসেন এবং আস্তে আস্তে ইরানিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। যাইহোক, ২০০৫ সালে আহমাদিনেজাদ ৬২% ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। নির্বাচনী প্রচারনায় তার স্লোগান ছিল, ”ইহা সম্ভব এবং আমরা তা করতে পারি ।

” প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে তিনি মন্তব্য করেন ”ইরানের উন্নতির জন্য যুক্তরাস্ট্রের সাহায্যের কোন প্রয়োজন নেই। ” তার এই কথা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ২০০৯ সালে তিনি পুননির্বাচিত হয়েছেন। ইরানের পরমানু কর্মসুচি নিয়ে আহমাদিনেজাদ বাকযুদ্ধে নেমেছিলেন পশ্চিমাদের সাথে । তিনি পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতির তুলোধুনো করতে কসুর করেননি।

জাতিসংঘে আহামাদিনেজাদের উপস্থিতি মানে পশ্চিমাদের অতংক। তাই তো তারা তার জাতিসংঘের প্রতিটা ভাষনের মাঝখানে ওয়াকআউট করেছ। আহমাদিনেজাদ বলেছেন, ইরানের সাথে পশ্চিমাদের শত্রুতা হল ইরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দিন দিন উন্নতি করছে । তারা চায় না যে আমরা বিজ্ঞান জগতে ওদের মনোপলি ভেঙ্গে দেই। সত্যি আজাকে ইরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসাধারন উন্নতি করেছে।

পরমানু, কৃষি, ওষুধ, মহাকাশ, বায়োটকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি,সামরিক সবক্ষেত্রে ইরানরে চোখ ধাধাঁনো উন্নতি। আসুন এবার আহমাদিনেজাদের ব্যক্তিগত জীবন যাপন সম্পর্কে কিছু জেনে নেই । আহমাদিনাজ নিজস্ব কোন বাসা তৈরি করেননি তবে পৈত্রিকসুত্রে ৪০ বছর আগে যে বাসা পেয়েছেন সেটাতেই তিনি বসবাস করেন। বাড়িটির নাম Peugeot 504.তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে সেখানেই বসবাস করতে চেয়েছিলেন কিন্তু নিরাপত্তার কারনে সরকারের কর্মকর্তাগণের অনুরোধে তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনেই বসবাস করতেছেন। মেয়র থাকা অবষ্থায় তিনি পরিচ্ছিন্নকর্মীদের সাথে রাস্তা ঝাড়ু দিতেন।

তিনি সবসময় ফ্লরে কার্পেটের উপর ঘুমাতে পছন্দ করেন এবং নিয়মিত কার্পেটেই ঘুমান। তিনি কার্পেটেই বসে থেতে পছন্দ করেন কিন্তু কোন ডাইনিং টেবিলে নয়। ৩৪ বছর আগের তার একটি লক্কর ঝক্কর মার্কা গাড়ি ছিল । পিজো ৫০৪ মডেলের পুরোনো গাড়িটি নিলামে ১৫ লাখ পাউন্ডে বিক্রি করা হয়। স্বল্প আয়ের লোকজনের জন্য বাড়ি নির্মাণে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ৩৪ বছরের পুরোনো ওই গাড়িটি নিলামে বিক্রি করা হয়।

তার ব্যাংক অ্যকাউন্টে বেতনের কিছু অংশ ছাড়া আার অন্য কোন টাকা নেই । প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তার ছেলে মাহাদির বিয়েতে মাত্র ৪৫ জন অতিথিকে(২৫ জন নারী এবং ২০ জন পুরুষ)নিমন্ত্রন করেন। তাকে যখন NBC নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক এর কারন জিজ্ঞাসা করেন তখন তিনি অত্যন্ত হাসিমুখে বিনয়ের সাথে বলেন, এর চাইতে বেশি মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। তিনি প্রতিদিন নিজ স্ত্রীর রান্না অফিসে নিয়ে যেয়ে কার্পেটে বসে খান। তিনি কখনো নামাজ বাদ দেন না ।

এমনকি নামাজের সময় হলে তিনি রাস্তায় নামাজ আদায় করেছেন এরকম নজিরও আছে। মসজিদে কখনো তিনি সামনের কাতারে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগীতা করেন না। তিনি সাধারন মানুষের সাথে নামাজ আদায় করতে পছন্দ করেন। ছবিটি ভাল করে লক্ষ করুন । কিছু কি বুঝতে পারছেন ? এই লোকটি এত সৎ হওয়ার পরেও আর তৃতীয়বারের মত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না ।

ইরানের আইনে পরপর দু’বার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করলে তৃতীয়বার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই । আর মাত্র কিছুদিন!! ইরানে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচিত হবে নতুন প্রেসিডেন্স...কিন্তু ইরান তথা বিশ্ব উপলব্ধি করবে মাহমুদ আহমাদিনেজাদের কথা....সাধাসিধে সহজ সরল জীবনযাপনকারী একজন প্রেসিডেন্স যিনি মানুষের হ্রদযে থাকবে..  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.