আমি বাঙ্গালী ডাঃ সাজিয়া আফরিন (ইভা) সাধারণ কোন ডাক্তার নয়, তিনি দুইটা প্রফেশনাল পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন। সে আর কিছুদিনের মধ্যে fcps ফাইনাল কমপ্লিট করতেন। কিন্তু রাজধানী ঢাকার মধ্যে একটা ক্লিনিকে ডিউটি রত অবস্থায় খুন হলেন।
ইতোমধ্যে অনেকে জেনে গেছেন যে কর্তব্যরত অবস্থায় ঢাকার দক্ষিণখানের একটি ক্লিনিকে নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন ডাঃ সাজিয়া আফরিন (ইভা)। তবে এই খবরটি যতজনের যতদ্রুত জানার কথা ছিল তা হয়নি কারো বেলায়।
কারন দেশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল যাদের কোন কোনটিতে 'মাদ্রাজ-আমেরিকান কবিরাজ ঘর
' জাতীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে রোজ সেগুলোর মাঝে একটি চ্যানেলও দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মেধাবী এক মুখের নির্মম বিদায়ের এই খবর প্রকাশ করার প্রয়োজন মনে করেনি। আমরা কিছু অর্বাচীন ফেসবুক-ব্লগে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে করতে যখন ক্লান্ত তখন দু'একটি খবরের কাগজ এই খবরটি প্রকাশ করে (ভিক্টিমের নামের বানান ভুল সহ) আমাদের ধন্য করেছে; ঘটনা ঘটার দুদিন পরে হলেও।
গতকাল সোহরাওয়ার্দি মেডিক্যাল কলেজের সামনে ডাক্তার এবং মেডিক্যাল স্টুডেন্টরা মিলে আমরা একটি মানব বন্ধন রচনা করি। সেখানে ছিলনা কোন টেলিভিশন ক্যামেরা, ছিলনা কোন পত্রিকার সাংবাদিক। কয়েকশ কসাইরুপী ডাক্তার ঘণ্টা ধরে রোদের মধ্যে রাজপথে দাঁড়িয়ে থাকলে কার কি আসে যায়? তারচেয়ে নায়িকা অপু বিশ্বাসের বদহজম জনিত সমস্যা হলে নাহয় একটা জবরদস্ত খবর ছাপানো যেতো!
বাড়ি ফিরে ফেসবুকে লগইন করে এক ছোট ভাইয়ের একটা লেখা পেলাম ইনবক্সে।
লেখাটা সবাইকে জানানো কর্তব্য মনে করছি আমি।
{আজকের মানব বন্ধনে ইন্ডিপেনডেন্ট ও এটিএন এর সাংবাদিকরা আসে কিন্তু আমরা তাদের বিশেষ করে ইন্ডিপেনডেন্টের স্মার্ট নারী সাংবাদিকের কথা শুনে অবাক হয়ে যাই। তিনি বলেন- "আমরা শুনে এসেছি এখানে এক চিকিৎসক আরেক চিকিৎসককে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলেছে, তাই সকলে তার বিচার চায়। " আমরা হতবাক হই তার এই কথা শুনে। পরে ইভা আপুর (ডাঃ সাজিয়া আফরিন) মৃত্যুর বিষয়ে জানাই ও নিউজ করতে বলি।
তার উত্তরে সেই সাংবাদিক বলেন "কোন ডাক্তার মরলে নিউজ এজেন্সির কিছু যায় আসেনা, এটা কোন খবর না তবে ডাক্তারের হাতে কেউ মারা গেলে সেটা ইম্পরট্যান্ট। " আমরা তারপরেও তাকে ব্যাপারটা বোঝাতে চেষ্টা করলে তিনি আমাদের নাম জানতে চান। আমরা কয়েকজন পরিস্থিতি খারাপ হবার ভয়ে ইজ্জত নিয়ে সরে পড়ি।
একটা সাংবাদিকের আঙ্গুল কাটলে ব্রেকিং নিউজ দেয় কিন্তু নাইট ডিউটি অবস্থায় একজন চিকিৎসক নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে খুন হলে সেটা নাকি ইম্পরট্যান্ট না।
এই দেশে থাকার ইচ্ছা নাই; ডাক্তারি দূরের কথা!
**ফয়সাল আহমেদ তুষার।
}
ঠিক এভাবেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের চিকিৎসকরা বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে এদেশের ঘুনে ধরা চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং চিকিৎসকদের দুর্ভোগপূর্ণ নিরাপত্তাহীন, বাস্তবে মর্যাদাশূন্য সামাজিক অবস্থার উপর। জনসংখ্যার তুলনায় এমনিতেই এখানে চিকিৎসক অপ্রতুলতা, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে এদেশে কোন চিকিৎসক পাওয়া যাবে কিনা তা ভাবনার বিষয়। পশ্চাদ্দেশে ফোঁড়া হলে গরীবরা তখন দৌড়াবে নাপিতের দোকানে আর বড়লোকদের যেতে হবে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক, ফোঁড়ার তীব্র ব্যাথা নিয়ে বিমানের সিটে ভাল করে বসতেও পারবে না তারা, চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে নিতে হবে!
তারেক মাসুদ-মিশুক মনিরের মত হেভি ওয়েট কেউ না তারা , তবে আমি আপনি কিংবা আমরা যখন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াবো ঠিক তখনি ঈশ্বর প্রদত্ত ঐশ্বরিক ক্ষমতা দিয়ে তারা আমাদের মত আদার ব্যাপারি সহ অনেক হেভি ওয়েট মানুষকেই মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনে । ডাক্তার রাসেল, ডাঃ বাহলুল, ডাঃ হাসিব , ডাঃ পলি , ডাঃ দেবাশিষ , ডাঃ শৈলেন্দ্র , ডাঃ মাহাবুব এই নামগুল কি চেনা মনে হয়???? ইনারা সবাই সেই ঐশ্বরিক ক্ষমতা যুক্ত মানুষ যারা অল্প কয়েকদিনের ব্যাবধানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন । সংবাদপত্রের তলানিতে তাদের মৃত্যু সংবাদ অনেকটা পাত্রি চাই বিজ্ঞাপনের আদলে স্থান পেয়েছিল ।
তাদের সহকর্মী বন্ধু ভাই বোনেরা দিব্যি দুই দিন হা হুতাশা করে ভুলে গিয়েছিল সব । ছিল না দুর্ঘটনার জন্য দায়িদের বিচার চেয়ে কোন দাবি , আসেনি কোন মন্ত্রি ,এম পি তাদের মৃতদেহের পাশে ক্রন্দনরত পরিবারের মানুষকে আশ্বাস বানি শুনাতে , তাদের মেরুদণ্ডহীন সহকর্মীদের ক্ষোভের রোষানলে পরে জ্বালায়নি কোনো বাস , প্রিমিও কিংবা টয়োটা ।
সাগর-রুনি , সাংবাদিক দম্পতির মত, ডাক্তার নিতাই কিংবা ডাক্তার সাজিয়া আফরিন এত নিবেদিতপ্রান সহকর্মী পান নাই । যারা তাদের অপমৃত্যুর বিচার চেয়ে আন্দোলন কিংবা অনশনের ডাক দিবে, যতদিন খুনিদের গ্রেফতার না করা হয় । পত্রিকাওয়ালারা এই রক্তচোষা ডাক্তারদের মৃত্যু নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কিছু পান নাই ।
তার চেয়ে বরং ভুল চিকিৎসাতে আর ডাক্তারের অবহেলাতে কারো মৃত্যুর সংবাদ হলে সেইদিকেই তারা ছুটবে পঙ্গপালের মতন । সেটা নিয়ে তারা ছাপবেন খবর , তার পিছনের খবর আর ফলো আপ সংবাদ । এই নিয়মের ব্যাতিক্রম কখনো হয় নাই ।
(ধন্যবাদ জানাই, সামহোয়্যার ইন...ব্লগকে, এর কারনেই কিছু লিখতে পারলাম, নইতো কোনো পত্রিকায় এসব লেখা জীবনেও আসে না , অতীতে যেমন আসেনি পরিমল, পারসনার খবর)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।