আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরেক রকম অফিস রঙ্গ

সময়ের আবর্তে বদলে যায় পৃথিবী, বদলে যায় মানুষের মন, আমি আমার মতো চাই পৃথিবীকে। অফিসের বস এবং অধস্তন’র অম্ল-মধুর সম্পর্ক চিরাচরিত। কখনো মধুর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় কখনো অম্লের ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়। এখানে তেল একটি মারাত্মক অণুঘটক হিসেবে বিদ্যমান। দুয়ে মিলে কমপক্ষে আট ঘণ্টার সহাবস্থান।

এর মধ্যে আছে কিছু বিনোদন, হাসি আর কান্না। দুই জায়গার অভিনেতার দুই রুপ। আজকে কিছু অফিস রঙ্গ মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজালাম। একবার আমার উপর দায়িত্ব পড়ল সিলেট বিভাগের পাঁচটি উপজেলার সবচেয়ে ম্যালেরিয়া প্রবন পাঁচটি ইউনিয়নের নাম বের করার। দায়িত্ব দিলেন একজন মহা প্রতাপশালী বস।

সময় ২ ঘণ্টা। আমি পড়লাম মহা ফ্যাসাদে। এটা বের করা কী ছেলেখেলা নাকি। বসকে কীভাবে বুঝাই। বস বলে যেভাবে পারেন বের করেন।

না পারলে রোলার চালানো হবে। ঐ বস যে কতজনের উপর রোলার চালিয়েছেন তার ইয়াত্তা নেই। রীতিমত রেগিং করেন। আমি আর কী করি। আমি আমার জুনিয়র সহকর্মীদের দ্বারস্থ হই ফোন আর রোলার নিয়ে।

ঐসব এলাকার কর্মরত পাঁচজনকে ফোন দিলাম। কথোপকথন অনেকটা এই রকম। জটিল বাক্যঃ আপনার নামে রিপোর্ট পেলাম অফিস টাইমে অন্য কাজ করেন, সত্যি নাকি সহকর্মীঃ আস্তাগফিরুল্লাহ বস, অপ-প্রচার। জটিল বাক্যঃ একটা কাজ করেন আপনি রেজিস্টার দেখে আপনার উপজেলার বিগত ১ বছরে কোন ইউনিয়নের কতজন লোক ম্যালেরিয়ার স্বীকার হয়েছেন তার একটা পরিসংখ্যান দেন। সময় ১ ঘণ্টা সহকর্মীঃ বস আপনার কী মাথা খারাপ হইছে নাকি জটিল বাক্যঃ আমার হয় নি বড় বসের হইছে সহকর্মীঃ বড় বসের মাথা খারাপ হইলে আমারে কেন হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন জটিল বাক্যঃ বসদের হাসপাতালে পাঠানোর কথা এইচ আর মেন্যুয়ালে লিখা নেই, কথা বাড়াবেন না, যা বলছি তাই করুন।

সহকর্মীঃ কীভাবে? জটিল বাক্যঃ আপনি বিগত এক বছরের রেজিস্টারে রোগীর ঠিকানা দেখে ইউনিয়ন সনাক্ত করবেন তারপর এগুলো বারমাসের ছকে ফেলবেন। সহকর্মীঃ ঠিক আছে বস কিন্তু একঘণ্টায় পারব না, আমি অফিস থেকে দূরে আছি ফিরতে ১ ঘণ্টা লাগবে। জটিল বাক্যঃএইতো আপনি যে ফাঁকি দেন এইবার প্রমান করলেন। সহকর্মীঃ বস আমি অফিসের কাজে আসছি জটিল বাক্যঃ ঠিক আছে আপনি বিমানে অফিসে আসেন। তাড়াতাড়ি আসতে পারবেন।

কিন্তু সময় ১ ঘণ্টা সহকর্মীঃ ওকে বস আমি জানি তাকে তার জায়গা থেকে ফিরতে হলে মোটর সাইকেল সুরমা নদী দিয়ে পার করে তারপর অফিসে আসতে হবে। সুরমা নদীর উপর কোনো ব্রিজ বা ফেরী নেই ঐ অঞ্চলে। কিন্তু আমাকে কাজ করতে হবে রকেটের গতিতে। যাক দেড় ঘণ্টার মাথায় আমার সব ডাটা এসে গেল। আমি আগেই ডাটা প্রেজেন্টশানের কয়েকটা ফর্মুলা তৈরি করে রাখলাম।

ডাটা আসলে পটাপট এন্ট্রি দিয়ে কয়েকটি গ্রাফ বানিয়ে গেলাম বসের কাছে। জায়গাগুলো তিনটা ভাগে ভাগ করলাম সাধারণ, মোডারেট, সিভিয়ার। বস রিপোর্ট দেখলেন। গোঁফের ফাঁকে মুচকি হাসি। বসঃ সিভিয়ার বানানটা ভুল কেন? জটিল বাক্যঃ না বস এটাই সঠিক বসঃ না এইটা সঠিক জটিল বাক্যঃ ঠিক আছে বস একটু নেটে সার্চ দেই কতক্ষণ পরে বসকে বললাম বস দুটোই সঠিক তবে আপনার টা শুধু ত্রিনিদাদে ব্যবহার হয়।

ইংল্যান্ড আমেরিকায় আমার বানান। কারণ বস ইজ অলওয়েজ রাইট। এটা আমিও জানি বস ও জানে। বস শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে বিদেয় করে দিলেন। আরেকবার আমার আরেক বিগ বস আমার রিপোর্ট দেখে অনেকের সামনে - আপনার ইংরেজির বাক্য গঠন খুবই দুর্বল - বস আমার বাংলা বাক্য গঠনও দুর্বল।

আর বেনিয়াদের ভাষার গ্রামার আমার মাথায় ভালভাবে ঢুকে না। - সমস্যা নেই আপনার বয়সে আমি আরও দুর্বল ছিলাম, আগামীকাল সকালে ফার্স্ট আওয়ারে আমার রুমে আসবেন। - ওকে বস পরের দিন সকালে বসের রুমে গেলাম বস দশ পৃষ্টার রিপোর্ট উলটে পালটে দেখে দুটি কমার জায়গায় ফুলস্টপ দিলেন আর এক জায়গায় মে এর পরিবর্তে মাইট লিখে বললেন। নাও সেন্ড ইট। আমি বসকে তার জ্ঞানের তীক্ষ্ণতার জন্য অবাক বিস্ময়ে অনেক ধন্যবাদ জানালাম।

আর বলে আসলাম বস মাঝে মাঝে আপনার কাছ থেকে একটু একটু ইংরেজি জ্ঞান নিলে আপনি বিরক্ত হবেননাতো। বস মহাখুশীতে বলে উঠলেন অবশ্যই আসবেন। আপনার যেন কবে ছুটির দরকার ছিল, যান ছুটি কাটিয়ে আসেন। সত্যিই বস বড় মহান!! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।