আহত উড়াল
সরকারী অফিস আদালতে ঘুষের কারবার চলে সে ব্যাপারটা একটু-আধটু শোনাই ছিল কিন্তু আমার ধারনা ছিল ব্যাপারটা বোধহয় আড়ালে-আবডালে হয় এবং সেটা হয়তো বা সবক্ষেত্রেও নয়, শুধুমাত্র ন্যায়কে অন্যায়ে অথবা অন্যায়কে ন্যায়ে পরিনত করার পারিশ্রমিক হিসেবে উপরি নেয়া হয়। কিন্তু এতো নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে অজুহাতহীন ভাবে ঘুষের ব্যাপারটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে সত্যি জানা ছিল না। অভিজ্ঞতাটা বলি, আমার বাবা এবং চাচার মধ্যে একটা দানপত্র দলিল সম্পাদিত হওয়ার কথা। দলিল খরচ সব মিলিয়ে ১০০০টাকার বেশি নয় কিন্তু সাব রেজিস্ট্রর সাহেব দাবী করলেন পাক্বা ১৬,০০০টাকা! ব্যাংকের ঋনের বিপরীতে জমিজমা বন্ধকীর ব্যাপারে আমাকে মাঝেমাঝে রেজিস্ট্রি অফিসে যাওয়া লাগে এবং ওই সূত্রেই রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট বা স্ট্যাম্প এ্যাক্ট এর মত কিছু আইনকানুনও ঘাটাঘাটির সুযোগ পাই, তো আমি সাবরেজিস্ট্রার সাহেবকে সে কথা বললাম, উনি মুলামুলিতে ওস্তাদ, শেষমেষ বলে দিলেন ১১,০০০টাকা সই। আমার পরিচিত দু'একজন নব্য বিসিএস এডমিন ক্যাডার আছে।
ওদের পরামর্শের শরনাপন্ন হলাম, একজন পরামর্শ দিল মিডিয়ার ভয় দেখাতে অন্যজন বলল দুদকের কথা ( সে চেষ্টা করার কথাও ভেবেছিলাম কিন্তু দুদককের ওয়েবসাইটেই ঢুকতে পারিনি) এবং আমার মুলামুলিতে নিমরাজি হয়ে ও বলল স্থানীয় ইউএনও স্যারকে ব্যাপারটা দেখার জন্য সুপারিশ করবে। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম ইউএনও সাহেব নিজেও নাকি এর অন্যতম ভাগিদার, তাই আর ও পথ মাড়াইনি যদি কাজটাই না হয়! এরপর শরনাপন্ন হলাম একজন ইউএনও'র যিনি ফেসবুকে নিয়মিত এবং রীতিমত বিদ্রোহী ঢঙে নীতিকথার স্ট্যাটাস দেন। ভদ্রলোককে সবকিছু বিস্তারিত লিখে যথাবিহিত বিনয়ের সাথে একটা ই-পত্র লিখলাম, বড় আশা করে। কিন্তু দিনেরপর দিন যায় উনি ঠিকই উনার স্ট্যাটার হিরোইজম চালিয়ে যান কিন্তু আমাকে কোন প্রতিউ্ত্তর দেন না। প্রায় দিন পনের পরে উনার দায়সারাগোছের উত্তর আমাকে দারুন হতাশ করলো।
তারপর মিডিয়ায় ধন্না দেয়ার জন্য পরিচিত এক ছোটবোন যে কিনা প্রথমশ্রেনীর একটা টিভি চ্যানেলএর রিপোর্টার, তাকে ফেসবুকে নক করলাম, ও ব্যাপারটা একপ্রকার এড়িয়ে গেল। তারপর ধন্না দিলাম আরেক মিডিয়াপারসন, ইউনিভার্সিটির এক ছোটভাই এর কাছে। সে প্রিন্টমিডিয়ার মধ্যে শীর্ষ একটি সংবাদপত্রের সাংবাদিক এবং আইনবিষয়ক পাতার সম্পাদক। তার কথায় আমি রীতিমত আকাশ থেকে পড়লাম, আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম হেবা-ডিড এর খরচ কত। ও উত্তর দিল মাত্র ১০০টাকা কিন্তু আমার প্রকৃত খরচ হবে ১০,০০০টাকা মত।
জিজ্ঞাসা করলাম বাকি ৯,৯০০টাকা কী বাবদ। ওর স্পস্ট উত্তর 'ঘুষ'। আমি আর কোন চেষ্টা করিনি, পুরো ১১,০০০টাকা খরচ করে কাজটা সম্পন্ন করেছি।
এই পুরো ঘটনা থেকে আমার কিছু বাস্তবিক উপলব্ধি হয়েছে।
১. ঘুষ ব্যাপারটা এখন আত্মিকৃত, স্বিকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত।
২. এ ব্যাপারটা সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জ্ঞ্যাতসারে হয় এবং হয়ো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা নিজেরাও এর সুবিধাভোগী।
৩. কিছু সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কাম হবু আমলা ফেসবুকে বড় বড় নীতিকথার বাণী শুনিয়ে নায়কবনে যেতে চান, প্রকৃতপক্ষে সে বাণী অন্তসারশূন্য।
৪. মিডিয়ার লোকজন ব্যাপারটাতে যারপরনাই উদাসীন, তাদের উৎসাহ অন্যদিকে। ( কারনটা আমার কাছে অস্পষ্ট!)
পুনশ্চঃ এখন আমি সত্যিই বিশ্বাস করি আমরাই কেবল দুর্নীতিতে শ্রেষ্ঠ হতে পারি, আমাদেরই কেবল দুর্নীতিতে শ্রেষ্ঠ হওয়ার সব যোগ্যতা, চেষ্টা, মানসিকতা, দক্ষ জনবল ও মনোবল আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।