আধা পাগলের লেখা লেখি... হয়তো শুধুই মস্তিস্ক বিকৃতি...
স্যার এখানে সাইন করুন, এবার এখানে...
শুরু হল সাইদের দিন, একটা মোবাইল কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারে জব করে, কত মানুষ আসে তার কাছে, কেউ সিম কেনে, কেউ সিম পরিবর্তন করে আরও কত কিছু। স্যালারির তুলনায় চাকচিক্য বেশি হবে, একেবারে হাই ক্লাস, হাই প্রোফাইল। কাস্টমারকে ইমপ্রেস করতেই হবে, কেউ গালি দিলেও ভালো কথা বলতে হবে, কথায় স্যার স্যার বলে জবাব দিতে হবে। সারাদিন পিসির সামনে বসে থাকা, আর কাজ না হলে পাশের টেবিলে মিলি আপা কিংবা ওপাশের টেবিলে বসা মিরাজ ভাইয়ের সাথে কথা বলে দিন পার হয়।
অফিসে ঢুকতেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ঝাড়ি, কারন শার্টে কাদা লেগেছে, কাল রাতে যে বৃষ্টি হয়েছে আর রাস্তার যা দশা তাতে কাঁদা লাগেনি বলাই ভালো।
সাইদের মন খারাপ হয়ে যায়। অফিস আওায়ার শুরু হবার এক কাস্টমার আসলেন তিনিও ঝাড়ি দিলেন, যাচ্ছে তাই ব্যবহার করলেন। মাঝে মাঝে মনে হয় কাজটা ছেড়ে দেয়াই ভালো কিন্তু ছেড়ে দিয়েই বা কি করবে ভাইরা সবাই আলাদা হয়ে গেছে, বাবা মাকে তাকেই দেখতে হয়।
সেদিন বিকাল ৩.৩০ এর দিকে এক মেয়ে আসে সিম কিনতে, পেপার ফিল আপ করে সাইদের টেবিলে বসে, মেয়েটাকে তার খুব পছন্দ হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, দেখেই বোঝা যায়।
অফিস বলে মেয়েটার সাথে অফিসিয়াল কথার বাইরে কথা বলা যাচ্ছে না, তাতে কি? মেয়েটার ছবি, সব তথ্য একটু পর তো সে দেখতেই পাবে। মেয়টি চলে যায়।
দিন সাতেক পর সাইদ মেয়েটিকে ফোন দেয়, তার সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু মেয়েটি কোন ভাবেই কথা বলতে চায় না, মেয়েটি তার সমস্যার কারনে এলাকার বদলে অন্য স্থানে থেকে সিম কিনে যায়, কার্ড থেকে রিচার্জ করে, তবু নাম্বার কিভাবে ছড়িয়ে গেল বুঝতে পারে নি সামিয়া। সে কুল কিনারা করতে পারছে না, সাইদ ও তার পরিচয় দিতে পারছে না, যদি সে পরিচয় দেয় মেয়েটি নির্ঘাত কমপ্লেইন করবে তাতে এত কস্টে জোটানো চাকুরি টাও যাবে।
কোনভাবে মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব করতে সক্ষম হয়, আর দশ জনের মত সেও এই বন্ধুত্বকে ভালবাসায় রূপ দিতে চায়, মেয়েটি প্রবল আপত্তি জানায়।
সে শুধু এত টুকুই জানায় আমার সব কথা জানলে আপনি কখনো এই কথা দ্বিতীয় বার বলবেন না।
কি সে কথা জানার চেস্টা করতে থাকে, সময় পেরিয়ে যেতে থাকে। প্রায় মাস খানেক এভাবে চলে যায়। আশা আর নিরাশার মাঝে দুলতে থাকা সাইদের অবস্থা তার বাবা মা বুঝতে পারে। তাদের সব খুলে বলে সাইদ, তারা সাইদকে অমত করে নি।
মেয়েটিকে আবারো সে প্রপোজ করে, সে জানায় সে মেয়েটিকে সে বিয়ে করতে চায়।
মেয়েটি এবার সেই কথা গুলো বলে, সাইদ বিশ্বাস করে না, তার ধারনা মেয়েটিকে তাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে এই কথা বলছে। সাইদ মেয়েটির বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে চায়। সামিয়া জানায় তার বাবা মার থেকে কথা গুলো শুনে নিতে, যদি তা শুনবার পর ও তাকে ভালবাসতে পারে সে তার কাছে আসবে।
সাইদ নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না, মেয়েটি মিথ্যা বলে নি, একটু ও না... সামিয়ার বাবা মা নিঃসন্তান ছিল, সামিয়াকে কারা যেন এতিম খানার রাস্তার পাশে ফেলে গিয়েছিল, তারপর তার ঘর হয় এতিম খানা, এতিম না হয়েও তাকে থাকতে হয়েছে এতিম খানায়।
তার জন্ম পরিচয় নেই, জানা নেই তার কোন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র। পরিচিত হয়েছে সে কারো পাপের ফসল বলে, দুনিয়ার বুকে কারো অবৈধ হিসেবে, এর আগে সামিয়ার একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল, যখন তারা জানলো সামিয়াকে এতিম খানা থেকে আনা হয়েছিল তারাও চলে গিয়েছিল।
সাইদ সিঁড়ি ভেঙ্গে সবে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে, সাইদ ভাবছে কি করবে সে? সাইরেনের মত মাথায় বেজে চলেছে কিছু প্রশ্ন, সে কি বলবে তার বাবা মাকে এই কথা গুলো? তারা কি মানবে? , বর্ষার বর্ষণ শুরু হয়েছে, সাইদ মোবাইলটা বন্ধ করে পকেটে রেখে দিয়েছে, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কাঁদা মাখা পথে হাঁটতে শুর করে, সামিয়া ফোন হাতে নিয়ে ভাবছে সে সাইদকে ফোন করবে কিনা, তার উত্তর জানতে ইচ্ছে করছে, আজ সামিয়া বুঝতে পারছে সেও ভালবেসে ফেলেছে সাইদকে।
হয়তো সাইদ ও সরে আসবে। হয়তো ভালবাসার কথা গুলো হয় যাবে শুধুই কিছু কথা, সাইদ কি পারবে এসব কিছু সহ্য করে সামিয়াকে ভালবাসতে? উত্তরটা জানা নেই...
পুনশ্চঃ প্রায় খবরে আসে নবজাতকের লাশ ডাস্টবিনে কিংবা নর্দমায় ফেলে দেয়া হয়ছে, কখনো বা আরও বীভৎস ভাবে উঠে আসছে কোন নবজাতক হয়েছে চিল শকুনের খাবার।
যারা বেঁচে থাকে কপালে সাইন বোর্ড ঝুলে যায় অবৈধ কিংবা পাপের ফসল, নাম পরিচয় হয়ে বেড়ে ওঠে কোন ফুটপাতে কিংবা কোন এতিমখানায়, যে তার অতীত জানে সে শুধু ঘৃণা করে সবাইকে। ভালবাসার নাম করে নোংরামির বলি হবে আর কত সামিয়া? আর কত সামিয়াকে অবৈধ কথাটা শুনে বাঁচতে হবে?
সাইদের স্থানে কিংবা সামিয়ার অবস্থানে নিজেকে বসিয়ে একটু ভেবে দেখবেন, কেমন হয় অনুভূতিটা? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।