আর কতক্ষণ লাগবে?
মিনিট দশেক।
আরও দশ মিনিট?
কিছু বেশীও লাগতে পারে। আজ স্পেশাল একজন আসবে।
সেই জন্যই এতো সাজগোজ?
ইয়েস মিস্টার। সেই স্পেশাল মানুষটির মাথা ঘোরাতে হবে।
স্পেশাল মানুষটি কে, জানতে চাইলাম না। ইরিন একটু পরেই বলবে। কিছুটা বলে বাকীটা জমিয়ে রাখে। আর লক্ষ্য রাখে আমি কতটা কৌতূহলী হচ্ছি। খুব জানতে মন চাইছে না।
প্রাক্তন কোন প্রেমিক হবে। ইরিনের প্রেমিকের হিসাব রাখা ছেড়ে দিয়েছি। বিয়ের পরে প্রথম দিকে প্রায়ই ওর ফোন আসত, ‘এটা কি করলে’। কখনও ‘এখনও দেরি হয়নি, সব ছেড়ে চলে আস’।
আমার মত এলেবেলে একজনকে ইরিন কেন বেছে নিল ব্যাপারটা আমার কাছেই খুব ক্লিয়ার না।
অনেক ভালো অফার ওর ছিল, হয়তো এখনও আছে। খুব যে নাক উঁচু টাইপ তা না। বেশ হাসি খুশী। সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক। সুন্দরী মেয়েদের ক্ষেত্রে যা হয়, দুইদিন কোন ছেলের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বললেই তিন দিনের দিন, গোলাপ ফুল সহ প্রেমের প্রস্তাব।
প্রথম কয়েকটা প্রস্তাব নকচের পরে, রটে গেল দামী কিছু চায়। কোটিপতির খোজে আছে। কেউ রটালো রাজকুমার টাইপ চেহারা না হলে সম্ভাবনা নাই।
জিজ্ঞেস করলে না স্পেশাল মানুষটি কে?
না। কারণ তুমি এখনই বলবা।
তোমার পেটে কথা রাখার লিমিট হচ্ছে তিন মিনিট। হয়ে এসেছে। বলে ফেল।
ইদানীং একটু বেড়েছে। আজকাল ঘণ্টা খানেক পারি।
হোয়াট অ্যান ইমপ্রুভমেন্ট। আই ক্যান ওয়েট।
জানতে চাইবা না?
না।
একটুও জেলাস লাগছে না?
মানসিক ভাবে আমি আসলে সব কিছুর জন্যই তৈরি। হয়তো একদিন এসে বলবে, ‘সরি’।
একটু হয়তো খারাপ লাগবে, তবে সামলে নিতে পারব। ঘটনাটা কব ঘটবে সেখানেই সাসপেন্স। আজও হতে পারে। বন্ধুরা অনেকেই বারন করেছিল। ‘ইরিন তোর জন্য না।
‘ কিছু শত্রু টাইপের বন্ধু ছিল। ওদের বুদ্ধি ছিল, বিয়ে করে ফেল। আর খুবই দ্রুত বাচ্চা নিয়ে নিবি। তাহলে আর ছেড়ে যেতে পারবে না। সবার উপদেশের সারাংশ একই, ‘এ সম্পর্ক টিকবে না’।
তারপর ও তিন বছর হতে চলল। কেমন করে যেন এখনও টিকে আছে।
আই অ্যাম ডান। চল।
চল।
শুধু চল? ‘দারুণ লাগছে’ টাইপ কিছু বলবে না?
তথ্যটা কি তোমার অজানা?
জানা হোক আর অজানা হোক, তোমার বলতে অসুবিধা কোথায়?
ওকে, খুব সুন্দর লাগছে। চোখ ফেরাতে অসুবিধা হচ্ছে।
ফেরানোর দরকার কি?
না ফেরালে গাড়ী চালাবো কি করে?
চালাবে না।
তাহলে কি ট্যাক্সি ডাকবো?
না গেলেই হয়।
তোমার সেই স্পেশাল মানুষ?
গছিয়ে দিতে পারলে বাঁচো না?
ইরিন বোধ হয় আঁচ করেছে।
করতে পারারই কথা। আমাদের সম্পর্কের ভেতর কোথায় যেন কিসের একটা অভাব। ওকে সন্দেহ আমি করি না। বরং একটু বেশিই স্বাধীনতা দিয়েছি। কোথায় গেল, কেন গেল কখনই জানতে চাই না।
কোন ফোন আসলে কখনই জানতে চাই না কে করল। কোন অধিকার বোধ কখনই দেখাইনি। আমাদের সংসার আদৌ টিকবে, এই বিশ্বাসই আমার ভেতর এখনো আসে নি। কেন আসে নি, জানি না।
তুমি কি আমার কোন কারণে আমার ওপর রেগে আছো?
তোমার ওপর না, আমার নিজের ওপর।
মানে?
মানে এই তিন বছরেও তোমাকে আমি ম্যাথেমেটিশিয়ান থেকে প্রেমিক বানাতে পারলাম না।
মাথায় ঢুকল না।
তোমাদের ছেলেদের কি ধারণা? একটা সুন্দরী মেয়ের একমাত্র চাওয়া, দারুণ এক সুপুরুষ, যার কাড়ি কাড়ি টাকা আছে? একি অ্যালজাব্রার সুত্র নাকি?
এব্যাপারে তো রিসার্চ করা হয় নি।
তোমার কথা বল। তুমি কখনও আমাকে মন থেকে ভালোবেসেছো? কখনও বিশ্বাস করেছো আমি তোমাকে পছন্দ করেই তোমার প্রেমে পড়েছি।
তোমাকে বিয়েও নিজের ইচ্ছায় করেছি? কেন তুমি সারাক্ষণ ভয়ে থাকো কখন আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাব? বল মিথ্যা বলছি?
চোরাবালিতে আটকে গেছি। আমার মনের অবস্থা ইরিন ভালো ভাবেই টের পেয়েছে। আমি কি করব? আমি তো শুধু একটু সাবধান থাকতে চেয়েছি। যেন ভেঙ্গে না পড়ি। অঘটনটা ঘটার পরে যেন নিজেকে সামলে নিতে পারি।
হৃদয় ভাঙবে, তবে যেন জোড়া লাগানোর মত থাকে এটাই তো আমার চেষ্টা। কিন্তু এখন ইরিন কে শান্ত করা দরকার। বের হয়ে আসবার রাস্তা খুঁজছি। কথা ঘোরানো যেতে পারে। ‘কানের দুলটা খুব সুন্দর মানিয়েছে’ এমন কিছু বললে কেমন হয়।
আমি কি আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু বলতে পারি?
পারো, তবে সত্যি কথা।
পরিবেশ এখন আর রোমান্টিক নাই। ইরিন দারুণ সিরিয়াস। এতদিনের ক্ষোভ আজ ফেটে বেরোচ্ছে। ওর ভিতরে এতো অভিমান ছিল বুঝতেই পারিনি।
হয়তো আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, আমার বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার। কখনও জেলাস করতে চেয়েছে, কখনও অ্যাট্রাক্ট করতে। ব্যাপারগুলোতে আমার রেসপন্সে কোন অধিকারবোধ ছিল না। ওকে কেউ সুন্দর বলেছে শুনে রাগিনি কখনো। বরং ছেলেটাকে অ্যানালাইসিস করেছি, আমার চেয়ে কতটা ভালো।
কি কি যোগ্যতা আছে।
বেশ। কি জানতে চাও বল?
তুমি কেন সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকো? কেন বিশ্বাস করতে পারো না আই লাভ ইউ।
বিশ্বাস করি তো।
মিথ্যা বল না।
তুমি খুব বাজে কোয়ালিটির মিথ্যুক।
আর কি করে তোমাকে বোঝাবো।
শেষ চেষ্টাটা খুব কার্যকরী হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। ইরিনকে যতটা চিনি, এবার ও বার্স্ট করবে। ভয়ংকর একটা কিছু করবে।
সারেন্ডার করে ফেলাই ভাল। সব কথা স্বীকার করে ফেলি। মন খুলে বলেই ফেলি। এভাবে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে কতদিন চলবে?
প্রত্যেক মেয়েই খুব ভালো কোয়ালিটির থট রিডার হয়। বিশেষ করে একজন পুরুষের মনের ভেতর কি চলছে, বুঝতে খুব সমস্যা হয় না।
এই তিন বছরে আমাদের সম্পকর্কে একটা সেপ দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। অ্যান্ড আই ফেইলড। সো আই টুক অ্যা ডিসিশান।
তুমি ভয়ংকর একটা কিছু করবা মনে হচ্ছে। প্লিজ আমাকে একটু এক্সপ্লেইন করতে দাও।
নো। ইউ লস্ট ইওর চান্স। ইউ লাইড। এবার ভারডিক্ট শোন। তোমার সামনে এখন দুটো রাস্তা।
প্রথমটা, আমি এখন সুইসাইড করব, তুমি তাকিয়ে দেখবা।
ওয়েট, তুমি একটু ঠাণ্ডা হও। এ ব্যাপারে ডিসকাস করা যেতে পারে।
আমি সায়ানাইড এনে রেখেছি। হাসপাতালে নেয়ার সুযোগ পাবে না।
আমি যা বলি তা করি, তুমি জানো। এখন শুধু বল সেকেন্ড অপশানটা শুনতে চাও কি না?
ইরিনের এই চেহারা আমি আগেও দেখেছি। আমাদের বিয়ের দিন। শুধু একটাই কথা বলেছিল, আজকে আমরা বিয়ে করছি। আপত্তি আছে? আজকে আবার সেই রূপ।
শুধু এবার অপশান ভিন্ন।
ভয়ে ভয়ে বললাম, বল।
আমার সেই স্পেশাল মানুষটাকে চাই।
মানে?
এমন একজন মানুষ, যে আমাকে মন থেকে ভালবাসবে, এক মুহূর্তের জন্যও ভাববে না আমি অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করে আছি। মনে প্রানে বিশ্বাস করবে, আই লাভ হিম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।