চানখাঁর পুল পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে। প্রায় অর্ধ হাজার র্যাব ও হাজার খানেক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ছোট এই স্থানটিতে। রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম চানখাঁর পুলে। হোটেল থেকে বের হয়েই শুনি জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে এখানে। কোন সাধারণ মানুষ এখন রাস্তায় থাকতে পারবেনা।
বাধ্য হয়ে আবার হোটেলে ঢুকতে হল আমাকে।
কিছুক্ষন পর.........
র্যাব-পুলিশের সবগুলো বাঁশি একসাথে ভয়ংকয় ভাবে বাজতে শুরু করল। টেবিলে রাখা চায়ের কাপটি কাঁপছে। হ্যাঁ, আকাশ, বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে। সাথে ঢোলের দুম-দুম আওয়াজ, পাশবিক আর্তনাদ।
যেন সমস্ত পৃথিবী এক সাথে প্রকম্পিত হচ্ছে। মানুষের চিৎকার, চেঁচামেচি, বাঁশির আওয়াজ, প্রকম্পন। মনে হচ্ছিল যেন বিশাল এক দৈত্য পৃথিবীটাকে হাতে নিয়ে আচ্ছা করে ঝাঁকাচ্ছে। ভাবলাম পৃথিবী হয়ত ধ্বংস হচ্ছে। সবকিছু উপেক্ষা করে বের হলাম।
আমাকে দেখতে হবে হচ্ছেটা কি। যা দেখলাম তাতে আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় অকেজো হয়ে যাবার মত অবস্থা হল। অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করলাম।
একদল মানুষ আদিম উন্মাদনায় মত্ত হয়ে ছুটে আসছে। হুঙ্কার দিচ্ছে।
তাদের প্রত্যেকের হাতে আদিম সব অস্ত্র। আর হুঙ্কার দিচ
্ছে- স্যাক্রিফাইস, স্যাক্রিফাইস শব্দে। আমার রক্ত হিম হয়ে আসল। কাকে স্যাক্রিফাইস দিবে এরা? এরা কি লুসিফারের পূজারী? আমাকে দেখতে হবে। মরে গেলেও দেখতে হবে।
দলটা হোসেনী দালানের সামনে এসে থেমে গেল। এরপর আবার বাঁশি-ঢোলের নেশা ধরা আওয়াজ, নারী-পুরুষের আদিম উদ্দাম নৃত্য, মুখে সেই একই গর্জন- স্যাক্রিফাইস, স্যাক্রিফাইস।
সাহস করে একজনকে জিগ্যেস করলাম- কি হচ্ছে দাদা এখানে?
-নাস্তিক কোথাকার। জানিসনা আজকে ১০ ই মহররম? তাই আনন্দ করছি।
ঘটনাটা গত শনিবারের।
কিন্তু ১০ ই মহররম এ আনন্দ করবে কেন এরা? মানলাম ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আদি মানব আদমের জন্ম এইদিনে, ইব্রাহীম অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্ত হয় এইদিনে, ইসমাইল কুরবানির হাত থেকে রক্ষা পায় এইদিনে, নবী জোসেফ তার বাবার সাথে ধর্ম যুদ্ধ করে এইদিনে, নবী জব এর রোগ মুক্তি ঘটে এইদিনে, সোলাইমান রাজ সিংহাসনে বসে এইদিনে, পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এইদিনে আবার পৃথিবী ধ্বংসও হবে নাকি এইদিনেই।
কিন্তু এসব কারণে তো গুরুত্বপূর্ণ নয় এই দিনটি। হিজরি ৬৮০ সনের ১০ ই মহররম মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন ইয়াজিদের চক্রান্তে নির্মমভাবে খুন হন। এজন্যই এইদিনটি গুরুত্বপূর্ণ। এটা মোটেও আনন্দ করার দিন নয়।
তবে ওরা কিসের আনন্দ করছিল? কোন ধর্মের অনুসারী ওরা, কি স্যাক্রিফাইসের কথা বলছিল ওরা। আদৌ কি কোন স্যাক্রিফাইস হয়েছিল সেদিন?
হ্যাঁ, স্যাক্রিফাইস হয়েছিল। ১৩৪ জনকে করুণ ভাবে জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছিল তার পরদিন। কেউ থেঁতলে ভর্তা হয়ে গিয়েছিল, কেউ পুড়ে কাবাব হয়ে গিয়েছিল।
এই দুটো ঘটনা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কিনা আমি জানিনা।
আমার শুধু মনে হচ্ছে স্যাক্রিফাইস হয়েছে। বড় রকমের একটা স্যাক্রিফাইস হয়েছে। এবং হতেই থাকবে ততদিন, যতদিন ধর্মের অন্ধ ভক্তের রাজত্ব থাকবে পৃথিবীর বুকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।