বিশেষ কিছু বলার নাই তবে এটুক বলার আছে খালি খিদা লাগে এমন কি খাইলেও খিদা লাগে :( মোবাইলের প্রচণ্ড রকম শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো নজরুল সাহেবের।
প্রতিদিন মোবাইল অফ করেই ঘুমাই কিন্তু গতকাল রাতে ভুলে অফ করিনি তাই
এই অবস্থা। আধো বোজা চোখে মোবাইলের দিকে তাকালাম। আমার দোকানের ম্যানেজার।
নাম সুফি মিয়া।
আমার একটা দোকান আছে। কাপড়ের শোরুম আরকি।
দোকানের পাশাপাশি আমি কিছু ব্যবসা ও করি। তা দিয়ে আমার সংসার টা ভালো মতই চলে যায়।
সুফি মিয়া আমার বিসসস্থ কর্মচারী।
আজ ১২ বছর হোল আমার দোকানে। আসলে এই লোকটা আছে বলেই
দোকান টা নিয়ে আমার এত ভাবতে হয়না।
হ্যালো
ভাই নতুন কিছু মালামাল আনতে হয়যে,আপনে অনুমতি দিলে আজ যাইতাম।
আরে সুফি মিয়া জাও মানা করেছে কে?
ভাই কেশে তো টাকা নাই এই জন্য ফোন দিলাম
আচ্ছা ঠিকাছে আমার বাসায় এসো।
ফ্রেস হয়ে নাস্তা সারতেই সুফি মিয়ার আগমন।
তো কখন যাচ্ছ সুফি মিয়া?।
এই তো ভাই আজ আমি আর রবিউল মিলা জামুনে ইসলামপুর ৪ টার দিকে।
৮ টার মধ্যেই আসুম। দোকানে মাল রাইখা আগামি কাল সকালে সব গুছামু।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে তুমি যাও।
ভাই আরেকটা কথা ছিল।
কি?
তবে ভাই আমি রবিউল রে সাথে নিবার চাইনা।
ক্যানও কি হয়েছে?আর রবিউল কে সাথে না নিলে তুমি এত কিছু আনবে কি করে?
রবিউল ও আমার পুরনো কর্মচারী। খুব ভাল একটা ছেলে কিন্তু ক্যানও জানি সুফি মিয়ার সাথে
ওর মতে মিল হয়না।
ভাই ও আমারলগে বিয়াদবি ও করে আবার আপনেও এত ভালা পান কিছু কইতে ও পারিনা।
হুম আচ্ছা আমি পরে দেখছি ব্যাপারটা এখন তুমি যাও।
আচ্ছা ভাই আসসালামুয়ালাইকুম।
ওয়ালাইকুমআচ্ছালাম।
সুফি মিয়াকে বিদায় দিয়ে আমার ছোটো সোনামণি সীমাকে ইস্কুলের জন্য তৈরি করলাম।
সীমানা ওর মার বাসায়,মানে সীমার আম্মু অর্থাৎ আমার ইস্ত্রির কথা বলছি আর কি।
সন্ধ্যা ৭ টা।
সুফি মিয়া ফোন দিয়েছে।
হ্যালো ভাই আজ মাল কিনতে পারিনাই।
ক্যানও?
ভাই মুক্লেস মিয়া নাই আর অন্য দোকানে মাল পছন্দ ও হয়না।
ভাই আমি টাকা ক্যাশে রাখতাসি কাল সকাল সকাল আমুনে দোকানে।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে তুমি যাও।
সকাল ৯ টা। নাস্তা সেরে হাতে চা নিয়ে বারান্দায় বসে ছিলেন নজরুল সাহেব।
এমন সময় অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। নাহ কে আবার এই অসময় ফোন দিলো।
হ্যালো
আপনি কি নজরুল সাহেব বলছেন?
জি হা বলুন।
আমি রমনা থানার ওসি বলছি
আপনার দোকানের কাছাকাছি একটা লাশ পাওয়া গিয়েছে। ওনার পকেটে আপনার দোকানের
আইডি কার্ড তাই আপনাকে ফোন দিয়েছি। আপনি এখনি চলে আসতে পারবেন?
আমার মাথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হোল। খুন তার উপর আবার পুলিশের ঝামেলা।
কিন্তু সুফি মিয়া!সুফি মিয়া কি তাহলে আজ দোকান খুলেনি?ওর আবার কিছু হোলনা তো?
নাকি রবিউলের কিছু হোল!কিছুই বুঝতে পারছিনা। তাড়াহুড়ো করে রওয়ানা দিলাম দোকানের দিকে।
সীমানা চা টা শেষ করে যেতে বললো কিন্তু কোন উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না আমি।
দোকানের কাছাকাছি জেতেই দেখলাম মানুষের জটলা সাথে পুলিশ।
পুলিশের পোশাক গায়ে মোটা ভুঁড়িওয়ালা লোকটাই যে ওসি তা বুঝতে কষ্ট হোলনা।
ওনার সামনে গিয়ে দাড়াতেই উনি বললেন আপনি কি নজরুল সাহেব?
জি।
আমার সাথে আসুন। একটু দুরেই দেখতে পাচ্ছি পাটিতে একটা লাশ পরে আছে,কেমন যেন চেনা
চেনা লাগছে ভয়ে আতংকে বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো।
দেখুন তো একে চিনেন কিনা,বললেন ওসি সাহেব।
আমি নিজের চোখ কে ও যেন বিশ্বাস করাতে পারছিনা হ্যাঁ এযে রবিউল।
রবিউলের বিস্ফোরিত দুটি চোখ যেন এখনো কিছু বলতে চাচ্ছে।
তাহলে সুফি মিয়া। সুফি মিয়া ও কি তাহলে খুন হোল নাতো?।
দোকানও যে আজ বন্ধ। আমার মাথা ঘুরছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।
আপনার দোকানের চাবি কোথায়?জিজ্ঞেস করলেন ওসি সাহেব।
জি আসল চাবি টা আমার সাথেই থাকে আর ডুপ্লিকেট টা আমার ম্যানেজার সুফি মিয়ার কাছে।
হুম তাহলে আপনার দোকানে দুজন কাজ করেন তাইতো?
জি।
তো সুফি মিয়া কোথায় জিজ্ঞেস করলেন ওসি।
প্রতিদিন তো সুফি মিয়া নিজেই দোকান খুলে আমাকে ফোন দেয় কিন্তু আজ আর ফোন দেয়নি।
এই আপনার ফোন পেয়েই আমি ছুটে আসলাম।
এমন সময় আমার পাশের দোকানের কর্মচারী ছেলেটা কে দেখতে পেলাম কি যেন বলবে বলে মনে হচ্ছে।
কিরে রহিম কিছু বলবি।
জি ভাই যদি অনুমতি দেন।
বল বল কি বলবি তুইত সব সময় দেরি করেই বাসায় যাস কিছু দেখেছিলি?
ভাই গতকাল দোকান একটু তারতারি বন্ধ করতে কইছিল মালিক।
উনি আমারে চাবি দিয়া সন্দায় চইলা গেছেন তাই ফাক পাইয়া আমিও দেরি করিনাই
দোকানের শাটার ফালামু এমন সময় আপনার দোকানের মধ্যে অনেক চেঁচামেচির আওয়াজ পাই।
তারপর?কি শুনলি?
শুনলাম সুফিমিয়া ভাই আর রবিউল ভাই কি যেন নিয়া ঝগড়া করতাছে।
পুরাটা বুঝতে পারিনাই তয় খুব ঝগড়া হইতাছিল ওইটা বুঝতাছিলাম।
ওসি সাহেব বক্তব্য টা তার নোট খাতায় টুকে রাখলেন
হুম,আচ্ছা দোকান টা খুলেন তো বললেন ওসি সাহেব।
দোকান তো তালা মারাই দেখছি তার মানে সুফি মিয়া আজ দোকানেই আসেনি।
দোকান খোলা হোল। নাহ সব তো ঠিক ই আছে মানে ডাকাতি বা চুরি হয়নি।
ওসি সাহেব ও সব ঠিক দেখে বলেলন ক্যাশ টা চেক করতে।
ক্যাশ ড্রয়ার খুলা হোল নাহ কোন টাকা নেই। অবাক ই হলাম কারন সুফি মিয়া বলেছিল
দোকানে সে ৫০ হাজার টাকা রেখে যাবে আজ মাল কিনতে যাবে বলে সেই টাকা তো নেই!!
ওসি সাহেব সুফি মিয়ার বাসার ঠিকানা চাইলেন আর বললেন এখনি তিনি ওর বাসায় অভিযান চালাবেন।
রবিউলের বাসায় খবর টা জানানো হোল। ওসি বললেন আমাকে বাসায় চলে যেতে তিনি আবার ফোন দিবেন।
রাত ৯ টায় ওসি ফোন দিলেন আর বললেন থানায় আসতে।
থানায় গিয়ে দেখি সুফি মিয়া জেলের ভিতরে বসে। আমাকে দেখতেই হাউমাউ করে কেদে উঠলো।
বসুন নজরুল সাহেব। ওই তো আপনার সুফি মিয়া।
জি কিছু জানতে পারলেন।
হুম জেনেছি।
আমাকে একটু কথা বলতে দেয়া যাবে ওর সাথে?
অনুমতি পেয়ে সুফি মিয়ার সাথে কথা বলতে গেলাম।
আমাকে দেখে সে কাদতে কাদতে বলতে লাগলো ভাই আমার কোন দোষ নাই আমি কিছু জানিনা।
শান্ত হও সুফি মিয়া আমাকে সব খুলে বলো। আজ দোকানে আসনি ক্যান?গতকাল রাতে কি হয়েছিল?
আর ক্যাশের টাকাই বা কোথায়?
ভাই ওদিন রবিউলরে কইছিলাম জাওয়ার আগে দোকান টা ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করতে।
ও আমার মুখের ওপর বলে আমি পারুম্না পারলে আপনে করেন। এই কথা শুনার পর কার মেজাজ ঠিক থাকে।
তাই ওর সাথে এটা নিয়া তর্কাতর্কি হইছিল এর বেশি কিছুনা। আর আমার শরীর টা খারাপ লাগতাছিল
তাই ওরে দোকানের চাবি দিয়া কইছিলাম যেন সকালে দোকান খুলে রাখে আমার আসতে দেরি হইবো।
হুম তোমার আসতে দেরি হবে তুমি চাবি রবিউল্কে দিলে সেটা আমাকে ফোন দিয়ে বলোনি ক্যানও?
ভাই আপ্নারে তো ফোন দিছিলাম কিন্তু আপনার মোবাইল অফ ছিল।
হুম গতকাল রাতে মোবাইলে চার্জ ছিলনা আবার বিদ্যুতের সমস্যা ও ছিল তাই হবে।
তাহলে ক্যাশের টাকা কোথায়?
ভাই ক্যাশের টাকা তো আমি ক্যাশেই রাখছিলাম আর আপনি তো জানেন ই গেটের চাবির সাথে আমি
ক্যাশের চাবি রাখি।
আবারও কেঁদে উঠলো সুফিমিয়া ভাই আমি ওরে খুন করিনাই ভাই বিশ্বাস করেন।
ওসি সাহেবের ডাকে আমি কিছু না বলেই ওখান থেকে চলে আসলাম।
তো শুনলেন তো সবই নজরুল সাহবে।
হুম
আমার তো সন্দেহ হচ্ছে আপনার সুফিমিয়াই সব কিছুর হোতা।
কিন্তু আমার তো তা মনে হয়না,ওকে আমি চিনি।
ধুর মিয়া আসামি চিনি আমরা আপনি চিনেবেন ক্যামনে?
ধইরা পেঁদানি দিলেই সব কিছু স্বীকার করবো। দুইদিনের রিমান্ড নিমু তাইলেই দেখবেন সব কিছু স্বীকার করবো।
আমি কিছু না বলে চলে আসলাম। বাসায় সীমানা কে সব কিছু খুলে বলতে গিয়ে বললাম না।
কারন আমার অনাগত সন্তান সীমানার পেটে।
এই মুহূর্তে আমি তাকে এইসব ঘটনা বলে চিন্তিত করতে চাইছিনা।
সকালে কান্নাকাটির শব্দে ঘুম ভাংল। গেটের সামনে যেতেই দেখি সুফিমিয়ার বউ তার ২ বছরের বাচ্চা নিয়ে এসে
সীমানার পা ধরে কাদছে। সীমানা ও প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। তখন ওকে সব খুলে বললাম।
ভাই ও ভাইজান আমার জামাই পুরা নির্দোষ হেয় কোন খুন খারাপি করেনাই। ঐদিন উনি বাসায় আসলে আমি ওনার
কাছে জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে উনি বললেন উনার শরীর ভালানা তাই তাড়াতাড়ি দোকান থেকে চলে আসছেন।
এখন ওনার যদি কিছু হইয়া যায় তাইলে আমি এই বাচ্চাটা নিয়া কোথায় যামু। আমার স্বামীরে বাচান ভাই।
উনি নির্দোষ।
আমি গরীব মানুষ ওনার মামলায় উকিল নিয়োগ দেয়ার মতো টাকা ও তো আমার কাছে নাই ভাই আপনার
পায়ে পড়ি আমার এই বাচ্চার মুখের দিকে চেয়ে হলেও ওনারে বাচান।
আচ্ছা আচ্ছা তুমি যাও আমি দেখছি।
আসলে আমি তখন সুফিমিয়ার বউকে বিদায় দিতে পারলেই যেন বাচি।
বারান্দায় বসে বসে ভাবতে লাগলাম আসলেই কি সুফি রবিউলকে খুন করেছে?
তাও আবার মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য?
নাহ বিশ্বাস হচ্চেনা। কিন্তু রবিউলকে খুন ই বা করবে কে।
নাকি রবিউল নিজেই ক্যাশ থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় ছিতাইকারির খপ্পরে প্রান দিলো?
যাই হোক আর বেশিক্ষণ ভাবতে পারলাম্না মাথা টা ঝিম ধরে আছে।
দুই মাস পর...
আদালতের বেঞ্চিতে বসে আছেন নজরুল সাহেব। কাঠগড়ায় দাড়িয়ে সুফিমিয়া বার বার নজরুল সাহেবের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন।
আজ সুফিমিয়ার বিচারের রায় দেয়া হবে।
একটি টেপ রেকর্ডার জর্জ সাহেবের সামনে।
তাতে রয়েছে সুফিমিয়ার জবান বন্দি।
সুফি মিয়া বার বার বলতে থাকলো আমার কোন দোষ নাই আমার কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি নিছে
আমারে নির্যাতন করে এই স্বীকারোক্তি নেয়া হইছে। কাদতে থাকলো সুফি মিয়া।
দোষ প্রমানিত হোল।
অতঃপর অভিযোগ প্রমানিত হওয়াতে তার মৃত্যু দণ্ড দিলেন আদালত।
বাসায় ফিরে আসলাম চুপ করে বসে আছি বারান্দায় বার বার সুফি মিয়ার জলে ভেজা চোখ দুটো আমার
চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
পরেরদিন সকালে ঘুম ভাংতেই দেখি সীমানা মুখ কালো করে আছে। জিজ্ঞেস করতেই বললো সুফি মিয়ার বউ নাকি তার বাচ্চা সহ আত্মহত্যা করেছে। স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। মনে পড়লো দুই মাস আগে সে এসেছিল আমার পা ধরেছিল তার স্বামীর প্রান ভিক্ষে চেয়েছিল আমার কাছে।
ক্যানও আত্মহত্যা করলো সেটা জিজ্ঞেস করার আর প্রয়জন বোধ করলামনা।
স্বামী হারানোর শোক আর তার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন সমাধান করতে পারেনি বলেই হয়তো সে এই পথ বেছে নিয়েছে।
নতুন করে সব কিছু সাজানোর চেষ্টা করতে হবে। দোকান টা নতুন করে সাজাতে হবে আমার আয়ের অর্ধেকের ও বেশি আসে এই দোকান থেকে। নতুন দুইজন নিয়োগ দিলাম আরও কিছু মাল পত্র আনলাম।
মাজখান দিয়ে ৫০হাজার লোকসান তার উপর দোকান বন্ধ দুই মাস। ভালভাবেই চলছিল সব কিছু কিন্তু হঠাৎ ই যেন সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেলো।
সন্ধ্যা ৭ টা
সীমানা ও সীমা কে নিয়ে গিয়েছিলাম বেড়াতে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন।
হ্যালো
নজরুল ভাই আমি সামাদ বলছিলাম আপনার পাশের দোকানের।
ও সামাদ বল কি হয়েছে?
ভাই আপনার দোকানে তো আগুন লাগছে তাড়াতাড়ি আসেন।
দ্রুত ওদের কে বাসায় দিয়ে দোকানের উদ্দেশ্য করে রওয়ানা দিলাম।
গিয়ে দেখি পুরো দোকান জুরে আগুন জ্বলছে। সামাদেকে দেখতে পেলাম।
প্রশ্ন করার আগেই সে বললো ভাই বলা নাই কওয়া নাই হঠাৎ দেখি আপনার দোকানে আগুন জ্বলছে।
আর আপনার কর্মচারী দুইটা বের হইতে পারে নাই এখনো ভিতরেই।
তার মানে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না
টানা ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিভলো।
যা ভেবেছিলাম তাই ভিতরে দুটো লাশ পুরে কয়লা হয়ে আছে।
হা আমার সেই নতুন দুজন কর্মচারীর লাশ।
এতো বড় একটা ক্ষতি হয়ে গেলো নিজের চোখের সামনে দিয়ে মানতে ও কষ্ট হচ্ছে।
বারান্দায় বসে বসে সিগারেট টানছি।
সীমানা আবার সিগারেটের ধোয়া সহ্য করতে পারেনা।
নিজের ভিতর কেমন যেন এক অসস্থি কাজ করতে লাগলো। মনে হয় আমায় কেও দেখছে।
রাত দু টো বাজে। এরকম রাতে একা বসে থাকার অভ্যাস আমার আগে থেকেই।
ক্যান জানি মনে হোল কিছু একটা আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। ভালো করে দেখালাম নাহ কিছুই তো নেই।
অদ্ভুত চিন্তা গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ঘুমতে যাওয়া প্রস্তুতি নিলাম।
মাঝ রাতে প্রচণ্ড রকম চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আওয়াজ টা এসেছে আমার মেয়ে সীমার রুম থেকে।
হুড়মুড় করে উঠে সীমার রুমের দিকে ছুটে গেলাম। দেখলাম সীমা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
আমি যেতেই সে আমার কোলে ঝাঁপীয়ে পড়লো। বললো কে যেন তার গায়ে হাত দিয়েছে। সে ভেবেছিল
আমি বুঝি তাকে ধরেছি কিন্ত সে হাত ধরার পর বুঝতে পারলো সেই হাতে কোন মাংস নেই শুধু হাড্ডি।
তখন ই সে চিৎকার দিয়ে উঠলো। ভাবলাম ছোট মানুষ ঘুমের ঘোরে ভয় পেয়েছে। সে আর একা ঘুমাতে রাজি হোলনা।
নিজের বিছানায় নিয়ে আসলাম। কিন্তু ক্যান জানি নিজের ভিতর অস্থিরতা কাজ করছে।
ঘুম ও আসছেনা।
জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে চোখ বন্ধ করলাম। ঘুম প্রায় এসেও পরেছিল কিন্তু না এ আমি কাকে দেখতে পেলাম!!
সুফি মিয়া,আমি দেখলাম সে আমার দেখালাম সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কিন্তু এই সুফি মিয়া তো সেই সুফি মিয়া নয়।
এতো বীভৎস দেখাচ্ছে ক্যানও তাকে।
ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো চরম অস্বস্তি নিয়ে।
শুনতে পেলাম আজান দিচ্ছে। আজ নতুন একটা প্রাইভেট কম্পানিতে ইন্টার্ভিউ দেয়ার কথা।
দোকান টা ও নেই সংসার চালানোটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাস্তা টা সেরেই রওয়ানা দিলাম।
১১ টায় ইন্টার্ভিউ বসে আছি আর সবার সাথে।
ইন্টার্ভিউ রুম থেকে বের হয়ে যেন হাফ ছেরে বাচলাম। চাকরীটা হবেই আমি সিউর এর চেয়ে ভালো ইন্টার্ভিউ আর হয়না।
পরের দিন সকালেই ফোন এলো নতুন অফিস থেকে বলা হোল পরশু থেকেই জয়েন। শুনে সীমানাও খুব খুশি।
কিছু দিন বাদেই আমাদের নতুন অতিথি আসবে হাসপাতাল,চিকিৎসা খরচ নাহ কোন ঝামেলাই হবেনা।
প্রথম দিনের ডিউটি টা ভালই লাগলো। আলাদা রুম দেয়া হয়েছে আমাকে।
ডিউটি শেষে বাসার জন্য মিষ্টি কিনে নিলাম। কিন্তু সীমানার মুখ টা কেমন যেন গোমড়া দেখাচ্ছে।
জিজ্ঞেস করতেই বললো আজও নাকি সীমা ভয়ে চিৎকার করেছে আর বলেছে সে তার রুমে সে নাকি কার ছায়া দেখতে পেয়েছে।
ওকে আর এসব নিয়ে চিন্তিত হতে না করলাম আর বললাম ছোট মানুষ মনের ভয় আর কিছুনা।
খুব ক্লান্ত লাগছে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে কাল আবার ডিউটি আমার আরামের ঘুম শেষ।
বেশ ক্লান্ত ছিলাম যার দরুন ঘুম টা তাড়াতাড়িই এলো। কিন্তু সকালে ঘুমটা ভাঙ্গল অস্বস্তি নিয়ে।
সীমানা ঘুমিয়ে আছে তাই সীমার রুমের দিকে গেলাম।
কিন্তু কিন্তু না একি দেখলাম আমি নিজের চোখ কে ও বিশ্বাস করাতে পারছিনা আমি আমার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি যেন।
কেও যেন আমার বুক থেকে আমার কলিজা টা টেনে বের করে আনতে চাইছে। আমার সোনামণি আমার জাদু পাখি
আমার স্বপ্ন সীমা ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে ফাস দিয়েছে। না এ হতে পারেনা।
আমি ভুল দেখছি।
চিৎকার দেয়ার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছি আমি। সীমা বলে চিৎকার দিলাম এর পর আর কিছু মনে নেই।
গেয়ান ফিরতেই দেখি আমি হসপিটালে। সীমানা আমার পাসে কাঁদছে।
আমার গেয়ান ফিরতে দেখেই ও আমায় ধরে কাঁদা শুরু করলো। আমি নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলাম। সীমার লাশ মর্গেই রাখা আছে। আমি সুস্থ হলে ওকে দাফন করা হবে।
আজ বিকেলে ৫ টায় ওর দাফন হবে।
শোকে পাথর হয়ে গেছি সীমানা ও কেমন যেন ফেল ফেল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
দাফন শেষ। এখনো নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম্না আমার জাদু পাখি টা ওই অন্ধকার কবরে একা শুয়ে আছে।
মনে চাইছিল যেন কবর খুরে ওকে তুলে নিয়ে আসি,মনে হচ্ছিল সে বলছে বাবা বাবা আমাকে একা রেখে যেওনা।
সীমানা আর আমি শুয়ে আছি।
কারও সাথে কেও কথা বলছিনা তবে টের পাচ্ছি ওর চোখ বেয়ে জল আমার কাধে এসে পরছে।
এই মুহূর্তে আমি ও যদি ভেঙ্গে পড়ি তাহলে চলবেনা। আমার অনাগত সন্তান এখন পৃথিবীর মুখ দেখার অপেক্ষায়।
তাই আমাকে সক্ত হয়ে থাকতে হবে। কাল থেকেই আবার অফিসে যেতে হবে।
নতুবা নতুন চাকরীটা ও যদি চলে যায়
তাহলে বিপদে পরে যাবো। সীমানা কে বুঝিয়ে আমি আফিসের দিকে রওয়ানা দিলাম। অফিসের সবাই ঘটনা জানে
তাই কেও কিছু প্রশ্ন না করে সান্তনা দিতে লাগলো। মোবাইল টা বেজে উঠলো।
সীমানা ফোন দিয়েছে।
মনে হয় একা একা খারপ লাগছে তাই। আমি ও অফিস থেকে ২ ঘণ্টা আগেই ছুটি নিয়ে রেখেছিলাম
ওকে সময় দিবো বলে।
হ্যালো
নজরুল সাহেব
অবাক হলাম সীমানার মোবাইলে পুরুষের কণ্ঠ।
জি কে বলছেন?
আপনি কি এখন বাসায় আসতে পারবেন?
হ্যাঁ পারবো আপনি কে?
বাসায় আসুন তারপর বলছি।
অজানা আতংক যেন গ্রাস করলো আমায়।
তবে কি নাহ কি সব ভাবছি আমি কি হবে।
মনে হয় প্রসব বেথা উঠেছিল তাই কেও হয়তো ওর চিৎকার শুনে এসেছে।
যাই হোক সব ভাবনা পরে আগে তো বাসায় যাই।
দ্রুত একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাসায় রওয়ানা দিলাম। নিচ তলা থেকেই টের পাচ্ছিলাম আমার দো তলার বাসা থেকে
শব্দ আসছে।
গিয়ে দেখি বাড়িওয়ালা চাচা আর এক পুলিস দাড়িয়ে। আমাকে দেখেই তারা চুপ হয়ে গেলেন।
আমি যা বুঝার বুঝে নিলাম। এক দৌরে সীমানার রুমে ছুটে গেলাম। কিন্তু একি!না এ হতে পারেনা আমি বিশ্বাস করিনা।
আমি ভুল দেখছি না সব আমার চোখের ভুল। সীমানার পেট মাঝখান দিয়ে ফালা করে কাটা। ভিতর টা খালি।
দেখলে মনে হয় কেও বুঝি ধারালো ছুরি দিয়ে মাঝবরাবর কেটে ফেলেছে। আর ফাকা স্থানে ছিল আমার অনাগত সন্তান।
তাকে যেন কেও সেই পেট থেকে টেনে নিয়ে গেছে আমার অনাগত সেই সন্তান কে। শোকে দুঃখে পাথর হয়ে গেলাম আমি।
আমার এ সর্বনাশ কে করলো এ আমার এ ক্ষতি কে করলো। আমার তো কোন শত্রু নেই তাহলে কি করে কি হোল।
পুলিশ এসে লাশ মর্গে নিয়ে গেলো তদন্দের জন্য।
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলাম। এখন আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো।
আমার তো সব ই শেষ এ জীবনের তাহলে অর্থ রইলো কোথায়?করিম আঙ্কেল মানে আমার বাড়িওয়ালা তিনি হয়তো আমার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলেন
তিনি আমাকে জোর করে তার ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলেন আর বললেন আজ রাত টা যেন তার বাসায় কাটিয়ে দেই।
শুয়ে আছি আর বোবার মতো চেয়ে আছি আকাশের পানে। এমন সময় মনে হোল কেও যেন আমার পাশে।
ফিরে তাকাতেই দেখলাম আমার ঘুমের ঘোরে দেখা সেই সুফি মিয়া। আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর হাসছে।
নিজের রাগ সাম্লাতে না পেরে হাতের মোবাইল টা ছুরে মারলাম ওকে লক্ষ্য করে। আমার ভিতর কোন ভয় কাজ করছেনা।
কাজ করছে ঘৃণা ও ক্রোধ।
মোবাইল টা সুফি মিয়াকে ভেদ করে দেয়ালে বাড়ি খেলো। সুফি মিয়া ও যেন উধাও হয়ে গেলো।
রাতে আর ঘুম হোলনা। ৪,৩০বাজে,আজানের ধ্বনি কানে বাজতেই আমি বারিওালার ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে গেলাম কিছু না বলেই।
পার্কের বেঞ্চিতে বসে বসে ভাবছি সাজানো জীবন আমার এখন কি হয়ে গেলো।
পকেটে সামান্য কিছু টাকা ছিল তাই নিয়েই বের হয়ে গিয়েছি।
এই চারটা দিন পার্কে ফুটপাতে শুয়ে কাটিয়েছি। বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে ছিলনা তাই। কি হবে বাসায় জেয়ে।
এখন তো আমায় বাসায় গেলে বাবা বাবা বলে কেও ছুটে আসবেনা।
আর তো দেখতে পাবনা সীমানার সেই হাসি মাখা মুখটা।
রাত ৯ টা। আজ বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। কিছু জিনিসপত্র নিতে হবে।
তাছাড়া বাড়ি ভাড়াটা ও বাকি আছে সব শোধ করে আজ ই আবার চলে যাবো অজানার পথে।
গেটের সামনে যেতেই বাড়িওয়ালা আমাকে দেখে খুনি খুনি বলে চিৎকার দিলেন। কিছুই বুঝতে পারলাম্না।
আশপাশের লোকজন আমায় জাপটে ধরলো। তখন পাশ দিয়েই জাচ্ছিল পুলিশের গাড়ি। আমাকে সেই গাড়িতে উঠিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হোল।
সত্যিই আমি তখনও কিছু বুজতে পারছিলাম না আসলে কি হচ্ছে। থানায় বন্দি হয়ে আছ ৪ ঘণ্টা।
এমন সময় দেখলাম বাড়িওয়ালা করিম ওসির সাথে কথা বলছেন।
আপনি সিউর তো এই লোকই আপনার কাজের ছেলে খুন করছে বললেন ওসি সাহেব।
হ্যাঁ আমি নিজের চোখে দেখছি।
আমি সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে কাজের ছেলেকে ডেকেও কোন সারা না পেয়ে রান্না ঘোরে যেতেই দেখি ও আমার কাজের ছেলেটার গলায় ছুরি বসিয়ে জবাই করার চেষ্টা করছে।
আমি দেখে চিৎকার করে উঠতেই ও দৌরে পালিয়েছে।
আমি এতক্ষণ তাদের সব কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম তাই আর নিজেকে সাম্লে রাখতে পারিনি। চিৎকার করে
উঠলাম না আমি কাওকে খুন করিনি। এ কি করে সম্ভব আমি সেই বাসা থেকে বের হয়েছি ভোর ৪,৩০।
খুন হয়েছে ৬ টায়!!ণা এ হতে পারেনা।
ওসি আর বাড়িওয়ালা আমার চিৎকার শুনে তাকালেন।
আচ্ছা দুই দিনের রিমান্ডে নিলেই সব বের হয়ে আসবে বাড়িওয়ালা কে বললেন ওসি সাহেব।
প্রচণ্ড রকম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমি তাদের শেখানো মতো স্বীকারোক্তি দিয়ে দেই।
আদালতে জর্জের কাছে দেয়া হোল সেই স্বীকারোক্তির টেপ।
চিৎকার করে বললাম এ সব মিথ্যে এ স্বীকারোক্তি আমার কাছ থেকে জোর করে আদায় করা হয়েছে। হঠাৎ চোখ গেলো আদালতের একদম পিছনে বেঞ্চির দিকে। দেখলাম সেখানে বসে আছি
সুফি মিয়া আর আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সে কি অট্ট হাসি আর বীভৎস। কিন্তু সে হাসি যেন আমি একাই শুনতে পাচ্ছি।
আদালতের রায়ে আমার মৃত্যু দণ্ড দেয়া হোল।
অতঃপর............। ।
এতক্ষণ পুরনো বট গাছ টায় বসে বসে অতীতের ঘটনা গুলো ভাবছিলেন নজরুল সাহেব।
কিন্তু এখন তার সময় এসেছে কেও তাকে আর বাধা দিতে পারবেনা।
সময় এখন প্রতিশোধ নেয়ার।
করিম সাহবের মেয়ে এখন ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু জানালা খোলা।
বাতাসে গা ভাসিয়ে দিলেন নজরুল সাহেব ওই জানালা লক্ষ্য করে।
চোখে ভয়ংকর প্রতিশোধের নেশা!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।