অন্ধকার দেয়ালে তোমার আলো জন্ম দেয় মিথ্যে ছায়াকে.....
২০১২ সালঃ বিশ্ব ধ্বংস হয়নি, ধ্বংস হয়েছে বিশ্ব মানবতা।
সত্যিই তাই। ইসরায়েলি নির্লজ্জ আক্রমনে নিথর সারি সারি ফিলিস্তিনি শিশুর লাশ দেখে প্রশ্ন জাগে, পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে কি মানবতা একেবারেই বিদায় নিতে চলল? মানবতা ছাড়া মানুষকে Homo sapiens নামক জন্তু ডাকাই শ্রেয়। দুই পায়ের জন্তু আর ‘মানুষ’ এর মাঝে নিঃসন্দেহে আকাশ পাতাল তফাত।
ইসরায়েলি এই আক্রমন রাজনীতি আর মৌলবাদের এক ভয়ানক মিশ্রন।
পাশ্চাত্য মিডিয়ার বদৌলতে আমরা মৌলবাদ শব্দটার সাথে খুব ভালোভাবেই পরিচিত। আর মৌলবাদ কথাটার সাথে সাথে চোখে ভেসে উঠে দাড়িটুপি ওয়ালা মুসলমান অস্ত্রধারী তথা আমেরিকানদের ভাষায় ‘টেরোরিস্ট’। কিন্তু যা আমরা অনেকেই মোটেও জানি না, তা হলো, বিশ্বের সবচেয়ে বড় মৌলবাদী-টেরোরিস্ট হচ্ছে যায়নবাদী ইসরায়েল। যাদের হাতে রয়েছে শুধু সাধারন একে-৪৭ নয়, ভয়নক পারমানিক বোমা পর্যন্ত। আর তাদের চেহারা উন্মোচনের কোনো খায়েশই পাশ্চাত্য মিডিয়ার নেই।
ধর্মকে পুজি করে রাজনীতি আর আগ্রাসনের এক অনন্য নজির এই ইসরায়েল। যায়নবাদী ইসরায়েলি প্রশাসন ও ক্ষমতাধরেরা ‘ঈশ্বর প্রতিশ্রুত ভূমি’-র রব তুলে নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
জেনেসিস ১৫:১৮ তে বলা আছে, On that day the LORD made a covenant with Abram and said, "To your descendants I give this land, from the river of Egypt to the great river, the Euphrates—
অর্থাৎ ঈশ্বর বনী ইসরায়েলিদেরকে মিশরের নদী (নীল নদ) থেকে ইউফ্রেটিস নদ পর্যন্ত ভূমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইহুদিদের স্ক্রিপচার অনুযায়ী ঈশ্বর আব্রাহামকে আরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,
I will give as an everlasting possession to you and your descendants after you; and I will be their God.
মৌলবাদী ইহুদীদের দাবি,ইসরায়েলী রাজ্যের সীমা হবেঃ
দক্ষিনে রেড সী, পশ্চিমে মেডিটেরেনিয়ান, উত্তরে মেডিটেরিনিয়ান হতে লেবানন-সিরিয়া এবং পূর্বে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত।
ইসরায়েলিদের প্রতিশ্রুত ভূমি।
প্রাচীন ভূমি আর সোলেমনের পবিত্র মন্দিরের মিথে তাড়িত সাধারন ইহুদীদেরকে মৌলবাদের জালে আটকানো জন্য যায়নবাদীরা মূলত এই প্রতিশ্রুতির কথাই বারবার স্মরন করিয়ে দেয়। তারা বিশ্বাস করে, ঈশ্বর আব্রাহামের বংশধরদের দেশ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল,যে কারনে ইহুদীরা ফিলিস্তিনের বৈধ অধিকার লাভ করেছে।
মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার মূলে শুধু ইহুদী মৌলবাদ নয়, খ্রিস্টান মৌলবাদও দায়ী। ইহুদীদের ধারনা, ইহুদীরা পবিত্র ভূমিতে বাস করতে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত মেসিয়াহ বা ত্রান কর্তা ফিরে আসবে না। চূড়ান্ত শান্তি রাজ্য স্থাপনও সম্ভব হবে না।
তাদের সাথে মিল রেখে মৌলবাদী খ্রিষ্টানদেরও ধারনা, ইহুদীরা প্রতিশ্রুত রাজ্যতে বাস করতে পারলেই জেসাস ক্রাইস্টের ফিরে আসা সম্ভব হবে। এজন্য ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে জেরি ফলওয়েল জেসাস ক্রাইস্টের প্রত্যাবর্তনের সবচেয়ে মহান পূর্বাভাস হিসাবে দেখেছেন।
ইয়াহুদা কুক ইসরায়েলিদের শিক্ষা দিয়েছেন, যেভাবে জেনেসিসে বলা আছে, সেভাবে ইহুদীরা গোটা ইসরায়েল ভূ-খন্ড অধিকার না করলে নিষ্কৃতি সম্ভব হবে না। আরবদের অধিকারে থাকা এলাকা তাদের নিজেদের অধিকারে নিয়ে নেয়া ইহুদিদের জন্য ধর্মীয় দায়িত্ব- বলে গেছেন তিনি। কারন পবিত্র স্থান অপবিত্র থাকা অবস্থায় মেসায়াহর ফিরে আসা সম্ভব হবে না।
যেহেতু আরবরা অধিকাংশই মুসলমান, কাজেই মৌলবাদী ইহুদীরা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে মুসলিম বিশ্বের সাথে সর্বাত্নক যুদ্ধের ঝুকি নিতেও প্রস্তুত। কুক বাদী রাব্বাই এলিযা ওয়াল্ডম্যান যেমন বলেছেন, ইসরায়েল অশুভের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত,যার উপর গোটা বিশ্বের শান্তির সম্ভাবনা নির্ভরশীল(!!)।
এভাবেই তথাকথিত বিশ্ব শান্তির কথা বলে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল, আর অভিশপ্ত মৌলবাদ দিয়ে সেই ধ্বংসযজ্ঞকে বৈধতা দেবার অপচেষ্টায় লিপ্ত ইসরায়েল ও তার সহায়ক আমেরিকা। অথচ জেনেসিসের সেই 'প্রতিশ্রুত ভুমি' বা promised land এর অজুহাত বর্তমান সময়ে ধোপে টেকে না। সেই ভূমি বহু হাজার বছর আগের প্রেক্ষিতে বর্নিত।
কিন্তু এভাবে আর কত?? ফিলিস্তিনের জনগনের উপর যে বর্বরতা চলছে, সেটা বিশ্বের বাকি মানুষদের উপরও একসময় নেমে আসবে না তার নিশ্চয়তা কি? ইতোমধ্যে ইসরায়েলি মৌলবাদ যথেষ্ট ডানা মেলেছে,যার কড়াল থাবায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের অসহায় মানুষেরা। বিশ্বের মানুষের এই মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার এখনই সময়। আমি নিশ্চিত, সাধারন ইহুদিরাও সহিংসতা চায় না। কারন সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই উগ্রবাদ আর সহিংসতা পছন্দ করেন না।
কুরআনের ভাষায়, মহান আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।
" (সুরা মায়িদাহ:৫:৬৪)
মুক্ত হোক প্যালেস্টাইনের নিপীড়িত মানুষ আর বিশ্ব মানবতা....
রেফারেন্সঃ
*The Bible by Karan Armstrong
*View this link
*Wikipedia
*View this link
কৃতজ্ঞতাঃ 'আসিফ ভাই'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।