আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবলিক বাস [বিচিত্র পরিবহন]

নভেম্বর ১৬, ২০১২। নীলক্ষেত চৌরাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে আছি সময় দিবাগত রাত ১১ ঘটিকা। এই সময়টা রাস্তাঘাট ফাকা থাকে লোকাল, সিটিং, ডাইরেক্ট মোটামুটি সব ধরনের বাস ফাকা থাকে। অন্য দিনের তুলনায় পথের মোড়ে মোড়ে পুলিশের গাড়ি বেশি দেখা যাচ্ছে পুলিশ টহলও বেশি দেখা যাচ্ছে। শিবির জামাতের আতংকে অনেকেই ভীত।

দাড়িয়ে আশে পাশে দেখছি, পায়জামা পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত মানুষ ঘোরাফেরা করছে। হটাত পিছন থেকে তীক্ষ্ণ চিৎকার আল্লহুয়াকবার, দেখি এক মোল্লা কিছিমের লোক দৌড় দিলো কিছুটা অবাক হলাম আবার না মারামারি ধরনের কিছু হয়। না উনি চিৎকার দিয়ে মোটামুটি একটি বাসের তিন চার হাত দূর থেকে ঝাপিয়ে বাসে উঠলেন। অবাক না হবার কিছু নেই কারণ উনি ওঠার প্রায় পাঁচ ছয় মিনিট পরও বাসটা ফাকা ছিল এবং দাড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার অপেক্ষা করছিলো। বছর কয়েক আগে এক দিন বাসে উঠবো দাড়িয়ে আছি।

আমার সামনে এক বয়স্ক লোক উনিও বাসে উঠবে। কিছুক্ষণ পর বাস আসলো আসার পর ওই বৃদ্ধ বয়স্ক লোকটি বাসের দরজা ধরে দাড়িয়ে রইলো। সবাই অবাক কেও উনি না উঠলে উঠতে পারছে না, আমি ওনার পিছনে দাড়িয়ে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলছি। সবাই বেশ কৌতূহল নিয়ে উকি ঝুকি দিয়ে ওনাকে দেখার চেষ্টা করছে। কম করে পাঁচ মিনিট উনি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দোয়া কালাম পরলেন বিড়বিড় করে।

তার পর বাসে উঠলেন। এই ঘটনার পর সুবাহানাল্লাহ না বলে আর কেমনে বাসে উঠি। দেশে লড়াই চলছে নারী পুরুষ সমান অধিকার। নারীরা তাঁদের দাবী আদায়ে বেশ সচেতন। তবে মাঝে মাঝে আমার মনে হয় বেশ সচেতন না অত্তাধিক সচেতন।

বাসে ওঠা নামা করা সব সময়ই একটু ঝামেলা যুক্ত ব্যাপার। তাই বাসে ওঠার বিষয়ে আমি কিছু সতর্কতা অবলম্বন করি। প্রধান যে কাজটা করি তা হচ্ছে এমন জায়গা থেকে বাসে উঠি যেখানে বাস মোটামুটি ফাকা থাকে। এই কারনে আমাকে মাঝে মাঝে এক দেড় কিলো অতিক্রম করে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এটা করা সুধুমাত্র একটি ভালো আসনে বসে ঝামেলা মুক্ত ভাবে পথ অতিক্রম করা।

তবে আমার এই অতিসতর্কটা মূলক পদক্ষেপটি বর্তমানে বিরক্তি তে পরিবর্তন হচ্ছে। দেশের সচেতন নারী যারা বাসে চলাফেরা করে তাঁরা বাসে উঠে আর কোন আসন পায় না, সরাসরি এসে আমাকে বলে আপনি উঠে পিছনে বসেন। প্রথম দিকে আমি কিছুটা অবাক ও চিন্তিত ছিলাম বিষয়টা কি?? এরা কি অনুরোধ করছে নাকি আদেশ দিচ্ছে?? এরা কি জানে না যে স্থান থেকে এরা উঠেছে সেখান থেকে বাস মোটামুটি ভর্তি থাকে কাঙ্খিত আসন পাওয়া যায় না, নাকি এরা আমাদের দুই দেশ নেত্রীর খালাতো বোনের মামাত ভাইয়ের ফুপাত শালীর চাচার প্রথম স্ত্রীর দ্বিতীয় কন্যা?? প্রথম প্রথম খুব বিরক্ত হতাম আনুরোধ করলে তা বিবেচনা করা যায়। অনেক দিন আমি উঠে অন্য স্থানে বসেছি। কিন্তু কিছু কথার ধরন এমন শুনলে কোন উত্তর দেবার রুচি বোধ হয়না।

আমার ছোট ভাই অনেক দিন আগেই বলছিল মাথায় অনেক ব্যথা পাইছি বললাম কেমনে?? বলে ও বাসে করে আসছিলো তো এমন সময় কিছু তরুণী ওর সামনে দাড়ায় ছিল ও উঠে তাঁদের বসতে দেয় আর ও ওঠার সময় বাসের উপরে থাকে হাতলে জোরে বাড়ি খায়। তরুণীরা দীর্ঘ সময় ধরে হেসেছে কেও ধন্যবাদ বা দুঃখ প্রকাশ করে নি। আমি ওরে বললাম নারী পুরুষ সমান তোমার দরকারটা কি ছিল নিজে দাড়ায় অন্যরে বসতে দেওয়া??বেচারা করুন মুখে তাকিয়ে ছিল। আমি সব সময় এই নারী আর মোল্লা গোছের লোকজন ভয় পাই, কারণ এরা যেখানে যায় আজাইরা একটা সমস্যা সৃষ্টি করে। বাসে বসার সময় সব সময় আমি দেখে বসি আমার পাশের সিটে মোল্লা গোছের কেও আছে নাকি।

কারণ এরা থাকলেই সমস্যা। একদিন এই রকম এক মধ্য বয়সী মোল্লা আমার পাশে বসে পড়ে আমি তো চরম বিরক্ত। অন্য আসনে যাবার মতো অবস্থাও নাই। প্রথম কয়েক মিনিট উনি ভালই চুপচাপ থাকলেন তারপর শুরু হোল প্যাঁচাল। জনাব আপনার নাম কি? কোথায় যাচ্ছেন? কি করেন? কোথায় থাকেন?? আপনি কি নামাজ পড়েন?? নামাজ পড়া ফরজ নামাজ পড়বেন? আমার ব্যাগটা একটু ধরেন আমি ব্যাগ থেকে হাদিসের বই বের করবো।

অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নাই। অনেক বছর আগে একদিন সকালে বাসে উঠেছি তেজগাঁর দিকে যাবো। তখন পিঙ্ক সিটি নামে একটি সুন্দর বাস চলত। এই বাসটি সকাল ১০টা ১১ টার দিকে মোটামুটি খালি থাকতো। আমি উঠে ড্রাইভারের পিছনে তিন আসন যুক্ত সিটটিতে বসে পরলাম।

এই সিটের বিশিষ্ট হচ্ছে এতে মানুষ তেমন একটা বসে না। কারণ এই সিটের সামনে থেকে গরম ইঞ্জিনের ভাপ আসে। তো আমি উঠে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসেলাম। একটু পরে পাশ থেকে খিলখিল কিচির মিচির শব্দ অবাক হয়ে চোখ খুলে দেখি দুই পাশে অতি রূপসী দুই তরুণী বসে খিলখিল করছে। মাথায় হাত এইটা কি হইলো?? ভালো মতো পিছনে আসে পাশে বামের নির্ধারিত নারী আসন গুলাতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখি অনেক ফাকা তাহলে এরা আমার দুই পাশে কি মনে করে? উঠে অন্য জায়গায় বসব সেটা কেমন জানি চোখ লজ্জার ব্যাপার।

আসে পাশে কিছু পরিচিত মুখ আমাকে দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। উঠে অন্য কথাও বসলে আমাকে তাঁরা তাঁদের মূল্যবান প্রশ্ন ও বক্তব্য দ্বারা ক্ষতবিক্ষত করবে। যা হোক হবে আবার চোখ বন্ধ করে ঘুম দেবার চেষ্টা নিলাম। কিন্তু খিলখিল থামেনা একজন বলে এই নে চিপস খা আরেক জন বলে এই নে কোক খা। একজন ডান থেকে উকি দিয়ে খিলখিল করে আরেক জন বাম থেকে উকি দিয়ে বলে তারপর এইটা কি হইলো ওইটা কি হইলো।

যাই হোক ওরা তেমন ঝামেলা করেনি শুধু কোক দিয়ে ভিজিয়ে সরি বলেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.