আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমার প্রেমিকের নাম বলো, প্রমীলা

এটা আমার জন্য অনেক সুখকর যে, আমি এখন ব্লগ ও ফেইসবুক থেকে নিজেকে আসক্তিমুক্ত রাখতে পারছি। পরিবার ও পেশাগত জীবনের কর্মব্যস্ততা অনেক আনন্দের। লেখালেখি ছেড়ে দিচ্ছি। মুখবন্ধ মাঝে মাঝে বুকে ঢেউ ওঠে। চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে।

কারণ জানি না। এসব বেদনার উৎস খুঁজে পাই না। এ পোস্টের লেখাগুলো নিতান্তই 'রাফখাতা'র নতুনতম লেখা। বেশিরভাগই নিজের বা অন্যের পোস্টে কমেন্ট করতে গিয়ে লিখা হয়ে গেছে। প্রসূত অবস্থায় যতোখানি কচি ছিল, প্রায় সেভাবেই এখানে তুলে দিলাম।

ভবিষ্যতে এর কোনো স্থায়ী ঠাঁই হবে কিনা, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। যাঁরা আমার এ লেখাগুলোর উৎস, তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আসলে আমার মন ভালো নেই। Be the one I've been waiting for my whole life.... তুমি ছিলে সেই অমরাবতীর পাখি যাহার লাগিয়া একটি জীবন নদী তোমার অধরে তীব্র আলোর ক্ষুধা নীরব দহনে দুঃখী বনস্পতি ঘাসের শরীরে শিশিরের বেদনারা চাঁদের আলোয় মৃত ওষ্ঠেরা কাঁদে যে-ফুল ফুটিল শুধুই তোমার লাগি ক্ষয় হলো সে-ই নিষ্ঠুর সম্পাতে ২ সেপ্টেম্বর ২০১২ একটা ঘ্রাণ হঠাৎ হঠাৎ একটা অরিহ গন্ধ ভেসে আসে বাতাসের স্বননে; প্রথম তারুণ্যে আফরোজার কেশফুলে এমন পেলব একটা ঘ্রাণ ছিল; কলমিলতা আর ধুধুল্লার শরীরেও ছিল এমন অদ্ভুত কিছু ঘ্রাণ; এখনো কোনো কোনো নিঝুম দুপুরে বড্ড আচানক নাকের পর্দা ভেদ করে একগুচ্ছ সৌভিকঘ্রাণ মগজে ঢুকে পড়ে; অন্ধের মতো ঘ্রাণের উৎস খুঁজতে খুঁজতে কেবলই দিশেহারা হই; সে-রাতে ভৈরবের রেল-স্টেশনে নামতেই বহুকাল আগে হারিয়ে যাওয়া একজন মানুষ একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন করলো; ‘ভালো আছিস, সোনাপাখি?’ বলতেই কেঁদে উঠলো অহনা, ‘তোর ঘ্রাণ এখনো ভুলতে পারি না সোনা; ঘরের চারপাশ, বারান্দায় এখনো তোর ঘ্রাণ। আমাকে জ্বালায়, পোড়ায় তোর ঘ্রাণ।

আর পারি না, আমাকে একটু বাঁচতে দে না, পাখি!’ ১২ অক্টোবর ২০১২ তোমার জন্য সব কবিতারই কিছু মানে হবে এ ভেবে কখনো কবিতা লিখি নি সব ইশারায় সাড়া দেবে তুমি এমন করেও কখনো ভাবি নি যখন যেভাবে শব্দরা আসে ক্রোধ ও কান্না, প্রেম ও দ্রোহে ওভাবেই ওরা ঠাঁই করে নেয় আপন গুণ ও গন্ধ-আবহে যা কিছু লিখেছি প্রেমের জন্য হয়তো সবই তা নিরেট বর্জ্য অশ্রু ফেলো না, যেদিন বুঝবে তোমার জন্য এসব অর্ঘ্য। ১৬ অক্টোবর ২০১২ ঋণ তুমি চলে গেছো, সেই বেদনার অমৃত-খনি থেকে উঠে আসে চির-ফল্গুধারার কবিতারা একে একে তুমি চলে গেছো, চলে-যাওয়া পথে সোনা ফোটে প্রতিদিনই আমার সকল কবিতারা তাই তোমার কাছেই ঋণী। ১৭ অক্টোবর ২০১২ প্রমীলার সাথে আমার সম্পর্ক প্রমীলার সাথে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না, কোনোরূপ যৌনসম্পর্কও নয়। অথচ আমরা একে অপরকে সবচেয়ে বেশি বুঝতাম, বকতাম সবচেয়ে বেশি। বললাম, ‘তোকে কল করলেই ‘ওয়েটিং’ পাই, কার সাথে এতো কথা?’ অমনি সে মোবাইল সেটটা মেঝেয় আছড়ে গুঁড়ো করলো।

এটা অবশ্য ওর অভিমান ছিল; ছেলেমানুষি। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা বাসভ্রমণ শেষে কাশিয়ানিতে পা রাখলো প্রমীলা। ‘না বলে চলে গেলি?’ বলতেই সে ফিরতি বাসের টিকিট কাটলো। আমি তখন কাঁটাবনের রাস্তায় উদাস গড্ডলিকা। প্রমীলার ছায়া পাশে দাঁড়ালেই আমার হাড়গুলো টের পায়।

আমার কাঁধে ওর হাত, ‘চেয়ে দেখ, আমি কাঁদছি। ’ ঘুমের ভেতর ‘বুবু’ চিৎকারে আড়িয়াল বিলের ধানক্ষেত মাড়িয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠলে যে ছায়ামূর্তি আমার সামনে এসে নির্মলহাস্যে মধুর হাত বাড়িয়ে দেয়, সে প্রমীলা। আমি প্রমীলার শাসন-হুকুম ভালোবাসি। আমি হাসলেই প্রমীলার দুঃখ হয়, আমি হাসি না। আমি যদি একবেলা প্রমীলাকে না দেখি, জীবনের সব অর্থই অনর্থ হয়ে যায়।

আমি যদি একবেলা প্রমীলার সামনে না দাঁড়াই, সে ভাবে ওর কথা আজ একটুও ভাবি নি। প্রমীলাকে বলেছিলাম, ‘ভ্রূ প্লাক করিস না পাখি। এই যে পারলারে যাস, ওখানে কি ছেলেরাও থাকে না?’ প্রমীলা একটা ভয়ানক কাজ করেছিল- পুরোটা মাথা ন্যাড়া করে পবিত্র ভিক্ষু’র মতো সামনে এসে দাঁড়ালো- ওর চোখ ছিল বিশ্বস্ত ও নির্লিপ্ত, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর; পুলিশের হাতে ধরা-খাওয়া খুনের আসামির মতো আমি কাঁপছিলাম। প্রমীলা মাতৃস্থানীয়া নয়, সহোদরা নয়, প্রেমিকা অথবা বান্ধবী নয়। প্রমীলার সাথে কী আমার সম্পর্ক জানি না।

সকল অ-সম্পর্কের গভীরে তীব্র অস্তিত্বশীলা রমণীর নাম প্রমীলা, যে আমাকে সকল সম্পর্কের মতো এখনো নির্মোহ ভালোবাসে। ২৮ অক্টোবর ২০১২ হারিয়ে গেলে আপন নামের মাঝে কোথায় তুমি হারিয়ে গেলে আপন নামের মাঝে তোমার কথা আজও ভাবি আমার সকল কাজে এই যদি হয় আর এসো না ছায়ার মতো রোজ সাঁঝের তারা আমার হয়ে করবে তোমার খোঁজ থাক তবে আর আমার জন্য দুঃখ করো না কেউ আমার কথার জবাব দিবে পদ্মানদীর ঢেউ ২ নভেম্বর ২০১২ তোমার প্রেমিকের নাম বলো, প্রমীলা যার সাথে প্রতিদিন গোপনে দেখা করো, অবলীলায় যে তোমার হাত ধরে মনুষ্যভিড়ে; অথবা চিলের মতো ছো মেরে কেড়ে নেয় তোমার হৃৎপিণ্ড, যার ধ্যানে একদিনও চোখ খুলে দেখলে না তোমার পাদপদ্মে আত্মাহুতি দিয়ে গেলো ঘোরের সন্ন্যাসী আমাকে তার নাম বলো, প্রমীলা, সেই মহান পুরুষের বিরাট ছায়ায় একবার নিজেকে দেখি। ৭ নভেম্বর ২০১২ সম্প্রদান কারক আলেয়া আপুর পা ছুঁয়ে যেদিন বললে, ‘আমাকে তোমার সঙ্গিনী করো, দিদি’, আপু হাসলেন। তারপর তোমার চোখে কালোফ্রেম চশমা, লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরনে, বুকের কাছে বই- একদিন আলেয়া আপুকে ছাড়িয়ে হয়ে উঠলে ‘বেগম রোকেয়া’। তোমার ছুঁচো প্রেমিক সরদার মাখন সাত হালি সার্থক প্রেম শেষে বিয়ে করেছে বেপারি বাড়ির নায়লাকে।

তাঁরা গাড়ি চড়ে, এরোপ্লেনে দেশ-বিদেশে ঘোরে। ক্লাসের সুন্দরী মেয়েরা সুদর্শন বর পেয়ে উড়ে যায় সীমান্ত পেরিয়ে। আমাদের অলাস্যময়ী দরিদ্র বুবুদের কানাখুড়াও যখন জোটে না, তাঁরা চিরকেলে শিক্ষিকা-ব্রতেই অবশেষে যৌবন সম্প্রদান করেন। ৭ নভেম্বর ২০১২ আমার কোনো দুঃখ নাই আমার কোনো দুঃখ নাই। দুঃখের সাথে সখ্য আছে, সে হয় আমার আপন ভাই।

১৫ নভেম্বর ২০১২ যে আবেগ তুমি বোঝো না আবেগ তোমাকে কামড়ে-খাবলে খায় তুমি বোঝো না তুমি ঘুমের ভেতর কাঁদো, তুমি বোঝো না যখন তুমি হাসো, তোমার রুধিরে রোদনের বেদনারা সুনসান বয়ে চলে, তুমি বোঝো না তুমি বোঝো না, বোঝো না, বোঝো না কতোখানি তুমি তোমাকে কাঁদিয়েছিলে আকাশে তুলিয়া হাত দহনে তোমার বুক পুড়ে গেলো সেই বুকে আজও হঠাৎ হঠাৎ জ্বলে ওঠে চিৎকার তুমি বোঝো না তুমি বোঝো না তোমার অনেক গহনে গভীর গোপনে দগদগে এক ক্ষত জ্বালায় তোমাকে, কুরে কুরে খায় নিঃশেষে অবিরত উনবিংশতি শোনো, তোমার অশ্রু, তোমার মনকে নিভৃতে, অজ্ঞাতে করিতেছে সংহত ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.