অস্ত্রোপচারের পর রোগীর শরীরে সুই রেখে দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হওয়া চিকিৎসকের মুক্তির দাবিতে গতকাল বুধবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। মো. সুরমান আলী নামের ওই চিকিৎসক গতকাল তৃতীয় দফায় আদালতে জামিনের আবেদন করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানি হবে।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগত চিকিৎসাসেবা (প্রাইভেট প্র্যাকটিস) বন্ধ রাখার কর্মসূচি ঘোষণা করলেও কর্মক্ষেত্রে সেবাদান অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা অনির্দিষ্টকালের এই কর্মসূচি ঘোষণা করে।
কিন্তু হাসপাতালে রোগী রেখে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে প্রবর্তক মোড়ে প্রায় এক ঘণ্টা তাঁরা মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মানববন্ধন ও সমাবেশে প্রায় ২০০ চিকিৎসক অংশ নেন। তাঁদের বেশির ভাগই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে মৌন মিছিল নিয়ে তাঁরা প্রবর্তক মোড়ে কর্মসূচিতে যোগ দেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের মুজিবুল হক খান, প্রসূতি বিভাগের প্রধান শাহানারা চৌধুরী, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের নাসির উদ্দিন মাহমুদ, সার্জন অব অ্যানেসথেশিয়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহমেদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন ভূঁইয়া ও বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মো. শরিফ।
কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতালে গিয়ে এসব চিকিৎসকসহ অনেক চিকিৎসকের কক্ষ তালাবদ্ধ দেখা গেছে। মেডিসিন বিভাগের এম এ হাসান, প্রসূতি বিভাগের শামিমা সিদ্দিকার পাশাপাশি হাসপাতালের অনেক জুনিয়র চিকিৎসকও কর্মসূচিতে অংশ নেন।
মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন জানান, সকাল থেকে কোনো বড় চিকিৎসক তাঁর রোগীকে দেখতে আসেননি।
হাসপাতালে রোগী রেখে কর্মসূচি পালন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএমএ সভাপতি মুজিবুল হক বলেন, ‘কর্মসূচিতে সরকারি চিকিৎসকের চেয়ে বেসরকারি চিকিৎসক বেশি ছিলেন। আমরা ২০-২৫ মিনিট হাসপাতালের বাইরে ছিলাম।
’ তিনি বলেন, ‘আমরা কর্মস্থলে চিকিৎসা সেবা দেব। ’
সমাবেশে বক্তারা সুরমান আলীর মুক্তি দাবির পাশাপাশি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাঁরা মামলাটি আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে তদন্ত করানোরও দাবি জানান।
চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় গত সোমবার চট্টগ্রামের একটি আদালত চিকিৎসক সুরমান আলীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিএমএ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের ঘোষণা দেন।
পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার এবং কোনো রোগী না দেখার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে চিকিৎসকদের এই কর্মসূচিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম। এক বিবৃতিতে বলা হয়, চিকিৎসকের মুক্তির দাবিতে রোগীদের জিম্মি করার ঘটনা হতাশাজনক। এই দাবি প্রত্যাহার করে আদালত ও আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত।
এদিকে সুরমান আলীর জামিন চেয়ে গতকাল আবারও তাঁর পক্ষে আইনজীবী চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এস এম মুজিবুর রহমানের আদালতে আবেদন করেছেন।
আদালত আজ বৃহস্পতিবার এই আবেদনের ওপর শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন। বর্তমানে কারাগারে আটক সুরমান আলী এ নিয়ে তৃতীয় দফায় জামিনের আবেদন করলেন। এর আগে গত সোমবার সুরমান আলী চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নূরে আলম ভূঁইয়ার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। বিচারক তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ওই দিন বিকেলে তাঁর পক্ষে দ্বিতীয় দফা জামিনের আবেদন করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।