আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাঙ্গর রাজ্যে স্বাগতম

জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো ... এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাকো হাঙ্গর বা SHARK গহিন সমুদ্রের এক ভয়াল দানব। এরা চমৎকার বুদ্ধিমান এবং হিংস্র শিকারি। এদের ঘিরে এখনও অনেক রহস্য জড়িয়ে আছে। সমুদ্রে এরা নিমিষে ক্ষিপ্রগতিতে এসে দুর্দান্তভাবে শিকার কে আক্রমন করে কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই, তাই সমুদ্রের সাথে সম্পৃক্ত স্থলচর-জলচর সব প্রানির কাছে হাঙ্গর মানে এক ত্রাস। পৃথিবীর প্রায় সকল সাগর-মহাসাগরে এদের অস্তিত্ব থাকলেও মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং অর্ধ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এদের প্রাচুর্য দেখা যায়।

কয়েকটি প্রজাতি সমুদ্র উপকূলে বসবাস করলেও অধিকাংশ গভীর সমুদ্রের উপরের তলে বসবাস করে। Naturkunde Burlin জাদুঘর এ রাখা একটি প্রাচীন হাঙ্গরের জীবাশ্ম গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী কিছু প্রজাতি আলোদায়ক অর্থাৎ আলো বিচ্ছুরণ করতে পারে। ধ্বংস এবং পরজীবীর হাত থেকে রক্ষার জন্য এদের দেহত্বকীয় ডেন্টিক্ল রয়েছে। এই ডেন্টিক্লের কারণে এদের প্রবাহী গতিবিদ্যায়ও প্রভূত সহায়তা হয়ে থাকে। এছাড়া তাদের প্রতিস্থাপনযোগ্য দাঁত রয়েছে।

দাঁতগুলো খুব সুন্দর এবং প্রাচীন হাঙ্গরের এই একটি বৈশিষ্ট্যই তাদের মধ্যে রয়েছে। এদের প্রজাতিতে ব্যাপক তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। এক হাতের সমান আকারের পিগমি হাঙ্গর রয়েছে, যেমন: Euprotomicrus bispinatus নামক গভীর সমুদ্রের হাঙ্গরের দৈর্ঘ্য মাত্র ২২ সেমি তথা ৯ ইঞ্চি। আবার তিমি হাঙ্গর হল বৃহত্তম মাছ যারা প্রায় ১২ মিটারের (৩৯ ফিট) মত লম্বা হতে পারে। যেমন: Rhincodon typus নামক প্রজাতিটি।

Carcharhinus leucas প্রজাতিটি ষাঁড় হাঙ্গর হিসেবে পরিচিত। এই ষাঁড় হাঙ্গরই একমাত্র লবণাক্ত এবং মিঠা - উভয় পানিতে এমনকি ডেল্টার ভিতরেও সাঁতার কাটতে পারে। হাঙ্গর জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের শুধু মাত্র হাঙ্গর ও বিবর্তন সম্পর্কে অনেক ঘটনা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সাহায্য করেছে. তারা আমাদের গ্রহে প্রথম দেখা গেছে প্রায় 455 মিলিয়ন বছর আগে। বিশ্বাস করা হয়. Doliodus Problematicus নাম দেওয়া জীবাশ্ম যা প্রাচীনতম আবিষ্কৃত হাঙ্গরের জীবাশ্ম বলে মনে করা হয়. বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাসঃ জগৎ/রাজ্য:Animalia পর্ব: Chordata শ্রেণী:Chondrichthyes উপ-শ্রেণী: Elasmobranchii মহাবর্গ: Selachimorpha হাঙ্গরের শারীরিক গঠনঃ হাঙ্গর হাড়বিশিষ্ট মাছ এবং ভূমিস্থিত মেরুদণ্ডী প্রাণী থেকে হাঙ্গরের কঙ্কাল অনেক পৃথক ধরণের। হাঙ্গর এবং অন্যান্য তরুণাস্থিবিশিষ্ট মাছের (চাঁদা মাছ এবং শংকর মাছ) কঙ্কাল রাবারের মতো তরুণাস্থি দ্বারা গঠিত।

তরুণাস্থি এক ধরণের কলা যা হাড়ের থেকে অনেক হালকা এবং নমনীয়। চাঁদা এবং শংকর মাছের মতো হাঙ্গরের চোয়াল ক্রেনিয়ামের সাথে সংযুক্ত নয়। চোয়ালের সমতল পৃষ্ঠ মেরুদণ্ডী এবং গ্রিল আর্চের মতো যার অতিরিক্ত অবলম্বন ও শক্তির দরকার হয়। কারণ শারীরিক পীড়নের অনেকাংশ বহন করতে হয় এই চোয়ালকে। চোয়ালের এই পৃষ্ঠে এক ধরণের ষড়ভূজীয় ক্ষুদ্র তলের স্তর রয়েছে যার নাম "টেসেরি"।

এটি মূলত ক্যালসিয়াম লবণের কেলাসিত ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত একটি মোজাইকের মত। এই মোজাইক এই অঞ্চলে বিশেষ শক্তি যুগিয়ে থাকে যা হাড়বিশিষ্ট মাছের চেয়ে বেশি। সাধারণত হাঙ্গরের চোয়ালে টেসেরির কেবল একটি স্তর থাকে। কিন্তু বৃহৎ নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের ক্ষেত্রে (যেমন: ষাঁড় হাঙ্গর, বাঘ হাঙ্গর এবং বৃহৎ সাদা হাঙ্গর) শরীরের আকারের উপর নির্ভর করে দুই বা ততোধিক স্তর থাকতে পারে। একটি বৃহৎ সাদা হাঙ্গরের চোয়ালে এমনকি পাঁচটি স্তর পাওয়া গিয়েছিল।

এদের রস্ট্রামের (ঠোঁটের) তরুণাস্থি শক্তির প্রভাব শোষণের জন্য অনেকটা স্পঞ্জি এবং নমনীয় হতে পারে। এদের ডানার কঙ্কাল অনেক দীর্ঘ এবং এক ধরণের নরম ও অবিচ্ছিন্ন রশ্মি দ্বারা ঠেস দেয়া থাকে। এই রশ্মির নাম সেরাটোট্রিকিয়া। চুল এবং পালকের মধ্যে শৃঙ্গের মত কঠিন কেরাটিন সজ্জিত করে গঠিত স্থিতিস্থাপকপ্রোটিনের ফিলামেন্ট থাকে। পুরুষ হাঙ্গরের পেলভিক ডানার ভিতরের অংশ পরিবর্তিত হয়ে এক জোড়া সিগার বা সসেজে পরিণত হয়েছে।

এরাই জননাঙ্গ গঠন করে যার অপর নাম "ক্ল্যাসপার"। ক্ল্যাসপারের মাধ্যমেই অন্তর্নিষেক সাধিত হয়। হাঙ্গরের প্রকারভেদঃ অনেক ধরনের হাঙ্গর আছে তবে তাদের মধ্যে নিম্নে দেয়া হাঙ্গর গুলোই অন্যতম *হুয়াইট শার্ক হোয়াইট বলা হলেও গ্রেইট হোয়াইট কিন্তু পুরপুরি সাদা নয়। এর পেটের দিকটি সাদা এবং পিঠের দিকটি গাড় ধূসর রঙের হয়ে থাকে। ‘মাইন্ডলেস কিলিং মেশিন’ নামে পরিচিত গ্রেইট হোয়াইট শার্ক সম্পর্কে প্রায় সবাই জানে।

এটি মানুষের প্রতি খুবই আগ্রহী এবং কামড় দিয়ে পরখ করে দেখে এটিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহন করা যায় কিনা। মানুষ এবং নৌযানে আক্রমন করার কুখ্যাতি রয়েছে এর অনেক। যদিও অনেক গবেষকরা বলে থাকেন পানির নিচ থেকে সার্ফ বোর্ডকে দেখতে সীল মাছের মত দেখায় বিধায় এটি ভুল করে সার্ফ বোর্ড আক্রমন করে। তবে মানুষের চাইতে সীল মাছের চর্বিযুক্ত নরম মাংসই এদের বেশি পছন্দ। এটি এক কামড়ে ৯ থেকে ১৪ কেজি মাংস মুখে পুরে ফেলতে পারে।

৫ কিলোমিটার দূর থেকে সামান্য রক্তের আভাস পেলে এটি ছুটে আসতে পারে। আপনারা যারা ‘Jaws’ অথবা ‘Deep Blue Sea’ এর মত হাঙ্গরের মুভি দেখেছেন তারা এর আক্রমন এবং ধংস ক্ষমতা সম্পর্কে সহজেই ধারনা করতে পারেন। মুভিতে যতটুকু দেখানো হয়েছে বাস্তবে হাঙ্গর কিন্তু এর চাইতে কম বিপজ্জনক নয়। *টাইগার শার্ক বাঘ হাঙ্গর বা টাইগার শার্কের গায়ে উলম্ব ডোরাকাটা দাগ আছে। আর এ কারণেই এ হাঙ্গরের নাম হয়েছে টাইগার শার্ক বা বাঘ হাঙ্গর।

তবে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে দাগগুলো মিলিয়ে যায় । মানুষখেকো হিসাবে হোয়াইট শার্কের পরেই টাইগার শার্কের অবস্থান । নির্বিচার খাদক হিসাবে এর পরিচিতি রয়েছে । ময়লা আবর্জনা খেতেও ভালোবাসে । তাই একে বলা হয় – “সমুদ্রের ময়লা ফেলা ঝুড়ি” ।

o এর চোয়াল এত শক্ত যে কচ্ছপের খোলস ভেঙে ফেলতে পারে । বাঘ হাঙ্গর ঘন্টায় ২০ মাইল এবং একদিনে ৫০ মাইল পর্যন্ত সাঁতার কাটতে পারে। এরা দিনের বেলায় সমুদ্রের গভীরে আর রাতে অগভীর সমুদ্রে বিচরণ করে। এরা নিশাচর প্রাণী। এটি প্রায় ১১-২৪(সর্বোচ্চ) ফিট পর্যন্ত লম্বা হয় এবং ওজন প্রায় ৩৮৫-৬৫০ কেজি ।

এদের প্রধান খাবার সিল, সী লায়ন, অক্টোপাস, স্কুইড, ছোট হোয়েল, সাপ, কচ্ছপ, পাখি ইত্যাদি। *ষাঁড় হাঙ্গর বা বুল শার্ক এটি মধ্যম আকৃতির হাঙর। শারিরীক গঠনের জন্য এ হাঙ্গরকে সহজেই চেনা যায়। এ হাঙ্গর অন্যান্য হাঙ্গরের তুলনায় চওড়ার চেয়ে লম্বা বেশি। শরীরের উপরের অংশের রং ধূসর, নীচের অংশ হালকা সাদা।

পৃষ্ঠদেশে দুইটি পাখনা রয়েছে, যার প্রথমটি দ্বিতীয়টির চেয়ে বড়। পুরুষ হাঙ্গর প্রায় ৭ ফুট লম্বা ও ৯০ কেজি ওজন হয়ে থাকে। স্ত্রী হাঙ্গর সাধারণত ১১.৪ ফুট লম্বা ও গড়ে ২৩০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। ষাঁড় হাঙ্গর সাধারণত সাগর বা নদী তীরবর্তী এলাকায় যেখানে ঘনবসতি থাকে, সেখানে থাকতে পছন্দ করে এবং মানুষকে আক্রমণ করার সুখ্যাতি তো আছেই। এ কারনে অনেকে একে সবচেয়ে বিপদজনক হাঙর হিসাবে বিবেচনা করে ।

এদের প্রধান খাবার মাছ, ডলফিন, সাপ, পাখি ইত্যাদি । *ওশানিক হোয়াইটটিপ হোয়াইটটিপ সাগরতলের বড় প্রানীগুলোর মধ্যে একটি। যদিও এটি মানুষকে আক্রমন করার ইতিহাস খুব একটা নেই। যখন কোন যুদ্ধের নৌযান শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ডুবে যায়, তখন গভীর পানিতে থাকা এই হাঙ্গর অনেক সময়। যোদ্ধাদের শত্রু হয়ে ওঠে।

এটি যখন শিকার ধরে তখন অন্য কোন দিকে খেয়াল থাকে না। এই জন্যই মূলত একে বিপজ্জনক হাঙ্গর এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। *শর্টফিন ম্যাকাওঃ সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন এই হাঙ্গর অনেক সময় মাছ ধরার নৌকা আক্রমন করে থাকে। এর এক কামড়ে একটি নৌকা যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাতে এটি ডুবে যেতে ২-৩ মিনিট সময় লাগে। এই জন্য শর্টফিন ম্যাকাও জেলেদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক হাঙ্গর।

অনেক সময় জেলেরাও এর জন্য বিপজ্জনক। ম্যাকাও যদি কখনো বর্শিতে আটকা পড়ে তখন এটি খুবই আক্রমনাত্নক হয়ে ওঠে। এটি সাধারনত গভীর পানিতে বাস করে। আর তাই তীরে সাঁতার কাটা সাঁতারুদের চাইতে জেলে অথবা ডুবুরিদের এর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেশি থাকে। আজ এ পর্যন্তই...সবাই ভাল থাকবেন...আশা করি পরবর্তীতে আরও অন্য কিছু সম্পর্কে জানাতেপারবো।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.