আনাড়ী রন্ধন শিল্পীর ব্লগ B-)। ব্লগের বাজে-মানহীন লেখাগুলোর মাস্টার পিস দেখতে চাইলে এই ব্লগারের পোষ্ট গুলো পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না। B-)
আম্মা নরমালি আমার সাথে ঘুমাতে আসলে এক চিৎকার দিয়ে কোন মতে তাড়িয়ে দিই। বলি আামার সাথে থাকতে হবে না, তুমি তোমার জায়গায় যাও ইত্যাদি ইত্যাদি।
ঘটনার দিন আম্মা আমার বিছানায় শুলে আর কিছু বলিনি বরং বললাম এইখানে ঘুমাইলে তোমার কাঁথা বালিশ নিয়া আসো। বলার সাথে সাথেই দেখি কাঁথা নিয়ে এসে শুয়ে পড়লেন। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। মোবাইলটা রাখলাম বালিশের ডানপাশে, যে পাশে জানালা। সব সময় অবশ্য ডানপাশে রাখি না।
পাঁচতলায় বাসা বলে কখনো ঘুমানোর সময় জানালা বা বারান্দার দরজা লাগানোর কথা চিন্তাও করিনা আমরা।
প্রায় ফজরের দিকে আম্মা চোর চোর বলে চিৎকার করে উঠলেন। কিছুদিন যাবত আম্মা অসুস্থ। ভাবলাম সেকারনেই ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে চিৎকার করে উঠেছেন। আমিও লাফিয়ে উঠে বললাম কই চোর, তুমি স্বপ্ন দেখছো (পাঁচ তলা দিয়ে যে চোর আসবে আমি ভাবতেই পারিনি) আম্মা বলেন জানালা দিয়ে হাত ঢুকাইসে!
আম্মা আর আমি মিলে ভাইয়াকে ডাকতে শুরু করলাম।
দেখি চিৎকার করে ডাকলেও ভাইয়া বা আব্বা কেউ কোন সাড়া দিচ্ছেন না। এক পর্যায়ে ভয়ে না কি কারনে যেনো আমার গলা দিয়ে ঠিক মতন শব্দ বের হচ্ছিলোনা। আম্মাতো ভয় পেয়ে গেলেন। কিছুক্দন পরে দেখি আব্বা-ভাইয়া দুজনেই আসলেন। ততক্ষন কি আর চোর থাকে! ভাবলাম যাক কিছু তো নিতে পারেনি।
এর মাঝেই আজান দিয়ে দিলো। নামাজ পড়ে কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের জন্যে বসলাম। এর মাঝে ভাবলাম মোবাইলটা দেখি। বালিশ তুলে দেখি....মোবাইল নেই। বুঝে গেলাম যা হওয়া হয়ে গেছে!!
আমার মাথার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে পরে পায়ের কাছের জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে আরো কিছুর আশায় আর তখন ই আম্মা দেখেছেন।
আম্মা নামাজে দাড়িয়েছেন, কিছুক্ষন পরে শুনি আশেপাশে থেকে চোর চোর বলে চিৎকার! তার মানে আরেক বাসায় হানা দিয়েছে আর তারাও টের পেয়েগেছে। পরে শুনি শুধু আমাদের বাসায়ই না ঐরাতে আরো অনেক বাসায় হানা দিয়েছে। আমাদের ঠিক নিচের ফ্ল্যাট থেকে মোবাইল, পাশের নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ের লেবারদের তিনটা মোবাইল, এক লেবার নাকি আগের দিন বাড়ি থেকে এসেছে তার কাপড়ের ব্যাগ ধরেই নিয়ে গেছে। একই সময় আশে-পাশের অন্যান্য বিল্ডিং থেকেও অনেক কিছু নিয়েছে।
মোবাইলটা কেনার বেশী অর্ধেক টাকা ছিলো আমার।
আব্বার অফিস থেকে স্কলারশিপের টাকা দিয়ে কেনা। বেশ খারাপ লেগেছে মোবাইলটার জন্যে। সবচেয়ে বেশী খারাপ এবং ভয় লাগছে মেমোরি কার্ডটার জন্যে। অনেক ছবি, অনেক স্মৃতি ছিলো ওটাতে।
সকালে আম্মাকে বলি ভাগ্যিস মোবাইল নিছে, গলায়-কানে হাত দিয়ে যে চেন খুজে নাই।
আম্মা বলেন হাত দেখ ঠিকই দিছে, তুই টের পাস নাই। আম্মার কথা শুনে ভয়ে তখনই কান্না শুরু করে দিলাম, চোর গলায় হাত দিছে ভেবে!
পাশের বিল্ডিং থেকে যখন চোর চোর চিৎকার শুনলাম তখন ভাবলাম আসলে আমাদের চিৎকার শুনে দূরে কোথাও যায়নি। জানালার নিচেই সানসেটে হয়ত বসে পড়েছে, সুযোগ বুঝে সরেছে।
পরে বললাম একটা লাঠি-টাঠি নিয়ে জানালা দিয়ে খোঁচা দিয়ে দেখলে হয়ত ঠিকই পাওয়া যেতো।
চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে আরকি।
মোরাল অব দ্যা স্টোরি: জানালার পাশে যদি চোর দেখেন আর টের পান, আশে পাশেই খুজে দেখবেন। কারন সাথে সাথে চোর পালিয়ে যায় না।
কাল বাসে আশে পাশে কার যেনো মোবাইলের নকিয়া রিং টোন বেজে উঠলে মনে হলো আমার ফোন বাজছে, পরক্ষনেই মনে পড়লো আমার ফোন তো.....
ঘুমাতে গেলে মনে হয় মোবাইলটা কই, অ্যালার্ম দিয়ে রাখি.... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।