গভীরে যেতে চাই, অনেক গভীরে, যেখানে সুন্দর একটা মন থাকে
একজন লেখক যখন তার লেখায় বিভিন্ন চরিত্র উপস্থাপন করেন তখন তাকে ঐ চরিত্রের মানুষ গুলোর মধ্যে ঢুকে যেতে হয়, না হলে চরিত্র গুলো সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা যায় না। আমাদের হুমায়ুন আহমেদ কিন্তু এক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। হিমু, মিসির আলী, বাকের ভাই, কিংবা ভিক্ষুক জমির আলীর চরিত্র চিত্রনের মাধ্যমে তিনি তার প্রমাণ রেখেছেন। আমার কাছে তার লেখাগুলো পড়ে যা মনে হয়েছে- তিনি মানুষের কিছু অব্যাক্ত কথা ও কাজ (যা সকল মানুষের মধ্যে বিরাজমান) বিভিন্ন চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে বলাতে ও করাতে চেষ্টা করেছেন অত্যন্ত নিবিড় ভাবে। যা বলা বা করার সাহস সে মানুষটির কোন দিনই হয়নি চাকর/চাকরানীরা সাধারনত তাদের মনিবের সামনে উচিত কথা বলার সুযোগ পায়না অথবা মনিব অন্যায় করলে তার প্রতিবাদ করা যায় না কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের গল্প, নাটক, উপন্যাস বা সিনেমায় তিনি সে সুযোগ করে দিয়েছেন।
নির্ভয়ে কিছু বলার স্বাধীনতা কে ক'জন কাকে বলতে দিয়েছে ? সেটা গল্প, নাটক, উপন্যাস বা সিনেমাতেই হোক না কেন ? অসম্ভব জনপ্র্রিয় এ মানুষটি আজ আমাদের সামনে নেই ঠিক, কিন্তু আছে তার সৃষ্টকর্ম, যা যুগ যুগ ধরে বহমান থাকবে।
কোন কিছু বলা বা করার এই যে অবাধ স্বাধীনতা, তা আমরা তার বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে দেখতে পাই। যে স্বাধীনতা অনেক লেখক তার লেখায় বা নাটকে এমন করে দিতে পারেননি। একজন লেখক কখন মানুষের মনিকোঠায় স্থান করে নেয়, যখন তিনি তার বিভিন্ন চরিত্র সৃষ্টি করতে গিয়ে সেই চরিত্রের মধ্যে নিজেকে বিলিন করে দেন এবং চরিত্রটি সফলভাবে উপস্থাপন করতে সমর্থ হন। এখানে একটি কথা না বললে নয়, তার লেখায় তিনি গল্পের নায়ক বা নায়িকাকে যতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন, ঠিক পার্শ্ব চরিত্র গুলোকেও তিনি সমভাবে উঠিয়ে এনেছেন।
আমার প্রথম কোন গল্পের বই কেনা
আমি তখন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে পড়ি। ময়মনসিংহ মুসলিম ইনৃস্টিটিউটের সামনে বই মেলা। অবশ্য মেলাটি হুমায়ুন আহমেদ এর আগমন উপলক্ষেই। সাল টা সম্ভবত ১৯৯১ , তিনি তার মাকে সাথে নিয়ে ময়মনসিংহ এসেছেন। মেলায় তার আগমনের খবর শুনে তরুণ ছাত্র/ছাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।
ভিড় ঠেলে আমিও মেলায় ঢুকলাম এবং দেখলাম, তিনি অটোগ্রাফ দিচ্ছেন বইয়ের ভেতর। লোভ সামলাতে পারলাম না, কিনলাম তার "প্রথম প্রহর" বইটি। যথারীতি তিনি অটোগ্রাফও দিলেন। আমি তো মহাখুশি। সেটাই আমার জীবনে, পাঠ্যবইয়ের বাইরে কোন বই কেনা।
তারপর একসময় ময়মনসিংহ টাউন হলে নিয়ে যাওয়া হলো তাকে। তার কথা শুনবো বলে আমিও গেলাম তার পিছু পিছু। হাতে সময় কম থাকায় আর দেরি করলেন না,মাইকটি নিজের হাতে তুলে নিলেন। অত্যন্ত সহজ ও সরল ভাষায় তার জীবনের বিভিন্ন ক্ষৃতির কথা বলতে লাগলেন, পাশের চেয়ারটিতে ওনার মা আয়শা ফয়েজ গভীর মনোযোগ সহকারে ছেলের বক্তব্য শুনছিলেন।
স্কুল জীবনে তার ন নাটকই মিস করতাম না।
মনোযোগ সহকারে দেখতাম। দারুণ লাগতো । হুমায়ুন আহমেদের নাটক মানেই গতানুগতিক নয়, নতুন কিছু। আর এ কারনে প্রচুর দর্শক তার নাটক উপভোগ করতেন। আমার কাছে যা মনে হয়েছে, তিনি তার নাটক, গল্পে মানুষের ভেতরের মানুষটিকে টেনে বের করার চেষ্টা করেছেন।
প্রত্যেক মানুষেরই ভাল ও মন্দ দুটি দিক থাকে। তিনি সেখানেই নাড়া দিয়েছেন।
এ রকম বিখ্যাত একজন মানুষকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার নেই। তবুও, আমি আমার মত করে লিখলাম।
তার জন্মদিনের একদিন পর হলেও, আমি আমার প্রিয় মানুষটিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।