আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্যাস যাবে সরকারি দলের চিফ হুইপ আব্দুস শহীদের বাড়ি, খরচ দেবে জালালাবাদ ।

আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত বিধি লঙ্ঘন করে আট কিলোমিটার দীর্ঘ একটি গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের ব্যয় বহন করছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। কারণ, ওই পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস যাবে জাতীয় সংসদের সরকারি দলের চিফ হুইপ আব্দুস শহীদের গ্রামের বাড়িতে। কোম্পানির বিধি অনুযায়ী, জালালাবাদের গ্যাস-সংযোগ পেতে নতুন পাইপলাইন বসানোর দরকার হলে তার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করতে হয় সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই বিধি লঙ্ঘন করেছে কোম্পানিটি। চিফ হুইপের একটি অনানুষ্ঠানিক চাহিদাপত্রে (ডিও লেটার) করা আবদার মেটাতে গিয়ে কোম্পানিকে ওই বিধি লঙ্ঘন ও প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ টাকার আর্থিক দায় মেনে নিতে হচ্ছে। চিফ হুইপের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার গ্রামে। জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির বিদ্যমান লাইন থেকে ওই গ্রাম পর্যন্ত আট কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন স্থাপনে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। পাইপলাইনটি কমলগঞ্জের দেবীপুর, সিদ্ধেশ্বরপুর, রহিমপুর হয়ে মুন্সিবাজারে চিফ হুইপের বাড়িতে গিয়ে শেষ হবে।

কোম্পানির করা মাঠ নকশা (লে-আউট ড্রয়িং) অনুযায়ী, কমলগঞ্জের আদমপুরে জালালাবাদ গ্যাসের সাবস্টেশন থেকে মুন্সিবাজার গ্রাম পর্যন্ত পাইপলাইন বসাতে হবে। সরেজমিনে গিয়ে ওই সব এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটারে খুব বেশি জনবসতি চোখে পড়েনি। যেসব স্থানে জনবসতি আছে, সেখানে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই গ্যাসলাইন সম্পর্কে অনেকে একেবারেই কিছু জানেন না। যাঁরা জানেন, তাঁরাও চিফ হুইপের বাড়িতে সংযোগ দেওয়ার জন্যই লাইনটি করা হচ্ছে বলে জানেন। তবে চিফ হুইপের দেওয়া চাহিদাপত্রে ওই এলাকার মানুষের জন্য গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু সমস্যা হয়েছে দুটি। প্রথমত, পাইপলাইনটি শেষ হবে চিফ হুইপের বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে। দ্বিতীয়ত, আট কিলোমিটার পথে গ্যাসের এত গ্রাহক নেই, যাতে কোনো একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সেখানে টাকা খরচ করে তা তুলে আনতে পারবে। কোম্পানি সূত্র জানায়, চিফ হুইপের চাহিদাপত্র পাওয়ার পর কোম্পানির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে পাইপলাইনটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, আট কিলোমিটার দীর্ঘ ওই পাইপলাইন স্থাপন করা হলে ৫০-৬০ জন আবাসিক গ্রাহক, চার-পাঁচজন বাণিজ্যিক গ্রাহক এবং একটি-দুটি কুটিরশিল্প গ্যাস-সংযোগের আওতায় আসতে পারে।

ফলে পাইপলাইনটির মাধ্যমে গ্যাস-সংযোগের আওতা বাড়ানো লাভজনক হবে না। তাই এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যয়ভার গ্রাহকের বহন করার বিধি পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করা উচিত। কিন্তু ওই প্রতিবেদন উপেক্ষা করে আড়াই মাসের মাথায় আরেকটি কমিটিকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পাইপলাইনটি স্থাপিত হলে প্রায় ২০০ আবাসিক ও ২০ জন বাণিজ্যিক গ্রাহক সংযোগের আওতায় আসবেন। অদূর ভবিষ্যতে গ্রাহকসংখ্যা আরও বাড়বে।

গত ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ৩০৯তম সভায় প্রতিবেদনটি গ্রহণ করা হয় এবং প্রতিবছর গ্রাহকসংখ্যা পাঁচ শতাংশ বাড়বে ধরে নিয়ে আর্থিক বিশ্লেষণী প্রতিবেদন তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়। জানতে চাইলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুফি জুলফিকার হোসেন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, নতুন এই লাইনটি সম্প্রসারণে কোনো বিধি লঙ্ঘিত হয়নি। কোম্পানির যেকোনো ব্যয়ে পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন দিলেই হয়। তিনি বলেন, ওই এলাকায় চিফ হুইপের বাড়ি থাকাটা কাকতালীয়। তবে নতুন লাইন সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে চিফ হুইপের চাহিদাপত্র ভূমিকা রেখেছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য চিফ হুইপ আব্দুস শহীদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এড়িয়ে গেছেন। তবে তাঁর ছোট ভাই কমলগঞ্জের বিআরডিবির চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমদ বলেছেন, ‘এলাকার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চিফ হুইপ মহোদয় আবেদন ও তদবির করে গ্যাসলাইন স্থাপনের ব্যবস্থা করেছেন। ’ তিনি বলেন, এলাকায় গ্যাস দিয়ে নিজের বাড়িতে গেলে অসুবিধার তো কিছু নেই। কোম্পানির সূত্রগুলো জানায়, এ ধরনের রাজনৈতিক প্রকল্পের কারণেই কোম্পানিগুলো আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.