আলোকিত মানুষ চাই বগুড়া।
বিকাল ৫টায় বাসায় ফেরার জন্য রংপুরের বাসে উঠলাম। বসেছি ''একদম পিছনে''র ইকটু সামনে। খালি লোকজন বলে ''আমি বসি? আমি বসি?''
বিরক্ত হয়ে আবার কতকটা করুণা করেই একজনকে বসতে পারমিশন দিলাম। লুঙ্গি পড়া, সাদা চিকন স্ট্রাইপের শার্ট, কটকটে সবুজরঙা মাফলার।
বাসের জানালাগুলো ভালো না, শুধু খুলে যায় আর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হাওয়া। বারবার লাগাই, বারবার খুলে যায়। বারবার বন্ধ করি, বারবার ফাঁক হয়।
তা আমার পাশের জন শেষমেশ একেবারে বন্ধ করে দিলো।
আমি বললামঃ
- ধন্যবাদ।
এতক্ষণ ঠিকমতো বন্ধ হচ্ছিলো না।
- কী বললেন?
- ধন্যবাদ। জানালা বন্ধ করার জন্যে।
- কী বললেন?
- (এবার হাত ইশারা করে) ধন্যবাদ। জানালা বন্ধ করার জন্যে।
- ও।
ইকটু পর,
- আপনে কুথায় যাচ্চেন?
- রাজশাহী।
- বগরা থেকে যাচ্চেন?
- হ্যাঁ।
- ও। আপনে এইখানে লেখাপড়া করেন?
- না।
আমার পড়াশুনা শেষ।
- কী করেন?
- ডাক্তার।
- ও। আপনের তো পোছাতে ৮টা বাজবে। না?
- হ্যাঁ, রাত হবে।
(কথা এখানেই শেষ। )
আরেকটু পর,
- আপা, থাকেন যাই। ভালো থাকেন।
- (হেসে বললাম) আচ্ছা, যান।
এখন ২নম্বর সহযাত্রীর আগমন।
আগের জন উঠে যেতেই উনি বসে পড়লেন!
কিছুক্ষণ জোরে জোরে গলার ফুল ভল্যুমে ফোনে কথা বলল, তারপর মোবাইল টিপলো, তারপর আবার মোবাইলে মিউজিক ভিডিও দেখল, তারপর সর্বোচ্চ ভল্যুমে গান ছাড়ল। আমার মেজাজ ও মাথাব্যাথা ততক্ষণে চরমে।
(হঠাৎ)
- আপনি কোথায় যাবেন?
- রাজশাহী।
- বগুড়া থেকে যাচ্ছেন?
- হ্যাঁ।
- ও।
আপনার বাসা রাজশাহী তে?
- হ্যাঁ।
- ও। আমার বাসা ভদ্রা।
- বগুড়ায় পড়াশুনা করেন?
- না আমার পড়া শেষ।
- তাহলে আত্মীয়ের বাড়ি এসেছিলেন?
- হ্যাঁ।
- আপনার বাসা রাজশাহী কোথায়?
- (এতকিছু জানতে চায় ক্যান! বলব কিনা...) রাজপাড়া থানা।
সামনের সিট থেকে জানালা খুলে বমি করলো, লাগালো না।
আমি পারছি না, উনি বন্ধ করে দিলো।
তারপর আবার ফুল ভল্যুমে গান। আমি একবার বলেছি, ভাইয়া সাউন্ড কমান।
ভালো মানুষ, গানই থামিয়ে দিলো!
এবার ভদ্রতাবশত জিজ্ঞেস করলাম, ওই পাশের থাই গ্লাসগুলো আপনি রাজশাহী নিয়ে যাচ্ছেন? উত্তর আসলো "হ্যাঁ। "
- বগুড়া থেকে নিতে হবে কেন?
- রাজশাহীর থাইগ্লাস সোজা, গোল আর বাঁকা পাওয়া যায় না তাই।
- ও।
(এবার উৎসাহের সাথে)
- আপনি বগুড়া থেকে উঠলেন না?
- হ্যাঁ।
- মাইক্রো থেকে নামলেন ওইটা আপনি না?
- হ্যাঁ।
- আপনি পড়াশুনা করেন?
- না।
- তাহলে কি করেন?
- ডাক্তার।
(এখান থেকে পুরাই চাপা দিলাম :পি ... )
- কবে পড়া শেষ করলেন?
- এইতো গত বছর। (আসলে এই বছর হবে)
- এখন কোথায় আছেন?
- রামেক।
- চাকরি?
- না, ট্রেনিং করি।
(ছাইয়ের ট্রেনিং, কেবল ৬মাস হলো পাস করার!)
- ও। চেষ্টা করেন, চাকরি হয়ে যাবে। আমার ভাগ্নেও যশোরে ডাক্তারি পড়ে, দুই বছর হলো আর একবছর হলে পড়া শেষ হবে।
- আচ্ছা।
- এখানেই তো পড়ছেন, হয়ে যাবে চাকরি।
- হুম। (রামেক-এ পড়িনি। )
- আপনার তো পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে। কেউ নিতে আসবে না একলা যাবেন?
- একা যাবো।
- বগুড়ায় আপনার কার বাড়ি? ফুপু?
- (একটু ভেবে ও একটু হেসে) না, আমার শ্বশুরবাড়ি।
(সত্যি খুব হাসি পাচ্ছিল। )
- (একদম চমকে উঠে) হ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ... আপনার বিয়ে হইছে?
- (হেসে) হ্যাঁ।
- কবে করলেন?
- এইতো একবছর। (সত্যিঃ আমি সিঙ্গেল )
- পড়া শেষ করেই বিয়ে করে ফেললেন?
- (হেসে) হ্যাঁ।
- বাচ্চা-কাচ্চা?
- এখনো হয়নি।
- একটা কথা বলব?
- (হেসে) হ্যাঁ বলেন।
- আপনার বাবা-মা বিয়ে দিলো না আপনি নিজেই করছেন?
- (হেসে) দুইটাই।
- আপনার জামাই কি করে?
- ইঞ্জিনিয়ার।
- কি?
- ইঞ্জিনিয়ার।
- ও।
ভালো। উনি কই থাকে?
- ঢাকা।
- উনি ঢাকা থাকে!!
ইকটু পর...
- আপনারা কি অরিজিনাল রাজশাহীর?
- (প্রশ্ন শেষ না হতেই) হ্যাঁ।
- আপনার আব্বা কি করে?
- ডক্টর। (আমার আব্বু মানুষটাই নাই অনেকদিন হলো।
)
- কি?
- ডাক্তার।
আরেকটু পর,
- মেডিকেলের ডাক্তার?
- (জোর দিয়ে) হ্যাঁ।
- আপনাদের পারসোনাল ক্লিনিক নাই?
- নাহ।
- ক্যান? আজকাল সব ডাক্তারের ক্লিনিক আছে, আপনাদের ক্যান নাই?
- এমনি। ভালো কাজ করতে না পারলে ক্লিনিকে কি হবে!
- হ্যাঁ।
এইটা ভালো কথা বলছেন।
কথা এখানেই শেষ। এর একটু পর সে নেমে গেল। ভাবলাম বলবে "থাকেন যাই। "... কিছুই বলল না।
লল। কষ্ট পেলাম।
সে গ্যারেজের মালিক অথবা থাইগ্লাসের দোকানের কেউ। কথা বলে মজা পেয়েছি। হেডফোন ছাড়া গান শোনা আর (বারবার সরে বসা, এটার জন্য আমারও অনেকবার পজিশন চেঞ্জ করতে হয়েছে যেন স্পর্শ না লাগে।
এটা ছাড়া) ভালো মানুষ। এতগুলা মিথ্যা না বললেও হতো।
২য় জন যাবার অল্পক্ষণের মধ্যেই আমার নামার পালা।
হেল্পার কে বললাম উপরে আমার ব্যাগ আছে যেন নামায়। সে বলে, "কোন ব্যাগ, স্কুলব্যাগ?"
আমি বোকা হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম থাইগ্লাসওয়ালা আছে নাকি!
ভাগ্যিস ছিলো না!
নাহলে আমার প্রেস্টিজ ওখানেই ফুটা হয়ে যেতো!!
বিবাহিত রমনী! আমারে খাইছে!!
বিঃ দ্রঃ গতকাল বাচ্চাদের একটা হ্যাট কিনেছি, ওটা মাথায় দেয়া ছিল।
আমায় নাকি এমনিতেই বাচ্চা বাচ্চা দেখায়! তাই "স্কুলব্যাগ" বলেছে (এটা আমার ধারণা, ভেরি স্যাড!), ওটা আসলে ট্রাভেল ব্যাগ।
আমার হ্যাট দেখুন। কিউট না?
(মেয়েটা অবশ্য আমি নাহ। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।