বিখ্যাত লেখক,কথা সাহিত্যিক,ভাষাবিদ, শিক্ষক ড.হুমায়ুন আজাদ সাহেবের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল বইটির এক অংশে একটা গল্প পড়েছিলাম যেখানে গ্রামে পাক-মিলিটারি আগমন উপলক্ষে মানুষের কিছু সংলাপ ও পাক-মিলিটারি আগমনের পর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের এক করুন হাস্যচিত্র অংকিত হয়েছে। গ্রামে পাক-মিলিটারি আসার আগে গ্রামবাসীর অনেকে বলতে থাকে এইটা হইল পাকবাহিনী পিটায় সব চোর বাটপারদের সোজা বানায় দিব। মানুষ কে তাঁদের বাড়ির সামনের ময়লা পরিস্কার করতে বলা হয়, সবাই পাকমিলিটারি আগমনের আগেই সব পরিস্কার করে। পাকমিলিটারি আগমনের পর মিলিটারি নির্যাতনে মানুষ মুখ বুজে থাকে, অনেকে খুশি হয়। কিন্তু একদিন যখন গ্রামের প্রসিদ্ধ পাগল মিলিটারি দ্বারা নির্যাতিত হয় তখন মানুষের হুশ ফেরে এই মিলিটারি যখন এক নিরীহ পাগল কে পর্যন্ত মারতে ছাড়ে না তখন আমরা সাধারন মানুষ আর কী।
এখন দেশে সেই নির্মম নির্যাতন করা পাকমিলিটারি নাই, তবে বিভিন্ন পাগলেরা আছে। অনেক রকম পাগল। তবে আমকে অবাক করেছিলো এক ল্যাংটা পাগল। ল্যাংটা পাগল ও অনেক রকমের। কিছু ঘটনা বললেই হয়ত বুঝবেন।
ইডেন মহিলা কলেজের সামনে এক দিন এক ল্যাংটা পাগল কে দেখা যায়। যে কিনা তাঁর পুরুষ দণ্ডটি দিয়ে বিভিন্ন কলাকৌশল করে সমগ্র ইডেনবাসী কে ব্যস্ত করে তুলেছিল। সে পাগলের ভয় সহ্যের বাইরে গেলে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়।
আরেক ল্যাংটা পাগল ঢুকে পড়েছিলো নিউমার্কেট এলাকায় সময়টা ছিল ঈদের মৌসুম। ঈদের সময় সেখানে পুরুষ কম অধিক মহিলা অবস্থান করে।
সেই পাগলের আক্রমনে আতঙ্কে মহিলারা চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু করলে দোকানদাররা সে পাগল কে ধরতে যায় সেখানে আরেক দেখার মতো ঘটনা হয়। দোকানদাররা পাগলটিকে ধরতে না পেরে পাগল দ্বারা অপমানিত হলে কর্তব্যরত পুলিশদের খবর দেয়া হয় পুলিশ তখন পাগল কে ধরে।
এক সময় ঢাকায় আরেক ধরনের পাগলের উৎপাত শুরু হলো। এই পাগলদের গায়ে কোন কাপর থাকতো না হাতে থাকতো মানব বিষ্ঠা যা দিয়ে তাঁরা ট্রাফিক সিগন্যালে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতো। আমার পরিচিত এক ভদ্র মহিলা একদিন এই পাগলের খপ্পরে পরে।
উনাকে টাকা দিতে বললে উনি বলেন দিবো না যা পারো করো।
যে পাগলদের কথা এতক্ষণ বললাম এরা কতটুকু পাগল তা নিয়ে কিছু সন্দেহ আছে। এদের নিয়ে হয়েছে অনেক তর্ক বিতর্ক। তবে আমি যে পাগল কে দেখেছি যার কথা বলার জন্য এতো আয়োজন সে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
একদিন ঢাকার বাইরে থেকে আসার সময় টঙ্গীর শুরুতে এই পাগল কে দেখতে পাই।
সে ছিল সম্পূর্ণ নগ্ন। ভালুকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ছিল অসহনীয় যানজট আর রাস্তার কথা কি বলবো এই রাস্তা দিয়ে যে জাতায়ত করেছে সে মনে হয় কোমর ব্যথায় কয়েক দিন সোজা হয়ে দাড়াতে পারে নাই। টঙ্গী সড়ক মুখেও ছিল তীব্র যানজট তো হটাত দেখি আশেপাশের সবাই রাস্তার উল্টা পাশে কি যেন দেখছে ভালো মতো তাকালে দেখি এক পাগল দাঁড়ানো। তাঁর অনেক বড় বড় চুল মুখ ভর্তি দাড়ি গোঁফ। সবাই বেশ মজা করে তাকে দেখছে কেও কেও ছবিও তুলছে।
তাঁর গায়ে কোন কাপর ছিলো না। পাগলের দিকে না তাকিয়ে আশেপাশে ভালো মতো অনেকক্ষণ দেখলাম। মানুষের আগ্রহের কোন কমতি নাই। অনেকে পাগল কে লক্ষ করে মন্তব্য করছেন, প্রশ্ন করছেন, পাগলটিকে আমি একটুকু বিচলিত হতে দেখি নাই। আমি সম্পূর্ণ সময় যতক্ষণ সেখানে ছিলাম ততক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম পাগলটির চোখে।
রাতের সেই অন্ধকারের মাঝে গাড়ির হেডলাইটের আলোতে তাঁর চোখ দু’টি জ্বলজ্বল করছিলো। দাড়ি গোঁফ ভর্তি মুখের এক কোনে ঝুলে ছিল তাচ্ছিল্লের হাঁসি। সেই জ্বলজ্বলে চোখ সেই হাঁসি সহজে মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভভ না। এখনো মাঝে মাঝে ভাবি যার গায়ে এক খণ্ড কাপর নাই তাঁর চোখ কীভাবে তারার মতো জ্বলে, ঠোট কোনে কীভাবে হাঁসি থাকে??
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।