রুপ নারানের কুলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগত স্বপ্ন নয়। দুপুরের ভাত খেতে খেতে বেলা গড়িয়ে গেল। হেমন্তের বেলা খুব দীর্ঘ নয়। মাছ ধরতে নেমেছিলাম বাড়ির পাশের পুকুরে, ধরেছিও কয়েকটা। এই কয়েকটা চাটাপুটি, খলশে, চিংড়ি, শোল ইত্যাদি।
শুধু বেগুন ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়া। কারণ আমার সর্বগ্রাসী কনিষ্ঠ ভ্রাতা নাকি আমার জন্য বরাদ্দকৃত তরকারিটুকু সাবাড় করে দিয়েছে।
”রাক্ষুস জানি কোনহানকার সব খাইয়া হালাইছে” ছোটজনের প্রতি মায়ের এই ভৎসনার প্রতিবাদ করে খা্ওয়াতে মন দেই আমি।
বেগুন ভর্তা তো নয় যেন অমৃত। মেসে বুয়ার হাতের অতি উপাদেয় খাদ্য ভক্ষণ করতে করতে জীবনটা শেষ।
পাশে বসেই আমার ছোটবোনটা মাছগুলো কুটছিল । সবে স্কুলে পা দেয়া আমার ভাগনেটা আমাকে তার রাজ্যজয়ের গল্প শোনাচ্ছিল, ইংরেজিতে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত সঠিক ভাবে লিখে সে মাড্যামের কাছ থেকে গুডবয় খেতাব পেয়েছে, সে এখন এক নিমিষেই জাতীয় পতাকা, এবং শাপলার ছবি আকতে পারে এমনকি ইচ্ছা করলে বিমানের ছবিও আকতে পারবে বলে ঘোষণা দিল। তৎক্ষণাত গুড বয় লেখা খাতা, শাপলা ও পতাকার ছবি প্রমাণ স্বরুপ আমার নিকট উপস্থাপন করল এবং দুখানা রঙ পেনসিল কিনে দেবার আবদার জানাল।
আব্বা কোথা থেকে যেন আসলেন। বললেন, ছোটভাইটিকে যেন আমি একটু শাসন করি।
সে আছে শুধু সারাদিন ক্রিকেট খেলা নিয়ে, পড়াশোনার প্রতি মন নেই এমনকি দু দিন যাবত সে স্কুলেও যায়নি। ভ্রাতৃ শাসনের গুরুভার আমার কাধে তুলে দিয়ে পিতৃদেব আবার হাওয়া হয়ে গেলেন।
এই মুহুর্তে আমি এখানাকার হাকিম। স্কুলে না যাবার অপরাধে আমার এক হুকুমেই অনুজের ডিনার ক্যানসেল হতে পারে।
নিজের তেজ দেখানোর জন্য , গলা উচিয়ে মায়ের কাছে ওর স্কুল কামাইয়ের কারণ জানতে চাই।
কারণস্বরুপ জানা গেল তার একখানা ক্রিকেট খেলার ব্যাট চাই এবং স্কুলে যাবার জুতাটা পুরনো হয়ে গেছে সেই সাথে এক খানা স্কুল ব্যাগ দিলে ভালো হয়।
এত গুলো যৌক্তিক চাহিদার কথা শুনে কেমন যেন দমে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম জুতা ও ব্যাগ কিনে না দিয়ে ব্যাট কিনে দেই। এই ’পড়াশোনা বিধ্বংসি’ ব্যাটই তাকে আবার স্কুলে নিয়ে যাবে। ব্যাটের জন্য ৫০০ টাকার বাজেট এবং তা কোন জায়গা হতে কাট ছাট করে ম্যানেজ করতে হবে তাই এখন চিন্তার বিষয়।
হেমন্তের শেষ প্রহরে উঠানে বসে আমাদের চারটি প্রাণীর এই কোলাহল।
আমাদের দুঃখ আছে, সুখও আছে। আমার মতে পরিবার ছাড়া মানুষ শেকড় ছেড়া গাছের মত। পরিবার পরিজন, আন্তীয় স্বজন এদের নিয়ে হাউকাউ করে বাচাটা্ও জীবনের একটা গুরুত্বপুর্ণ অংশ।
আসলেই আমরা ১১ তম সুখী দেশ কিনা, আধখানা মন দিয়ে তাই ভাবছিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।