আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থমকে আছে ট্যানারি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া

শাহেদ নুর উদ্দিনঃ থমকে আছে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া । তিন বছর আগে হাজারীবাগে অবস্থিত সকল ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য ট্যানারির মালিকদের শিল্পনগরে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কারখানা স্থানান্তর করছে না। এ নিয়ে ট্যানারি মালিক এবং বিসিক ও শিল্পমন্ত্রণালয় পরষ্পর পরষ্পরকে দোষারোপ করছে। চামড়া শিল্পনগর প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী কর্তৃপ বাংলাদেশ ুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, ট্যানারী মালিকরা সাভারে চাচ্ছে না।

এমনকি ট্যানারি স্থানান্তরের উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না তাদের মধ্যে। অপর দিকে ট্যানারী মালিকরা দাবী করছে, সরকার এখনও বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ করতে পারেনি। এটা না হলে সাভারে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। এ ছাড়া হাজারীবাগে ব্যাংক ঋণ নিয়ে তাঁরা কারখানা নির্মাণ ও ট্যানারির যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছেন। এখন সরকারের কাছ থেকে তিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত সাভারে যেতে রাজি নন তারা।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট ‘চামড়া শিল্পনগরী সাভার, ঢাকা’ নামের একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। পরিবেশদূষণ ঠেকাতে হাইকোটর্রে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেেিত উচ্চ আদালতও হাজারীবাগ থেকে দ্রুত ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করতে সরকারকে সময় বেঁধে দেয়। এর পর বেশ কয়েক দফা সময় নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা গ্রামে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে ২০০ একর জায়গাজুড়ে চামড়া শিল্পনগর গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৫’শ ৪৬ কোটি টাকা।

শিল্পনগরে ২’শ ৫টি প্লটে ১’শ ৫৫টি কারখানা স্থাপন করা হবে। এসব প্লট বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সিইটিপি ছাড়া সব অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিকের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিইটিপি নির্মাণ শেষ হতে ২৪ মাস সময় লাগবে। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীরা ট্যানারি স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু না করলে সিইটিপি নির্মাণ করা হলেও কোনো লাভ হবে না।

বরং ট্যানারি স্থানান্তর দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে পারে। মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সিইটিপি নির্মাণ কাজ শেষ হবে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেখানে ট্যানারি স্থানান্তর করা হবে। প্রয়োজনে ট্যানারির মালিকদের সাভারে যেতে বাধ্য করা হবে। এ জন্য বিসিককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রক্রিয়াজাত চামড়া, চামড়াপণ্য ও জুতা রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করতে আমাদের ৬ থেকে ৯ মাস লাগবে। বড় ট্যানারি স্থানান্তর করতে হয়তো আরেকটু বেশি সময় লাগতে পারে। সিইপিটির কাজ ৭০ শতাংশ হয়ে গেলেই আমরা ট্যানারি স্থানান্তরের কাজ শুরু করব। তবে তাঁরা প্লটের আয়তন ও পরিমাণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের দাবি ৬০ শতাংশ প্লটই ৩০ হাজার বর্গফুটের কম আয়তনের।

অথচ পরিবেশসম্মত ট্যানারি করতে অন্তত ৪০ হাজার বর্গফুট জায়গা লাগে। আবার হাজারীবাগে ২’শ ৭টি ট্যানারি থাকলেও শিল্পনগরে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১’শ ৫৫ জনকে। অনেকেই সাভারে যেতে চায়, কিন্তু প্লট পায়নি। শিল্পনগরে ট্যানারি স্থানান্তরে ব্যবসায়ীরা ২০০৩ সালে থেকে সরকারের কাছে ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা তিপূরণ দাবি করলে ২০০৬ সালে এসে শিল্পসচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ট্যানারির মালিকদের ২’শ ৫০ কোটি টাকা তিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু ৬ বছরেও এর সুরাহা হয়নি।

ট্যানারী মালিকদের দাবি, ৩ হাজার কোটি টাকার তিপূরণ। আর মন্ত্রণালয়ের হিসাব মেনে নিলেও এখন অন্তত ৭’শ ৫০ কোটি টাকা তিপূরণ দিতে হবে। এই টাকা না পেলে তাঁরা ট্যানারি স্থানান্তর করতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাবেক সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ভালো পরিবেশে পণ্য উৎপাদন করতে সাভারে চামড়া শিল্পনগরে যেতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী। এজন্য তারা প্লটের অগ্রিম টাকাও দিয়েছে।

কিন্তু ট্যানারি স্থানান্তরের সময় অনেক যন্ত্রপাতিই অকেজো হয়ে যাবে। নতুন করে এগুলো স্থাপন করতে হবে। তিপূরণ ছাড়া স্থানান্তর করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। প্রকাশঃ দৈনিক ইনকিলাব ৯ নভেম্বর ২০১২ লিংকঃ Click This Link page_id= 62 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।