আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ারেন বাফেটের ম্যানেজমেন্ট সিক্রেটস পর্ব-৭

লিখতে ভালোবাসি যাস্ট মুখোমুখি নয়, বিক্রেতা থাকুক ক্রেতার পাশে বাফেট বলতেন, যে জিনিস আমি নিজের জন্য কিনব না, তা অন্যকে কেনার উপদেশ দিই কীভাবে? ক্রেতার মুখোমুখি বসা উচিত নয় কখনোই। একজন সফল বিক্রেতা সবসময় থাকে ক্রেতার পাশে। ক্রেতা তাকে মেনেও নেয় এমন বন্ধু হিসেবে, কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা ক্রয়ে যে তাকে দেবে সুপরামর্শ। অভিজ্ঞতা থেকে বাফেট জেনেছিলেন, ভালো সেলস পারসন তারাই, যারা বিশ্বাস করে— তারা যে পণ্য বিক্রি করছে, সেটি মানসম্মত এবং এর দামও যৌক্তিক। এ ধরনের সেলস পারসন পাওয়ার উপায় কী? এক হতে পারে— মোটিভেশনাল ট্রেনিং দিয়ে বা বিক্রি বাড়ানোর কায়দা-কানুন রপ্ত করিয়ে।

তবে এ থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুফল মেলে না। সবচেয়ে ভালো হয় কাজের প্রতি ভালোবাসা ও বিক্রিযোগ্য পণ্যের প্রতি নিজ থেকে অনুরাগ জন্মেছে এমন ব্যক্তিদের নির্বাচিত করা গেলে। লেখাটি এই ওয়েব সাইট থেকে সংগ্রহিত কোনো পণ্যের ওপর সেলস পারসনের আস্থা জন্মালে এটি নিজের অজান্তেই সে ডাইভার্ট করে ক্রেতার কাছে। এতে তখনই গুণাগুণ ঠাহর করতে না পারলেও ক্রেতারা অনুভব করে— পণ্যটি ভালোই হবে। এ ধরনের সেলস পারসন চেনার উপায়? মোটামুটি নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে কৌতূহল দেখায় তারা।

সে যে পণ্য বিক্রি করছে, সেটি কোথায় তৈরি হয়? কী দিয়ে তৈরি? বিপণন টিম কাজ করছে কীভাবে? কেমন যাচ্ছে বিজ্ঞাপন? প্রতিযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থা কী? কোত্থেকে কাঁচামাল আনে তারা? তাদের পণ্যের দাম কেমন? কী ধরনের বিপণন কৌশল তারা নিয়েছে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খায় ওই সব সেলস পারসনের মাথায়। ফলে বিক্রির আগেই সে নিজ থেকে জেনে নেয়, তার বিপণনকৃত পণ্যের সর্বোত্তম ব্যবহার কী। কথোপকথনে সে ক্রেতার চাহিদা বুঝে নেয় সহজেই। আর সুপরামর্শ দিয়ে ক্রেতাকেও বুঝিয়ে দেয় সেটি। এ ধরনের সেলস পারসনরা চেষ্টায় থাকে, যাতে প্রতিযোগীদের পেছনে না পড়ে যায় সে এবং তার পণ্য।

ফলে বিপণন কৌশল খুব একটা শেখাতে হয় না তাদের। পরিস্থিতি বুঝে তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করে নতুন নতুন কায়দা। একজন ক্রেতা হিসেবে চিন্তা করুন তো— কেনার সময় বিক্রেতার কোন বিষয়টি আশ্বস্ত করে যে, পণ্যটি ভালো? নিঃসন্দেহে তাদের আত্মবিশ্বাস। ম্যানেজার বা সিইও নিয়োগে প্রার্থীদের মধ্যে এ গুণটি রয়েছে কি না— অতশী কাচ দিয়ে খুঁজতেন বাফেট। যদি সন্দেহ করতেন কারও মধ্যে অতিরিক্ত অর্থলোভ রয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে তার প্রার্থিতা বাতিল।

তিনি বলতেন, অর্থ গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই; তবে কাজের মানুষের প্রথম অগ্রাধিকার হলো তার কাজ। তার পর্যবেক্ষণ— বড় কোনো অবিচার না হলে এবং কাজে স্বাধীনতা দেয়া হলে এ ধরনের মানুষ কেবল অর্থলোভে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন না সাধারণত। দেখা যায়, দীর্ঘকাল তারা কাটিয়ে দেন একই প্রতিষ্ঠানে। এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে বাফেটের আশপাশেই। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের একাধিক সিইও আছেন, যারা মাল্টি মিলিয়নিয়ার হয়েছেন অনেক আগে; বয়সও পেরিয়েছে সত্তর।

তবু কাজ করে যেতে চান। সম্মানী না দিলে না দেবে— তারা পরোয়া করেন না। চাইলেই কিন্তু অবসরে শান্তির জীবন কাটাতে পারতেন। অথচ সকাল হলেই ছুটে আসেন অফিসে। তাদের একজন বাফেলো নিউজের প্রকাশক স্ট্যানফোর্ড লিপসি (স্ট্যান লিপসি নামেই বেশি পরিচিত)।

বাফেলো-নায়াগ্রা ফলস মেট্রোপলিটান এলাকায় পত্রিকাটি যে সপ্তাহের ছয় দিন ২ লাখ ও রোববারে (সাপ্তাহিক ছুটির দিন) ৩ লাখের মতো কপি বিক্রি হয়, তার অন্যতম কারণ স্ট্যানের নিরলস প্রচেষ্টা। নেব্রাস্কা ফার্নিচার মার্টের প্রতিষ্ঠাতা মিসেস বির নাতি আর্ভ ব্লাম্পকিনের কথাও বলা যায়। দাদির গড়া এ প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করছেন কৈশোর থেকেই। দীর্ঘদিনে তার ব্যাংকেও জমেছে প্রচুর অর্থ। তা সত্ত্বেও এ ভদ্রলোকের কাজ সকালে ওঠেই মার্টে যাওয়া।

কাউন্টারে একজনকে বসিয়ে রেখে ক্রেতা পর্যবেক্ষণ করা। বুঝতে চেষ্টা করা, নতুন কোন্ ডিজাইনের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। মাঝে মধ্যে আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করা— পণ্যভেদে বিভিন্ন গ্রুপের ক্রেতা কেমন বাজেট রাখছে। তারপর রাতে নোট লেখা— কোন পণ্যসামগ্রীর দাম কেমন নির্ধারণ করা উচিত, নতুন মডেলের কিছু আনতে হবে কি না প্রভৃতি। কেউ কেউ বিরক্ত হলেও আর্ভ কিন্তু সপ্তাহের ছয় দিনই কাজ করে যাচ্ছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।

সফল সেলস টিম গড়ার কৌশল সম্ভবত এটিই— কাজ ও পণ্যের প্রতি অনুরক্তদের নিয়োগ দাও। এমন গুণ না থাকলে সেলস পারসন যত বুদ্ধিমানই হোক আর যত কৌশলই নিক না কেন, পণ্যের বিক্রি আটকে যাবে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে এসে। মেরি বাফেট ও ডেভিড ক্লার্কের বই থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তর জায়েদ ইবনে আবুল ফজল লেখাটি এই ওয়েব সাইট থেকে সংগ্রহিত ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।