আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ারেন বাফেটের ম্যানেজমেন্ট সিক্রেটস পর্ব-৪

লিখতে ভালোবাসি যাস্ট গবেষণায় যাবেন না পরীক্ষিত কর্মী নিন শেয়ারবাজারকে কখনই জুয়া ভাবেননি বাফেট। এটি ছিল তার শখ, ব্যবসা ও পেশা। তার একটি বিনিয়োগ কৌশল সম্ভবত সবারই জানা— শেয়ার কিনতেন দাম কমে গেলে। এ ধরনের কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্য হতেন। তারপর দেখতেন, কী কারণে মুনাফা করতে পারছে না কোম্পানিটি।

হেলে পড়া প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানোর চ্যালেঞ্জে তিনি আনন্দ পেতেন। সেটি লাভজনক হয়ে উঠলে হয় আরও শেয়ার কিনতেন, নয়তো দিতেন বেচে। নেব্রাস্কার ডেম্পস্টার মিলস তৈরি করত বায়ুকল ও সেচযন্ত্র। খুচরা যন্ত্রাংশও বিক্রি হতো এখান থেকে। কোম্পানিটির প্রতি বাফেটের নজর ছিল আগে থেকেই।

অপেক্ষাও করছিলেন— এর শেয়ারের দাম কবে পড়বে। সুযোগও এসে গেল। একবার ডেম্পস্টার মিলসের প্রতি শেয়ারের প্রকৃত দাম কমে গেল ২৫ শতাংশ। তার সিংহভাগ কিনে নিলেন বাফেট; হলেন এটির বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্য। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এত বড় হয়নি তখনো।

তবে ছড়াতে শুরু করেছে বাফেটের খ্যাতি। এ অবস্থায় ডেম্পস্টারের পেছনে সময় দেয়ার সুযোগও ছিল খানিকটা। কিছুদিন পর তিনি বুঝতে পারলেন কোম্পানিটির অন্তর্নিহিত অর্থনীতিতে গোলমাল নেই; সমস্যা ম্যানেজারের দক্ষতায়। বাফেট বোর্ডে তুললেন কথাটা। বাকি সদস্যদের বিশ্বাস করালেন, ম্যানেজার বদলালে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হবে।

সর্বসম্মতিক্রমে নেয়া হলো নতুন ম্যানেজার। দেখা গেল, নতুনজন আগের ম্যানেজারের চেয়েও অদক্ষ। আগেরজন জ্বালিয়েছিলেন হলুদ বাতি; ইনি জ্বালাচ্ছেন কমলা। আবার ম্যানেজার খোঁজা শুরু হলো। এবার জ্বলল লাল বাতি।

অনেকে আছেন, এমন পরিস্থিতিতে একে-ওকে ধরে ম্যানেজার হিসেবে কাজ চালানো যায় কি না, গবেষণা করেন। বাফেট তা পছন্দ করতেন না একেবারেই। সমস্যা হলো, তার পরিচিত ও দক্ষ ম্যানেজাররা তখন প্রায় সবাই নিযুত্ত বার্কশায়ারেরই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে। উপায় না দেখে বাফেট পরামর্শ চাইলেন দীর্ঘদিনের বন্ধু ও উপদেষ্টা চার্লি মানজারের কাছে। মানজার জানালেন, হ্যারি বটল নামে যোগ্য একজন আছেন তার খোঁজে।

জটিলতা হলো, হ্যারি থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখানকার ঈষদুষ্ণ আবহাওয়া ছেড়ে নেব্রাস্কার প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আসতে চাইবেন কি তিনি? বাফেট নিলেন হ্যারিকে পটানোর দায়িত্ব। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও এককালীন ৫০ হাজার ডলার বোনাসে অনুপ্রাণিত হয়ে হ্যারি বটল ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিলেন ডেম্পস্টার মিলসে। তিনি এসেই দেখলেন— মূল সমস্যা পণ্যের দাম নির্ধারণে। ডেম্পস্টার সবকিছুই বিক্রি করছে বাজার মূল্যে।

এতে সুবিধা করতে পারছে না প্রতিযোগিতায়। অথচ ডেম্পস্টার এমন কিছু যন্ত্রাংশ বেচে, যা আর কারও কাছে নেই। আগ্রাসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন হ্যারি। স্থির হলো, এখন থেকে যেসব পণ্য সবাই বিক্রি করে, তার দাম অর্ধেক নামিয়ে দেবে ডেম্পস্টার। আর যেগুলো ডেম্পস্টার ছাড়া অন্য কারও নেই, সেগুলো কিনতে দিতে হবে আগের চেয়ে তিন গুণ বেশি দাম।

হ্যারির সিদ্ধান্তে এসব পণ্যে মনোপলি সুবিধা ভোগ করতে লাগল কোম্পানিটি। ডেম্পস্টার ঘুরে দাঁড়াতে লাগল। বাফেট কাউকে কাজ দিতেন না সুস্পষ্ট ট্র্যাক রেকর্ড ছাড়া। হ্যারির ট্র্যাক রেকর্ড ছিল প্রবলেম সলভার (সমাধানকারী) হিসেবে। উন্নতি করতে থাকা প্রতিষ্ঠানে খুব একটা সুবিধা করতে পারতেন না তিনি।

তবে সমস্যায় জর্জরিত কোম্পানিকে পারতেন লাভজনক করে তুলতে। এরপর বাফেট যখনই লোকসানে পড়া প্রতিষ্ঠান সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন, তখনই ডেকেছেন হ্যারি বটলকে। ‘হ্যারি ওষুধ’ ব্যর্থ হয়নি এ পর্যন্ত। ঠেকে ও ঠকে জীবনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা অর্জন করেছিলেন বাফেট। এর অন্যতম হলো, মুমূর্ষু অবস্থা না হলে ম্যানেজার না বদলানো।

এক বন্ধুকে তিনি রসিকতাচ্ছলে বলেছিলেন, ম্যানেজার আর স্ত্রী বদলানো একই ব্যাপার। যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলো, অমুকের সঙ্গে ঘর করবে না— প্রথমত. এটি খুব বেদনাদায়ক। দ্বিতীয়ত. সম্পর্ক ছিন্ন ও নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যয় হবে অনেকটা সময়। তৃতীয়ত. তুমি নিশ্চয়তা দিতে পারবে না, দ্বিতীয়জন প্রথম স্ত্রীর চেয়ে ভালো হবে। এমন ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে তা শুধরানো কঠিন।

ফলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে ম্যানেজার পদে এমন কাউকে বসাতে, যার ট্র্যাক রেকর্ড প্রমাণিত। তার আগে অবশ্য নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, পরিবর্তন আনাটা কি অনিবার্য? উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে প্রথমে দেখুন— ওই প্রতিষ্ঠানেরই কাউকে দায়িত্বটি দেয়া যায় কি না। এ জন্য বাফেট সবসময় জোর দেন প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় নেতৃত্ব গড়ে তোলায়। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সিইওদের কাছে কোম্পানির প্যাডে চেয়ারম্যান (বাফেট) স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আসে প্রতি বছরই। তাতে লেখা থাকে, আজ মারা গেলে কাল থেকে এ প্রতিষ্ঠানের কে আপনার পদে যোগ দিতে পারবেন? নাম লিখে পাঠান।

বার্কশায়ারের কোনো কোম্পানি এক দিনও এতিম থাকতে পারবে না। বাফেটের মতে, কোম্পানির ভেতর থেকেই ম্যানেজার খুঁজে বের করা ভালো। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া সহজ হয় তাতে। ওই নির্দিষ্ট কোম্পানির পণ্য ও সেবা সম্পর্কে তার বিস্তারিত ধারণাও থাকে আগে থেকে। তিনিই তো জানেন, তার পণ্য বা সেবার গ্রাহক কারা আর তারা কী চায়? মেরি বাফেট ও ডেভিড ক্লার্কের বই থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তর জায়েদ ইবনে আবুল ফজল লেখাটি এই ওয়েব সাইট থেকে সংগ্রহিত ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।