লিখতে ভালোবাসি যাস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই নিজ দেশে নাম করছিল জার্মানির এক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। ক্রেতার আস্থার সঙ্গে সঙ্গে মুনাফাও বাড়ছিল দ্রুত। লোকে নিশ্চিন্তমনে কিনতেন তাদের তৈরি ওষুধ। এদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে জার্মানি ছাড়িয়ে ইউরোপের অন্যান্য অংশে। বাজারে তার ধারেকাছেও ছিল না প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে মুনাফা আরও বাড়িয়ে তোলার প্রলোভন প্রতিষ্ঠানটিকে মাতিয়ে তুলল নিত্যনতুন ওষুধ বাজারে ছাড়তে। এমনটিও ঘটল, কয়েকটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গোপন রেখেই ওষুধ ছাড়া হলো বাজারে। প্রতিদিন ব্যবহারকারীদের হাজারো অভিযোগ আসতে লাগল এতে। তখনো তাদের বিক্রি কিন্তু কমছিল না। তবে চরম সর্বনাশ ডেকে আনল কোম্পানিটির এমডির কপটতা।
উচিত ছিল, নিজেদের ভুল স্বীকার করে বিবৃতি দেয়া; ওষুধটি বাজার থেকে তুলে নেয়া। তা না করে তিনি সংবাদপত্রে নোটিস পাঠাতে লাগলেন, তাদের কোম্পানির তৈরি ওষুধে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে বলে গুজব রটাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বীরা। তাদের সুনামহানির চেষ্টা চলছে। ক্রেতারা যেন এতে কান না দেন প্রভৃতি। এটিই চলল কিছু দিন।
এতেও সন্তুষ্ট না হয়ে এমডি আদালতের শরণাপন্ন হলেন। প্রমাণ করতে চাইলেন, তাদের তৈরি ওষুধ নিরাপদ। শোনা যায়, কয়েক টন ঘি (ঘুষ) ঢালার পর নিম্ন আদালত থেকে রায় বের হলো প্রতিষ্ঠানটির পক্ষেই। সমস্যা হলো, সব দেশের ক্রেতারই একটি কমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যৌক্তিক বা অযৌক্তিক যে কারণেই হোক, কারও সেবা বা কোনো পণ্যের প্রতি ক্রেতার অনাস্থা তৈরি হলে তারা নির্দ্বিধায় সেটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।
এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় ক্রেতারা সিদ্ধান্ত নেন অন্যের দেখাদেখি বা আরেকজনের কাছে শুনে। জার্মান ওই ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি শেষমেশ দেউলিয়া হয়ে পড়ে স্রেফ একটি কারণে। সেটি হলো এমডির কপটতা।
প্রবাদই রয়েছে, ফাঁকি দিয়ে মহৎ কাজ হয় না; বড়ও হওয়া যায় না। বাফেটের পর্যবেক্ষণ হলো, যখন কোনো ম্যানেজার বা কর্মচারী নিজের ভুলগুলো অকপটে স্বীকার করেন, এ থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে শিক্ষা নেন, সে তখন দীর্ঘমেয়াদে তার সুফল পায়।
কেন এমনটি হবে? আপাদমস্তক নির্লজ্জ না হলে যে কাউকে বিব্রত করে তুলবে তার নিজের করা ভুল। এ ক্ষেত্রে মনের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলো, কোথায় ভুল হয়েছে, সেটি খুঁজে বের করা ও তা শুধরানো। কারণ সে চায় না একই কারণে আরেকবার নিজের কাছে ও অন্যদের সামনে বিব্রত হতে। যারা নিজে জানার পরও ভুল অস্বীকার করে বা অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়, তাদের ক্ষেত্রে কী ঘটে? একাধিকবার বলার পর একটা সময় মিথ্যাকে নিজেরাই সত্য বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে তারা। দশ চক্রে পড়ে ভগবানও হয়ে ওঠে ভূত।
এতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মনে প্রশ্ন জাগে, যদি আমি না করে থাকি, তাহলে ভুলটা করল কে? সত্যের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে এ ব্যক্তিটি তখন খুঁজতে থাকে বলির পাঁঠা, যার ওপর অনায়াসে দোষ চাপানো যায়। জটিলতা সৃষ্টি হয়— কারও ওপর অন্যায়ভাবে ভুল চাপানোর পরও যদি প্রতিবাদ না ওঠে। সে ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে যিনি ভুলটি করেছেন, তার বদ্ধমূল ধারণা জন্মায়— নিঃসন্দেহে ভুলটি আমার দ্বারা হয়নি। এভাবে কেউ যদি মাসে ১০টা ভুল করে ও সেটি বুঝেও তা অস্বীকার এবং শুধরানোর চেষ্টা না করে; কয়েক বছর পর দেখা যাবে, অধিকাংশ সিদ্ধান্তই বিপদ ডেকে আনছে তার জন্য।
বাফেটের নীতি হলো, ভুল যত ক্ষুদ্র বা অগুরুত্বপূর্ণই হোক, বোঝামাত্র সেটি অকপটে স্বীকার করে নেয়া এবং শুধরানোর চেষ্টা চালানো।
ব্যবসায় এটি জরুরি। সিইও, ম্যানেজার বা কর্মচারীরা যদি নিজেদের ভুল স্বীকার না করেন, সেটি প্রতিষ্ঠানের জন্য এক সময় হয়ে ওঠে আত্মঘাতী।
লেখাটি এই সাইট থেকে নেয়া ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।