আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ারেন বাফেটের - ম্যানেজমেন্ট সিক্রেটস - পর্ব-২

লিখতে ভালোবাসি যাস্ট রাফ খাতায় সহজ তিন টেস্ট কোনো কোম্পানির ডিউরেবল কম্পিটিটিভ অ্যাডভানটেজ নির্ণয়ের অনেক টেস্ট রয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষায় তা শেখানোও হয়। তবে সেগুলো ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের পক্ষে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা কঠিন। এসবে রয়েছে গাণিতিক জটিলতা। ফলে সতর্ক না হলে ফল ভুল হবে।

এ জন্য বাফেট নিজে অনুসরণ করেন তিনটি সহজ টেস্ট। যারা ক্যালকুলেটরের বোতাম চেপে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করতে পারেন, তাদের পক্ষেও হিসাবগুলো করা খুব সহজ। প্রথম টেস্ট— কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয়ের হিসাব। কোম্পানিগুলো তো আজকাল এ ধরনের তথ্য দিচ্ছে ওয়েবসাইটে। এ ক্ষেত্রে কেবল এক বছরের শেয়ারপ্রতি আয়ের তথ্য যথেষ্ট নয়।

যত অধিক বছরের তথ্য পাওয়া যাবে, হিসাব হবে তত নিখুঁত। বাফেটের টেকনিক হলো, কমপক্ষে ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করা। তার রাফ খাতায় একটি কোম্পানির নামের নিচে লেখা ছিল— ১৯৯৯ সালে ১ দশমিক ৩, ২০০০-এ ১ দশমিক ৪৮, ২০০১-এ এসে ১ দশমিক ৬, ২০০২-তে ১ দশমিক ৬৫, ২০০৩-এ ১ দশমিক ৯৫, ২০০৫-এ ২ দশমিক ১৭, ২০০৬-এ ২ দশমিক ৩৭, ২০০৭-এ ২ দশমিক ৬৮ ও ২০০৮-এ শেয়ারপ্রতি আয় ২ দশমিক ৯৫ ডলার। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয়ে ক্রমোন্নতি স্পষ্ট। এটি প্রতি বছরই আয় করেছে আর সামান্য হলেও তা আগেরবারের চেয়ে বেশি।

অর্থাৎ কোম্পানির আয় বৃদ্ধি স্থিতিশীল। এমন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারাই থাকুন, বেশি ঝুঁকি নিতে হয় না তাদের। বাজারে টিকে থাকতে পণ্যের ডিজাইন পরিবর্তন বা জোরদার বিপণন কর্মসূচি নিয়েও দৌড়াতে হয় না খুব একটা। আবার আয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বলে দেয়, কোম্পানির অন্তর্নিহিত অর্থনীতিটি শক্তিশালী। ফলে ম্যানেজমেন্ট থেকে মনোযোগ কিছুটা সরিয়ে বোর্ড দৃষ্টি দিতে পারে কৌশলগত ব্যয় বাড়ানোর দিকে (প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়া, নতুন ব্যবসা খোলা প্রভৃতি)।

আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি আয়ের হিসাব অনেকটা এ রকম— ১৯৯৯ সালে ৮ দশমিক ৫৩, ২০০০-এ ৬ দশমিক ৬৮ (লস), ২০০১-এ ১ দশমিক ৭৭ (লস), ২০০২-এ ৩ দশমিক ৩৫, ২০০৪-এ ৬ দশমিক ৩৯, ২০০৫-এ ৬ দশমিক শূন্য ৫ (লস), ২০০৬-এ ৩ দশমিক ৮৯, ২০০৭-এ দশমিক ৪৫ (লস) ও ২০০৮ সালে ২ দশমিক ৫০ ডলার। অনেকে ভাবতে পারেন, এক-দুই বছর লস করেছে তো কী? প্রতিষ্ঠানটি তো ভালো মুনাফাও করেছে মাঝে মধ্যে। বিভ্রান্ত হবেন না। এ কোম্পানি পড়েছে বুম-বাস্ট সাইকেলে। বুম হলে চাহিদা বাড়ছে, বাড়ছে বেচা-বিক্রি এবং মুনাফা করছে কোম্পানিটি।

সমস্যা হলো, বাজারে অতিরিক্ত চাহিদা দেখে সীমা অতিক্রম করে ফেলে এসব প্রতিষ্ঠান। মুনাফা দেখে উত্পাদন বাড়াতে যায়; বাড়তি লোক নেয়, নতুন মেশিনপত্র বসায়। এখানে একটি মজার বিষয় রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠান উত্পাদন বাড়ানোয় অনেক ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবার দাম যায় কমে। বুমই তাদের ঠেলে দেয় বাস্টের পথে।

এরা তখন দিশেহারা হয় বাড়তি লোকবল ও নতুন মেশিনপত্র বাবদ ব্যয় সামলাতে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে লাগামছাড়া বিনিয়োগ করুন বা একে ঘিরে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখুন— আপনার ভবিষ্যৎ ফর্সা হয়ে যাবে। বাফেট নিজেও এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে লোকসানে পড়েছিলেন। কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ হলো দ্বিতীয় টেস্ট। কোনো প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের বড় ঋণ থাকার অর্থ— হয় ব্যবসাটি খুব প্রতিযোগিতামূলক (তার মানে মুনাফা বাড়াতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালাতে হবে বিনিয়োগকারীকে); নয়তো এটি জলহস্তী।

সারা বিশ্বে বহু প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামোই এমন, আয়ের তুলনায় বেশি হয়ে যায় তাদের ব্যয়। ‘এক্সট্রা-লার্জ’ সাইজ হওয়ায় এগুলো নড়াচড়া করতে পারে না; খাইয়ে দিতে হয় মুখে তুলে। এখানে কাজ হয় কম, আড়ম্বরের শেষ নেই। আউটলেট বন্ধ থাকলেও উত্সবের রাতে ঝাড়বাতি জ্বালিয়ে রাখে এরা। মন্দা দেখা দিলে এসবে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয় আগে।

বিনিয়োগ বা চাকরির নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ হলে এগুলোর কাছেও যাওয়া যাবে না। বাফেটের থিওরি হলো, কোনো প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিট আয়ের পাঁচ গুণের বেশি হওয়ার অর্থ এটি জলহস্তী। আর এখানে বিনিয়োগ করা মানে সাঁতার না জেনে সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়া। আরেকটি টেস্ট, কোম্পানির গ্রস প্রফিট মার্জিন নির্ণয়। এটিও হিসাব করা সহজ।

সে জন্য প্রথমে দরকার কোম্পানির বার্ষিক আয় বিবরণী। ধরা যাক, এক প্রতিষ্ঠানের মোট আয় ১০ লাখ ডলার। এদিকে মজুরি, বিপণন ব্যয়সহ একই বছর তাদের ব্যয় ৬ লাখ ডলার সাকুল্যে। এ ক্ষেত্রে ৪ লাখ ডলার হাতে থাকবে আয় থেকে ব্যয় বিয়োগ করলে। এটিই কোম্পানির গ্রস প্রফিট।

অবশ্য এটি দেখে প্রতিষ্ঠানের ডিউরেবল কম্পিটিটিভ অ্যাডভানটেজ নির্ণয় করা যায় না। এটি পাওয়া যায় গ্রস প্রফিট মার্জিন থেকে। এ অবস্থায় গ্রস প্রফিট ৪ লাখকে মোট আয় ১০ লাখ ডলার দিয়ে ভাগ ও প্রাপ্ত ফলকে ১০০ দিয়ে গুণ করলে উত্তর আসবে ৪০ শতাংশ। আলোচ্য কোম্পানির গ্রস প্রফিট মার্জিন এটি। বাফেট বলেন, টেস্টটি কোনো কোম্পানির ডিউরেবল অ্যাডভানটেজ নির্ণয়ের শর্টকাট।

শেয়ারপ্রতি আয়ের মতো এ ক্ষেত্রে ১০ বছরের তথ্য-উপাত্ত লাগে না। যেকোনো একটি বছরের আয় বিবরণী থাকলেই চলে। বাজারে পণ্য বা সেবার দাম নির্ধারণে কোম্পানি কতটা স্বাধীনতা ভোগ করছে, তাও বোঝা যায় এ থেকে। ওয়ারেন বাফেটের মতে, সফল প্রতিষ্ঠানের গ্রস প্রফিট মার্জিন থাকে সাধারণত ৫০-এর ওপর। বিনিয়োগের আগে তিনি এ ছোট্ট হিসাবটি সেরে নেন।

তার রাফ খাতায় লেখাই আছে অনেক প্রতিষ্ঠানের গ্রস প্রফিট মার্জিন। তার নোটসহ সেখান থেকে কিছুটা তুলে ধরা যায়। কোকাকোলার গ্রস প্রফিট মার্জিন ৬০ (স্থিতিশীল), রেটিং কোম্পানি মুডিস ৭৩, বার্লিংটন নর্দান রেলরোড ৬১ ও রিগলি গামের ৫১ শতাংশ প্রভৃতি। ঝুঁকিপ্রবণ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় গ্রস প্রফিট মার্জিনের উল্লেখ ছিল এভাবে— ইউনাইটেড এয়ারলাইনস (আপদমস্তক দেউলিয়া) ১৪, জেনারেল মোটরস ২১ (পক্ষাঘাতগ্রস্ত) ও ইউএস স্টিল ১৭ শতাংশ (মাঝে মধ্যে লোকসানেও পড়ে)। মজার একটি বিষয় দেখা গেল বাফেটের খাতায়।

গাড়ির চাকার ব্যবসার নির্দিষ্ট সিজন নেই। অনেকের ধারণা, সারা বছরই যেহেতু চলে; এ ব্যবসায় লস নেই। আসলে ধারণাটি ভুল। বাফেট উল্লেখ করেছেন, গুডইয়ার টায়ারের গ্রস প্রফিট মার্জিন ২০ শতাংশ। তার মানে, এ ধরনের ব্যবসার অন্তর্নিহিত অর্থনীতি শক্তিশালী নয়।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের গ্রস প্রফিট মার্জিনও নির্ণয় করা যায় এভাবে। প্রযুক্তির ব্যবহার অবশ্য এড়িয়ে চলেন বাফেট। ফলে এ শিরোনামের পাশে লেখা— ‘ঠিকমতো বুঝি না’। ওয়ারেন বাফেটের - ম্যানেজমেন্ট সিক্রেটস - পর্ব-১ক্যারিয়ারের জন্য কেমন প্রতিষ্ঠান ভালো? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।