লিখতে ভালোবাসি যাস্ট কাজ নয়, দায়িত্ব দিন ম্যানেজারদের
বাফেট যখন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে কেনেন, তখন এটি ছিল দেনার দায়ে জর্জরিত ক্ষুদ্র টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার। এটি এখন মাল্টিন্যাশনাল জায়ান্ট। এর উল্লেখযোগ্য শেয়ার রয়েছে কোকাকোলা, গোল্ডম্যান স্যাকস, জনসন অ্যান্ড জনসন, ওয়াশিংটন পোস্টের মতো কোম্পানিতে। এর অধিভুক্ত কোম্পানিও শতাধিক। বাফেট মনে করেন, বার্কশায়ার ছোটই থাকত একটি বিষয় তার উপলব্ধিতে না এলে।
সেটি হলো, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা চলবে না, রাখলে প্রতিষ্ঠান বড় হওয়ার সুযোগ পাবে না।
ব্যবসা বড় হলে এমনিতেই একা সবকিছু সামলানো কঠিন এবং তা বোকামিও। এমন চেষ্টায় যারা নিজেদের নিযুক্ত রাখেন, তাদের অবস্থা ওই লোকটির মতো, যিনি আকাশে ১০০টি বিভিন্ন রঙের টেনিস বল ছুড়ে দিয়ে সবই ধরতে চাইছেন। তার টার্গেট বেশি থাকায় ধরে রাখা যাচ্ছে না ফোকাস। শেষ পর্যন্ত কোনো বলই ধরতে পারছেন না তিনি।
প্রতিটি ব্যবসারই নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য তথা ধারা রয়েছে। এটি মুদি দোকানের ক্ষেত্রে এক রকম আর পেপসির মতো জায়ান্ট করপোরেশনের বেলায় ভিন্ন। দেখা যায়, যে ব্যবসায়িক কৌশল পেপসির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমহীনভাবে সফল, সেটি মুদি দোকানে প্রয়োগ করলে কিছুই মিলছে না— ব্যর্থতা ছাড়া। কিছু কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো পরিচালনা করতে লাগে বিশেষায়িত জ্ঞান। যেমন অবকাঠামো নির্মাণ, পরিবহন ব্যবসা প্রভৃতি।
কোনো চেয়ারম্যান যদি এসবে নিজের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান, তার বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থাকতে হবে। আর সেটি হতে হবে সিইও, ম্যানেজারদের চেয়ে বেশি। কথা হলো, কারও যদি একাধিক এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকে? ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত রাবণের মতো ১০টি মাথা থাকলেও সেটি এ যুগে এ ক্ষেত্রে কাজে আসবে কি? ফলে বাফেট স্থির করেছেন, যে বিষয় খুব ভালো বুঝি না, তা একেবারেই বুঝতে চাই না। আমাকে সবকিছু বুঝতে হবে কেন? তাই অনেক বোর্ড চেয়ারম্যানের ৯৮ শতাংশ ক্ষমতাই নিজের হাতে রাখার যে ‘স্বাভাবিক প্রবণতা’ রয়েছে, তার বিপরীতে বাফেটের নীতি হলো, প্রতিষ্ঠানকে সিইও-ম্যানেজারের হাতে এমনভাবে ছেড়ে দিন, যাতে তারা অনুভব করেন চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। সব দায়-দায়িত্ব এখন তাদের ঘাড়ে।
এর আগে কয়েকটি পূর্বশর্ত পালন করতে হবে। দেখতে হবে, যাকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে, তার বুদ্ধি-বিবেচনা কেমন? ওই ব্যবসা সম্পর্কে কতটুকু জানেন? বিশেষ মানবিক গুণ থাকলেও বুদ্ধিহীন লোকের পক্ষে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। আরামপ্রিয়দের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না; প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়েন এরা। আন্তরিকতা কম থাকা ব্যক্তিদের আবার উন্নতির চেষ্টা থাকে না খুব একটা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ম্যানেজারের সততা ও চারিত্রিক সংহতি।
অসৎ সিইওর ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই দেখা গেছে, এরা নিজ স্বার্থে তাদের সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তা, পরিশ্রম ও আন্তরিকতা কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের লাল বাতি জ্বালিয়ে ভেগে যাচ্ছেন। বাফেটের মতে, দৃষ্টি একটু প্রসারিত ও ধারালো হলে ম্যানেজার-সিইও হিসেবে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। এক ধরনের মানুষ আছেন, যাদের কাছে পেশা শুধু উপার্জনের মাধ্যম নয়, ব্যক্তিগত গর্বও বটে। পেশাগত সমস্যা-জটিলতায় আক্রান্ত হলে এরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন সেখান থেকে বেরিয়ে আসার; অনুকূল সময়ে তাদের চেষ্টা থাকে উন্নতির। সর্বোচ্চ সুফল পেতে চাইলে এদের ওপর কাজ চাপানো চলবে না; দায়িত্ব দিতে হবে।
এ ধরনের ব্যক্তিরা কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকেন স্বাধীনচেতা। মানুষ কোনো ক্ষেত্রকে আপন ভাবতে শুরু করলে সেখানে কিছু স্বাধীনতা চায়-ই। খেয়াল রাখতে হবে এদিকে।
এ জীবনদর্শন অনুশীলন করেন বাফেট। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান চিরকুট পাঠাচ্ছেন এমডি-সিইওর কাছে— ‘এটা করলেন না কেন’ কিংবা ‘ওটা করুন’।
কিন্তু বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের অধীন সব সিইওকে বলা আছে, এ ধরনের কোনো নোট তাদের কাছে যাবে না বাফেটের পক্ষ থেকে। বার্কশায়ারের অধীন ফরেস্ট রিভারের এমডি পিটার রিগল জানতে চেয়েছিলেন, কোম্পানির বার্ষিক মিটিংয়ে থাকবেন কি না চেয়ারম্যান (বাফেট)। উত্তর এল, বছরে একবারের বেশি দেখা হবে না। ম্যাকলেইন কোম্পানির সিইও গ্র্যাডি রোজিয়ারের একবার জরুরি হয়ে পড়ে কোম্পানির জন্য কয়েকটি নতুন জেটবিমান কেনা। বিপুল অর্থের দরকার ছিল তাতে।
একা সিদ্ধান্ত নিতেও পারছিলেন না। বাফেটকে জানালেন, কী করবেন? তিনি জবাব দিলেন, আপনার প্রতিষ্ঠান। আপনিই বুঝবেন কোন সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়।
মেরি বাফেট ও ডেভিড ক্লার্কের বই থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তর
আরো পোস্ট গুলো এইখানে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।