লিখতে ভালোবাসি যাস্ট ভাগ্যের শিকার না ভাগ্যশিকারি?
সাফল্যের পূর্বশর্ত কী? কেউ কেউ জীবনে উন্নতি করতে পারেন না কেন? কোন কৌশলে ধনী হন মানুষ? প্রত্যেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তা কোনটি? চরম প্রতিকূলতার মাঝেও ঘুরে দাঁড়ান কোনো কোনো নেতা। টেনে তোলেন জাতিকে। নিয়ে যান উন্নতির শিখরেও। কোন ক্ষমতাবলে?
কৌশলটি ওয়ারেন বাফেট শিখেছিলেন তার বাবা হাওয়ার্ড বাফেটের কাছে।
ভদ্রলোক ছিলেন একটু ক্ষ্যাপাটে। ভাগ্যে বিশ্বাস করতেন না একেবারেই। বলতেন, মানুষ নিজে তার ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক। ত্রিশের দশকে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ দেখা দিল ইউরোপ-আমেরিকায়। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল জনগণ।
লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে ঘুরতে থাকল আমেরিকার রাস্তায় রাস্তায়। গুজব ছড়াতে লাগল— এ থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই; মন্দায় ব্যবসা-বাণিজ্য সব শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরলেন হাওয়ার্ড। মন্দার মধ্যেও সফলভাবে ব্যবসা করা সম্ভব। নেমে পড়লেন এবং সফলও হলেন তিনি।
এরই মধ্যে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে উপলব্ধি করলেন, অর্থনীতির গণ্ডগোলটা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। এটি দূরীকরণে সরকারকে প্রভাবিত করতে হবে সরাসরি। কিন্তু তার উপায়? হাওয়ার্ড সিদ্ধান্ত নিলেন, জনপ্রতিনিধি হবেন। ১৯৪৩ সালে নেব্রাস্কা সেকেন্ড ডিস্ট্রিক্ট থেকে ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের নির্বাচিত সদস্য হলেন তিনি। ট্রুম্যান ডক্ট্রিনের (নীতি) কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি।
তার বিশ্বাস ছিল, যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্ট আর্থসামাজিক সংকটের অন্যতম কারণ বরং এটি। ফলে সুযোগ পেলেই ওই ডক্ট্রিনের তীব্র সমালোচনা করতেন কংগ্রেসের ভেতরেই। দুই বছর বাদ দিয়ে ১৯৪৩ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন কংগ্রেসে। প্রথমবার সম্মানী পান মাসিক ১০ হাজার ডলার। দ্বিতীয়বার পয়সাকড়ি তুলতে গিয়ে দেখেন, ১২ হাজার ৫০০ ডলার করা হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের সম্মানী।
হাওয়ার্ড ১০ হাজার ডলার তুললেন। বাকি অর্থ জমা দিলেন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। নোট পাঠালেন কংগ্রেসে— প্রদত্ত ‘সার্ভিসের’ জন্য ১০ হাজার ডলারের বেশি সম্মানী প্রত্যাশা করেন না তিনি। পরিবার ভরণপোষণের জন্যও ১০ হাজারই যথেষ্ট; ১২ হাজার ৫০০ ডলারের প্রয়োজন নেই তার।
এই হাওয়ার্ড ছেলেকে উপদেশ দিতেন, ভাগ্য যেন তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে; উল্টো ভাগ্যকেই নিয়ন্ত্রণ করতে শেখো।
জীবনে উন্নতি করতে চাইলে সিদ্ধান্ত নেবে কারও দিকে না তাকিয়ে। শেয়ারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে কথাটির মর্ম বুঝেছিলেন বাফেট। মাঝে মধ্যে বিনিয়োগকারীরা বলাবলি করতেন, অমুক কোম্পানি পড়তে শুরু করেছে, সুতরাং ওটার শেয়ার কেনা যাবে না। বাফেট সেটিই কিনতেন তখন। আবার ওয়াল স্ট্রিটে বিনিয়োগকারীরা যখন ফিসফাস করতেন— দাম বাড়ছে, আরও বাড়ুক, কয়েকটা দিন দেখি, তারপর বেচব; বাফেট তখনই বিক্রি করে দিতেন ওই কোম্পানির শেয়ার।
অভিজ্ঞতা থেকে বাফেট শিখেছেন, জনপ্রিয় ও প্রচলিত মতের বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়ে কিছু করাটা খুব কষ্টের। এতে হেরে গেলে নিজেকে ছাড়া কাউকে দায়ী করা যায় না; নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় একা। সবচেয়ে বেদনাদায়ক হলো, বিফলতার অন্তর্জ্বালা দীর্ঘদিন বহন করতে হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে। সারাক্ষণই তার মনে হতে থাকে— আরে, ওটা করতে গেলাম কেন; এটা করলেই তো হয়ে যেত। এমন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে মুক্ত করা বেশ কঠিন।
দুটি আইরিশ ব্যাংকে বিনিয়োগ করে বড় বিপদে পড়েছিলেন বাফেট। ভুল হয়েছিল কনোকোফিলিপসে বিনিয়োগের সময়ও। তখন উপলব্ধি করেছিলেন ওই অন্তর্জ্বালা। এর বিপরীতে প্রচলিত মতের পক্ষে থাকার সুবিধা হলো, এ ক্ষেত্রে বলির পাঁঠার অভাব হয় না; নিজেকে বাদ দিয়ে কোনো না কোনো কিছুকে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করা যায়ই।
জুলিয়ান রটারের বিখ্যাত মনোবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হলো, লোকাস অব কন্ট্রোল থিওরি (নিয়ন্ত্রণ স্থান তত্ত্ব)।
এটি বলে, দুই রকম মানুষ আছে বিশ্বে। এক. যারা ইন্টারনাল লোকাস অব কন্ট্রোল ক্ষমতাসম্পন্ন। তুলনায় এদের সংখ্যা কম। এ ক্যাটাগরির ব্যক্তিরা পরীক্ষায় খারাপ করলে বলেন, প্রস্তুতি ভালো ছিল না। ব্যবসায় মার খেলে দোষ দেন নিজের নেয়া কৌশলকে।
দ্বিতীয় টাইপের মানুষের (এদের সংখ্যাই বেশি) থাকে এক্সটার্নাল লোকাস অব কন্ট্রোল। এরা পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে প্রার্থনা করেন, প্রশ্ন যেন সহজ হয়; পরীক্ষকও যেন উদারভাবে খাতাটা দেখেন। এ ধরনের ব্যবসায়ীরা চান— সরকার অমুক নীতি নিক, নইলে ব্যবসা হবে কীভাবে? প্রথম টাইপের ব্যক্তিরা ব্যস্ত থাকেন নানা সমস্যার সমাধানে। আর দ্বিতীয়দের মন-মগজ হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায় ওজর-আপত্তি।
প্রশ্ন হলো, কারও যদি ইন্টারনাল লোকাস অব কন্ট্রোল না থাকে বা এটি অর্জনেও ব্যর্থ হয় কেউ? তিনি কি ভালো নেতা বা ম্যানেজার হতে পারবেন না? এর সোজাসাপ্টা উত্তর বাফেটের কাছে নেই।
তবে একবার তিনি বলেছিলেন, দূর থেকে কিছু দম্পতির সম্পর্ক দেখলে মনে হয়— অচিরেই সংসারটা ভেঙে যাবে। অথচ বাস্তবে সুখীই তারা। আবার কিছু দম্পতির বাহ্যিক সুখ দেখে ঈর্ষান্বিত হন অন্যরা। ভাবেন, এদের মতো কে আর আছে? অথচ এ পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে রয়েছে গভীর ও অসমাধানযোগ্য জটিলতা। বাফেটের ইঙ্গিত বোধহয় কারও যদি ইন্টারনাল লোকাস অব কন্ট্রোল না থাকে, তার উচিত হবে দ্বিতীয় পথটি অনুসরণ করা।
মেরি বাফেট ও ডেভিড ক্লার্কের বই থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তর জায়েদ ইবনে আবুল ফজল
লেখাটি এই ওয়েব সাইট থেকে সংগ্রহিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।