আমাদের আজকের জরিপের বিষয়, ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে কি নড়ে না’।
এইতো ধারেকাছে একজন উষ্কখুষ্ক টাইপের মধ্যবয়স্ক পথচারীকে দেখা যাচ্ছে-
‘এক্সকিউজ মি, আপনার কি মনে হয়, ধর্মের কল কি বাতাসে নড়ে?’
-‘দেখুন, বায়ুকল ছাড়া এবং অতীব তীব্র হুতাশন ব্যাতিত আর কোন উপায়ে বায়ুযোগে কোন কল নড়ে বলে আমার জানা নাই। যেকোনো কলকেই অত্যাধিক বাতাস বরাদ্দ করে নড়ানো সম্ভব। তবে ধর্মের কল জাতীয় কিছু আপনি বললেন, ইহা কিরূপ কল? বায়ুকল গোত্রের, পানির কল গোত্রের নাকি ইঁদুর মারা কল গোত্রের জানাইলে কৃতার্থ হইতাম!’
আঁতকে উঠতে হল, আপদ! সাধু-চলিতের বিভ্রান্তিতে এই ধরনের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা অনুধাবন করা কঠিন।
-‘ইহা কলার সংক্ষেপ কল! আপনাকে ধন্যবাদ।
’
বাঁচা গেলো। এবার ওই লিকলিকে তরুণটাকে জিজ্ঞাসা করা যাক- দেখে আঁতেল টাইপ মনে হচ্ছে না।
‘হ্যাললো ফ্রেন্ড, আপনার কি মনে হয়, ধর্মের কল কি বাতাসে নড়ে?’
-‘হোয়াট ডিউড?! ধর্মের খল? ইউ মীন ডাকাডাকি মার্কা খল? দেখো ম্যান, ধর্মগুরুরা ধর্মের ডাক দিবে এইটা তো ন্যাচারাল। উই ডোন্ট ব্লেইম দেম। তবে রেলিজিয়াস পারসনরা প্লেনে করে উড়বে।
!@#৳%ঁ&*# শিট, হোয়াট ওয়াজ দা কোশ্চেন আগেন?’
-‘নেভার মাইন্ড অ্যাবাউট দা মেটাফোর। ইউ ইট ইয়র শিট- আই মীন- রেলিজিয়ন! আই মীন- থ্যাঙ্ক ইউ। ’
সর্বনাশ! কোথায় এসে পড়লাম! আহ, দূরে একজন আলেম শ্রেণীর ব্যাক্তি দেখা যাচ্ছে- সম্ভবত তাঁর কাছে আমরা কিছু জ্ঞানী মতামত পেতে পারি।
‘স্লামালিকুম, ধর্মের কল কি বাতাসে নড়ে কিনা এই ব্যাপারে আপনার মতামত?’
-‘ওয়ালাইকুম সালাম। আপনাকে দেখেতো ভদ্র ঘরের সন্তান মনে হয়, কিন্তু আপনি এইগুলা কি প্রশ্ন করতেছেন? ধর্মকে কলের সাথে তুলনা করতেছেন কেন? ধর্ম একটা পবিত্র জিনিস, এটাকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করবেন না।
আপনার কি পরকালের ভয়ডর নাই? খোদার কাছে কি জবাবদিহি করবেন? মুনকার-নাকিরের প্রশ্নের উত্তর জানেন? একি, আপনি দৌড় দিচ্ছেন কেন? দাঁড়ান, বহুত ফায়দা হবে......’
উফ! জানে বাঁচলাম! আরে, ওইতো, বিজ্ঞানীগোছের একজন মানুষ, তাঁর কাছ থেকে সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা জানা যাক-
‘হাই, আপনার কি মনে হয়, ধর্মের কল কি বাতাসে নড়ে?’
-‘কি? হাহাহা, ধর্মের কল! ভাই, আমার কাছে জানতে চাইছেন কেন? হুম, শোনেন তাহলে, ধর্মের কলকে ৯১১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কন্সেনট্রেটেড হাইড্রোক্লোরিক এসিডে মার্কারি সহযোগে উত্তপ্ত করে তাতে ইলেক্ট্রোপ্লেটিং করে বাতাসের আণবিক কণাগুলোর সাথে তড়িৎ আবেশ প্রক্রিয়ার সূচনা করলে অবশ্যই ইলেকট্রন প্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপে গ্রীনহাউস ইফেক্ট হবে। যার ফলে ভূমিকম্পের উদ্রেক হবে এবং পুরো বিশ্ব নড়ে উঠবে। সো, অবশ্যই ধর্মের কল বাতাসে নড়ে (proved)। ’
আহ! কি আরামদায়ক আলস্য! আঁক!, সেরেছে, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নাকি! আশেপাশে ধূর্ত সাইন্টিস্টটার হদিস নাই।
যাই হোক, একজন শিক্ষকের কাছ থেকে আশা করি কোন সদুত্তর পাব।
‘জনাব, আপনার মতে, ধর্মের কল কি বাতাসে নড়ে?’
শিক্ষক সাহেব মনে হল একটু ভড়কে গেলেন, ‘ইয়ে মানে, এইটা তো আমার সাবজেক্টে মানে সিলেবাসে নাই। এইটা কি সৃজনশীল কোশ্চেন? কোন সৃজনশীল গাইডে কি পাওয়া যাবে? ব্রড কোশ্চেন নাকি শর্ট? বোর্ড কোশ্চেন? প্লিজ ভাই, জানিয়ে উপকার করেন। ’
বাপস, টিচার তুসি গ্রেট হো বাট নো তোফা। মাথা ঘুরছে, আচ্ছা দেখা যাক, একজন খেটে খাওয়া মানুষ পাওয়া গেছে, সে পাথর ভাঙ্গায় ব্যাস্ত।
‘জনাব, আপনার মতে, ধর্মের কল কি বাতাসে নড়ে?’
-‘কি কন?’
-‘জি, বলছিলাম, মানে আপনার কি মনে হয় ধর্মের বিভিন্ন দিক কি সবার জন্য একইরকম বা আসলে বিভিন্নভাবে পরিবর্তন হয় কিনা বা কোন চাপের মুখে ধর্মের বিভিন্ন শাখা পরিবর্তন হয় কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি...’
-‘ভাইয়া, আমরা গরিব মানুষ, অতশত বুঝি না।
যে যা কয় আমাগো কাছে ধর্ম তাই-ই। আমরা সারাদিন কাম করি আর দিনশেষে ঘুম দেই। ধর্ম হইল ধনীগো খেলার জিনিস আর হুজুররার জীবন। হেরা যা কয় তাই আমরা মানি। হেরা চাইলে হইবার পারে পরিবর্তন।
’
এটাই কি উত্তর? নাকি আগেরগুলো? বুঝতে পারছি না। এই ব্যাপারে কারো তেমন উৎসাহওতো চোখে পড়লো না। চারপাশের মানুষগুলোর (সত্যিকারের মানুষগুলো, এই লেখার কাল্পনিক মানুষগুলো নয়) মধ্যে তো সাম্প্রদায়িকতা দেখি না, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িও করতে দেখি না তাদের। আশেপাশের কেউ বলে না তাদের ধর্ম বাড়াবাড়ি করতে নির্দেশ দিয়েছে। তাহলে ধর্মকে ব্যবহার করার অধিকার জঘন্য সাম্প্রদায়িক মানসিকতাসম্পন্ন মানুষদের কে দিল? ধর্মের কল বাতাসে নড়ে কিনা তার মীমাংসা হবে কিভাবে?
নিশ্চয়ই নড়ে, নইলে দেশে এতো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।