যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার... অনুরাগ বসু, জন্মগত ভাবে তিনি একজন বাঙ্গালী। পেশায় ফিল্ম-মেকার। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ফিল্ম-মেকার এর জন্ম হয়েছিল ভিলাই, ছাত্তিশগারে। পরিচালক হিসেবে তার আবির্ভাব হয় ১৯৯৩ সালে হিন্দি টেলিভিশন ডেইলি সোপ "তারা" পরিচালনার মাধ্যমে। এরপর তিনি আরও বেশ কিছু জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল তৈরি করেন।
বলতে গেলে এই টিভি সিরিয়াল পরিচালনাই তাকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পথ সুগম করে দেয়।
অনুরাগ বসু চলচ্চিত্র তৈরি সুরু করেন ২০০৩ সালে, তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র "ছায়া" যা সমালোচক কিংবা বক্স অফিস কাউকেই খুশি করতে পারেনি। কারন হিসেবে সবাই দুর্বল চিত্রনাট্যের উপর দোষ চাপিয়েছিল। মহেশ ভাট দের প্রযোজনা সংস্থা থেকে এই ছবিটির পাশাপাশি তার পরবর্তী তিনটি ছবি "মার্ডার, গ্যাংস্টার, এবং তুমসে নাহি দেখা। ২০০৪ সালে তুমসে নাহি দেখা চলচ্চিত্রের স্যুটিং চলাকালে তিনি আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধি ব্লাড ক্যানসার এ।
ডাক্তাররা সময় বেধে দেন মাত্র দুই মাস। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে তিনি চলচ্চিত্রটির বাকি অংশের নির্দেশনা দেন, আর তার নির্দেশনায় বাকি কাজ সেশ করেন আরেক চলচ্চিত্রকার মোহিত সুরি। এরপর শুরু হয় ক্যানসার এর সেশ চিকিৎসা কেমোথেরাপি। চলে একটানা তিন বছর। চিকিৎসা বিজ্ঞ্যানের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন।
আর এই কারনে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি তাকে প্রদান করেন ক্যানসার সারভাইবার অফ দি ইয়ার ২০০৫।
যার জন্ম হয়েছে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্যে তাকে আটকাবে এমন শক্তি কার আছে, তাই তো সুস্থ হয়েই ২০০৬ সালে তিনি তার নতুন চলচ্চিত্র লাইফ ইন আ মেট্রো তৈরিতে নেমে পরেন। ২০০৬ সালে লাইফ ইন আ মেট্রো মুক্তি পায় আর অনুরাগ বসুকে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নতুন করে চিনতে পারে।
মূলত এই একটি চলচ্চিত্রই অনুরাগ বাসুকে পরিচালক হসাবে সুশিল সমাজে পরিচিতি প্রদান করে। ২০০৮ সালে লাইফ ইন আ মেট্রো চলচ্চিত্র তাকে এনে দেয় শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে খ্যাতি, পান ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস, স্টার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস, ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস ইত্যাদি।
এরপর ২০১০ সালে মুক্তি পায় বহুল আলোচিত কিংবা সমালচিত চলচ্চিত্র "কাইটস"। এই চলচ্চিত্রটির কারনে তাকে সমালচকদের তোপের মুখে পরতে হয়। সবাই ধরেই নিয়েছিল অনুরাগ বাসুর চলচ্চিত্র জগতের ক্যারিয়ার হয়তো শেষ। কিন্তু সমালোচকরা তাকে ঠিক চিনতে পারেনি, যাকে ক্যানসার পর্যন্ত কাবু করতে পারলো না, তাকে কিনা একটি ব্যার্থ চলচ্চিত্র থামিয়ে দেবে??? না দেয়নি। তিনি নতুন করে ভাবতে বসেন।
লেখেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য "বারফি"। একজন বোবা নায়ক আর একজন অটিস্টিক নায়িকা নিয়ে লেখা অসাধারণ প্রেমের চিত্রনাট্যকে চলচ্চিত্রে রুপদান করতে বেছে নেন গুনি অভিনেতা রনবির কাপুর ও গুনি অভিনেত্রি প্রিয়াঙ্কা চোপরাকে। অসাধারণ চিত্রনাট্য, গুনি অভিনেতা, অভিনেত্রি, আর অনুরাগ বসু এই তিনে মিলে তৈরি হল এক অদ্ভুত চলচ্চিত্র "বারফি"। চলচ্চিত্রটির মুক্তির এক সপ্তাহের মধ্যে আয় করল রেকর্ড ৫৮.৬ কোটি রুপি। আর সেই সাথে আরও ১৯টি চলচ্চিত্রকে পিছনে ফেলে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ছবির ক্যাটাগরিতে অস্কার এর জন্য মনোনীত হল।
চারিদিকে "বারফির" জয়জয়কার। আবারও লাইম্ লাইটে চলে এলেন একজন গুনি চলচ্চিত্র নির্মাতা "অনুরাগ বসু"।
বিঃ দ্রঃ কোন মুভি নিয়ে আমি এর আগে কখনো পোস্ট দেই নাই, কিন্তু "বারফি" দেখার পর আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। এই মুভিটি নিয়ে আমি খুব বেশি কিছু লিখি নাই, বরং এই মুভিটি তৈরির পিছনের মানুষটিকে নিয়ে লিখেছি, কারন আমি সবসময় বিশ্বাস করে এসেছি যে, একটি ভালো চলচ্চিত্র দুইটি কারনে ভালো হয়। ভালো পরিচালক আর ভালো চিত্রনাট্য।
বারফি দেখার পরে অনুরাগ বসু সম্পর্কে জানার খুব আগ্রহ হল। শুধু জানতে চাচ্ছিলাম কি করে একটা মানুষ এতো সুন্দর একটি চিত্রনাট্য লিখতে পারে, আবার লিখিত গল্পকে চলচ্চিত্রে রুপদান করতে পারে। এই আগ্রহ থেকেই অনুরাগ বসুর এই সংগ্রামী জীবনের খোঁজ পেলাম। তাই সবাইকে জানানোর ইচ্ছাকে সংবরন করতে পারলাম না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।