আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবারের ঈদ আমার জীবনে বেদনার আরেক নাম

আমি নতুন কিছু পড়তে ভালবাসি ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। যার জীবনে কোন সুখ নাই তার জীবনেও ঈদ সুখ নিয়ে আসে। কিন্তু এবারের ঈদ আমার জীবনে সুখ নিয়ে আসতে পারে নাই। ঈদটা আমার কাছে পানসে পানসে মনে হয়েছে। নিয়মিত যে নামাজ পড়ি ঈদের দিন সকালেও তেমন নামাজ পড়েছি বলেই মনে হয়েছে।

ব্যতিক্রম শুধু কুরবানীটা। ঈদের রাতে যখন ঘুমুতে গেলাম তখন কেন জানি হাজার চিন্তা মাথায় এসে জড়ো হলো। কোন মতেই ঘুম আসতে চাচ্ছে না। অথচ সেদিন আমার শরীর ছিল খুব বেশি ক্লান্ত- দ্রুত ঘুম আসাই স্বাভাবিক। এই চিন্তা সেই চিন্তায় মাথাটা যেন ভার হয়ে আছে।

শুধু মনে হচ্ছিল- কালকে ঈদ, কিন্তু মায়ানমারের মুসলমানেরা কিভাবে ঈদ করবে! বৌদ্ধরা মুসলমানদেরকে মেরে মেরে শেষ করে দিচ্ছে, যারা মারা যাচ্ছে তারাতো বেশ ভালই আছে, অন্তত দুনিয়ার কষ্ট ভুলে গিয়ে আখিরাতের পথে পা বাড়াতে পেরেছেন কিন্তু যারা বেঁচে আছেন তাদের যে কোথাও জায়গা নাই। নিজের দেশে তাদের জায়গা নাই, ঠাঁই নাই পাশের কোন মুসলিম দেশেও! আজ তারা নিজ দেশে পরবাসী। মুসলমানদেরকে যখন তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তখন তারা সাগরে পাড়ি জমাচ্ছেন, অন্যদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় চাইতে এলে আশ্রয় না পেয়ে বরং গুতা খেয়ে আবারও তাদেরকে গহীন সাগরে ভাসতে হচ্ছে। মনে হয় সাগরই তাদের আবাস্থল, সাগরই তাদের ঠিকানা, হয় সাগরে ভাসতে ভাসতে একসময় কংকাল হয়ে ম্যৃত্যুর মুখে ঢলে পড়া নয়তো তাদের কোন দস্যুর আঘাতে জীবনের সাধ মিটিয়ে নেওয়া। ঈদ, এটা তাদের কাছে সবচেয়ে খারাপ একটা শব্দ।

তাদের কাছে ঈদ মানে খুশি নয়, তাদের কাছে ঈদ মানেই বেদনার দিন- কষ্টের দিন। আপনারাই বলুন এই চিন্তা কারো মাথায় আসলে কি আর ঘুম ধরে বা ঈদ ভাল লাগে। শুধু মায়ানমার নয়, আজকে কাশ্মীর, চেচনিয়া, বসনিয়া, ইরাক সহ অনেক দেশেরই এই অবস্থা। তারা কিভাবে ঈদ করবে একটু ভেবে দেখেছেন কি! এসবই শুধু আমার মাথায় ঘুর-পাক খাচ্ছিল। আচ্ছা বলুনতো যেই শিশুর আব্বা নাই- মা নাই তাদের ঈদটা কেমন হতে পারে! যাদের সন্তান আছে কিন্তু তাদের সেই সন্তান শত্রুর গুলির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছে আর তার পাশে বসে বাবা-মা দিনাতিপাত করছেন তাদের ঈদ কেমন হতে পারে! যেখানে তারা সার্বক্ষনিক মৃত্যুর প্রহর গুনছে সেখানে ঈদ হয় কিভাবে! যেখানে মসজিতে নামাজ পড়তে ঢুকলে শত্রু বাহিনী মসজিদ গুড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে মেরে ফেলছে সেখানে মাঠে গিয়ে নামাজ পড়বে কিভাবে! শুধু বহির্বিশ্বের কথা বলছি কেন আমার দেশেরও কি অবস্থা ভাল।

সেই চিন্তায় যেন মাথাটা আরও বেশি করে ধরে আসছে। আপনি চিন্তা করতে পারেন সাগর-রুনীর একমাত্র ছেলে মেঘ, ইলিয়াস আলীর মেয়ে সহ এমন অসংখ্য শিশুরা কিভাবে ঈদ করছে! তাদের কাছে ঈদ কি কখনও আনন্দ বয়ে আনতে পারে? ঈদের কথা শুনলেই তো তাদের সর্বপ্রথম মনে হবে প্রিয় বাবা-মায়ের কথা। আর যখনই বাবা-মায়ের কথা মনে হবে তখনই ঈদ তাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে কোথায় যে হারিয়ে যাবে কে তার হিসাব রাখে। কত শত নিরাপরাধ মানুষ আজকে জেলে বন্দি হয়ে আছে তাদের বাড়িতেও ঈদ কল্পনা করা যায় না। ঈদ শব্দটা তাদের কষ্টকে আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।

বলুনতো এতসব অসঙ্গতি দেখেও কি ঈদের খুশি মনে থাকতে পারে, জানি এই প্রশ্ন আজ অনেকেরই। ঈদের একদিন পূর্বে একজন দ্বীনি ভাই ফোনে মেসেজ দিল যে, ভাইয়া দাদু মারা গেছেন। তার দাদু আমাকে খুব আদর করতেন। তাঁর মৃত্যুর খবরটা যেন আমার বুকে শেলের মতো বিধলো। একদিন পরেই ঈদ, বলুনতো তাদের ঈদটা কেমন কাটবে।

তার আব্বু-আম্মু আমাকে ফোন করে বললেন, বাবা ঘটনাতো শুনেছ, এখন নাঈমের (আমার সেই দ্বীনি ভাই) বিষয়ে তোমাকেই দেখতে হবে। নাঈম এবার ভর্তি পরিক্ষায় তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকেছে এটা নিশ্চই খুশির খবর আর এর সাথে ঈদের খুশি তার এই খুশিকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দিত, কিন্তু তার দাদুর মৃত্যুতে সেই খুশি দ্বিগুনভাবে কমে গেল, বলুনতো এসব চিন্তায় কিভাবে ঈদের খুশি অনুভব করা যায়! মোট কথা, সারা বিশ্বে নির্যাতিত মুসলিমের আর্তনাদ আর আহাজারিতে এবারের ঈদটা আমার জীবনে বেদনার আরেক নাম হয়ে থাকলো।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.