চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি জেসিকা লাল হত্যাকাণ্ড নিয়ে বলিউড শেষপর্যন্ত যে ভালো ছবিটা বানিয়ে উঠলো বছর কয়েক আগে, সেই ' নো ওয়ান কিলড জেসিকা' দেখতে দেখতে নানা বিচিত্র সব অনুভূতি হচ্ছিল। টাকা থাকলে, রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকলে কতটা কী করা যায়, সেটা আমরা খানিক জানি সবাই, এরকম ছবি দেখতে দেখতে সেই জানাটা আরো প্রসারিত হয়ে যায়। আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এই ছবি এবং বাস্তবের যে ঘটনার প্রতিরূপ এই ছবি তা এক নাটকীয় ইতিবাচক মোড় নিয়েছিল। মিডিয়া এবং তার মাধ্যমে জনমানস নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে ভারতীয় সংসদীয় এবং বিচার বিভাগের ওপর যে চাপ তৈরি করতে পেরেছিল, তা ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্ত হিসেবে ন্যায়বিচারে শেষমেষ রূপান্তরিত হতে পেরেছিল।
কিন্তু এটাও ঠিক ন্যায়বিচার খুব ব্যতিক্রমী ভাবেই এখানে এসেছিল। এরকম আরো কতগুলি বাস্তব ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে কোলকাতার মানুষকে পথে নামতে দেখেছিল। দুটির উল্লেখ করি। এক রিজওয়ানুর হত্যা মামলা। দুই তাপসী মালিক কে সিঙ্গুরে জমি আন্দোলন চলাকালীন জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা।
এই দুই ঘটনায় ন্যায়বিচার হলো না বলেই তো দেখলাম আমরা।
জেসিকা লাল সংক্রান্ত ছবিটি দেখতে দেখতে এরকম অনেক কথাই ঘুরে ফিরে আসছিলো। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেবার পর বলেছিলেন বিচার টাকা দিয়ে কেনা যায়। তথাকথিত স্যাক্রেড গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, 'বিচারব্যবস্থা' সংক্রান্ত অনেক আক্রমণাত্মক কথা। কিন্তু যে মমতা মাঝে মাঝে বিবেকের কিছু কথা, হয়ত আন্তরিকভাবেই তুলে ধন্যবাদের যোগ্যা হন, সেই তাঁকেই যখন দেখি নারী নির্যাতনের, শিক্ষক নিগ্রহের নানা ঘটনাকে তদন্তের আগেই আড়াল করতে, বিরোধীদের বা মিডিয়ার একাংশের চক্রান্ত বলে মার্কা মেরে দিতে, তখন দ্বিচারিতা দর্শনের ক্ষোভটা খুব বেশি করেই হয়।
আর প্রধান বিরোধি দল সি পি এম যে কদর্যতা চোখের সামনে তার দীর্ঘ শাসনে, বিশেষত শেষ দশকে রেখেছে, তাতে গণতন্ত্র ইত্যাদি নানা কথাকে ভাঁড়ামো, যাত্রাপালার চেয়ে বেশি গুরূত্বে দেখতে ইচ্চে হয় না। কংগ্রেস ভারতে চিরকাল আর এখনও শাসকদের প্রধান মুখপাত্র, বড়সড় ডিলের ওস্তাদ দল। সাধারণ মানুষকে ঠুলি পড়ানোতে ওস্তাদ না হলে শোষকের পক্ষে ডিল করে করে চলেও এতদিন একটানা [মাঝে জনতা, মিলিজুলি, বিজেপি অধ্যায়ের কিছু গ্যাপ সংসদীয় ব্যবস্থাকেই তো শক্তিশালী করল, যার প্রোপাগাণ্ডিস্ট হিসেবে আছে কংগ্রেস] শাসন চালানো যায় না। ভারতের বামপন্থী আন্দোলন কংগ্রেসকে দেখার প্রশ্নে বিরোধিতার সূত্রে বিভাজিত হয়েছে আর মেহনতি মানুষের ঐক্যকে এভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোই যায় নি। ১৯৬৪ র সি পি আই কংগ্রেসকে দেখার প্রশ্নে ভেঙে যায়, এখনো কমিউনিস্টদের র্যাডিকাল অংশ [ বিভিন্ন সি পি আই- এম এল, এস ইউ সি আই, এম সি সি, এম সি পি আই] আর মডারেট অংশ [সি পি আই, সি পি এম] কংগ্রেস সম্পর্কে ও সেইসূত্রে তার শাকরেদ বিভিন্ন আঞ্চলিক দল সম্পর্কে বিরোধী অবস্থানে থাকে।
কংগ্রেস এর কৌশলী রাজনীতি ও বিভাজনের মাধ্যমে জনভিতি ও ক্ষমতা নিজের অনুকূলে রাখার বিষয়টি শেষের পথে বলে অনেকে মনে করেন, বিশেষত সাম্প্রতিক সংস্কার সিদ্ধান্তের পর। কিন্তু গ্রহণযোগ্য বিকল্প না থাকায় তা সুদূর পরাহত বলেই মনে হয়। তার চেয়েও বড় কথা তার কূট কৌশলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এখনো তৈরি হয়ে উঠতে পারে নি ভারত। মাওবাদীদের মত শক্তিকে পর্যন্ত কংগ্রেস ২০০৪ এর লোকসভা ভোটে জেতার জন্য অন্ধ্রে অসামান্য কৌশলে ব্যবহার করে নিতে পেরেছিল! [মাওবাদীরা অবশ্য তাদের আঞ্চলিক নীতি বা সীমিত গেরিলা সাফল্যের জন্য নানা আঞ্চলিক শাসক দলের হয়ে প্রায়ই নির্বাচনে ব্যবহৃত হবার জায়গায় নিজেদের নিয়ে যান। ] তাই কংগ্রেসি মোহ ও সেইসূত্রে বিচার সহ নানা গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রে ক্ষমতাবানদের আস্ফালন জারীই থাকবে।
মাঝে সাঝে দু একটা জেসিকা লাল হত্যা মামলা আমাদের স্বস্তির জন্য থাকবে অবশ্য সেফটি ভাল্ব হয়ে, না না গণতন্ত্র আছে, পুরোপুরি হাওয়া হয়ে যায় নি, এই বিশ্বাসটা বজায় রাখার জন্য। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।