আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীলাঞ্জনা নামে ডেকো না দুই চোখ নোনা জ্বলে ভরো না।

রোকেয়া ইসলাম নীলাঞ্জনা নামে ডেকো না দুই চোখ নোনা জ্বলে ভরো না। শিল্পী কনকচাঁপার গাওয়া অসম্ভব সুন্দর একটা গান। আমার খুব প্রিয়। মোবাইল মেমরি থেকে প্রায়ই আমি গানটা শুনি। আজও কয়েকবার শুনলাম।

নীলাঞ্জনা... নামটা শুনলেই কিছু স্মৃতি এসে ভিড় করে মনের পাতায়। সবাই বলে স্মৃতি বড় জ্বালাময়। আমি বলি কিছু স্মৃতি সব সময়ই সুখময়। যার আবেশ থাকে সারাজীবন। তেমনই একটা স্মৃতি এবং ঘটনার কথা আমি আজ বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে চাই।

বেশ কিছু আগের কথা। তখন আমি কলেজে পড়ি। ছেলে মেয়ে একসাথে ক্লাস। প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি লাগতো পরে সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তখন বেশ ভালই লাগতো।

ক্লাসে একটা ছেলে ছিল একটু অন্য রকম। তার চলাফেরা, কথাবার্তা, জামাকাপড় সব কিছুই ছিল আগোছালো। একটু সাদাসিধে টাইপের। মোটামুটি ক্লাসের সবাই তাকে এড়িয়ে চলতো। বয়সের দিক থেকেও সবার চাইতে বড়।

পরে জানলাম বেশ কয়েক বছর গ্যাপ দিয়ে ভর্তি হয়েছে কলেজে। ঘটনা চক্রে সেই ছেলেটির সাথেই আমার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ওর সরলতা আর অকপটে ভুল স্বীকার করার ক্ষমতা তার প্রতি আমার বন্ধুত্বের মূল কারন। দেখতে দেখতে কেটে যায় এক বছর। বন্ধুত্বের গভিরতা আরও বেড়ে গেল।

তার জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা গুলোই সে আমার সাথে শেয়ার করেছে এবং করতো। আস্তে আস্তে ওর প্রতিটা কাজের ব্যাপারে পরামর্শ এবং সিদ্ধান্তের জন্য ও আমার প্রতি অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এক সময় ও আমাকে ভিন্ন একটা নামে ডাকা শুরু করলো। আর সেই নামটাই আমার জীবনের সুখময় এবং আনন্দ পূর্ণ একটা অধ্যায় এবং স্মৃতি হয়ে আছে আর থাকবে সারাজীবন। হ্যাঁ ও আমাকে নীলা (নীলাঞ্জনা) নামেই ডাকতো।

আমি যখন তার কাছে এই নামের কারন জানতে চাইলাম ও বলল “জান? নীলা সবার ভাগ্যে জুটে না আর সবার সয় ও না। তুমি আমার জীবনে নীলা পাঁথরের মত। যখন থেকে তোমার সাথে আমার পরিচয় তখন থেকে আমার ভাগ্যটা বদলাতে শুরু করেছে। আমি অনেক বদলে গেছি। সব ভুল গুলো পিছনে ফেলে নিজেকে শুধরে নিয়েছি।

আমি অনেক ভাল ছেলে হয়ে গেছি। আর এই সব তোমার জন্যই হয়েছে। আজ থেকে তোমার নাম নীলাঞ্জনা। আমি তোমাকে নীলা বলেই ডাকবো”। যদিও আমার চোখ নীল নয় তবু আমি কারো কাছে হয়ে গেলাম নীলাঞ্জনা।

সেই থেকে শুরু। আমার খুবই ভাল লাগতো যখন দেখতাম ও আমার জন্য কলেজ গেটে বা ক্লাস রুমের বাইরে অপেক্ষা করছে। এমন কি পরীক্ষার সময়ও আমার আসতে দেরি হলে ও আমার জন্য অপেক্ষা করতো। আমাকে দেখেই বলতো “তোমাকে না দেখে হলে ঢুকলে আমার পরীক্ষা যে ভালো হবে না”। ওর এসব পাগলামি দেখে আমার খুব হাসি পেত।

এভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েকটা বছর। কলেজ শেষ হল, ভার্সিটি শেষ হল। কিছু ঘটনায় ভুল বুঝাবুঝির কারনে এক সময় সম্পর্কের সুতায় টান পড়লো। ফাটল ধরল বন্ধুত্বের বিশ্বাসে। উচ্চ শিক্ষার নামে ও চলে গেল দেশের বাহিরে।

আর আমি চাকুরী, সংসার নিয়ে ব্যস্ততায় ডুবে গেলাম। আস্তে আস্তে দুজনের মাঝে দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। আর এখন দূরত্ব সীমানার শেষ প্রান্তে এসে আবিস্কার করলাম বন্ধুত্ব নামে যেই সম্পর্কের গভীরতা এক সময় দুজনের হৃদয় আলো করে ছিল তা আজ কেবল নিবু নিবু প্রদীপের শেষ শিখাটির মত মিটমিট করে জ্বলছে। যার কোন উষ্ণতাই আজ আর দুজনের দেহ মন কোনটাকেই স্পর্শ করতে পারেনা। তারপরও ও আমার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু।

আমার সেই সহজ সরল বন্ধুটি এখন এই সমাজে প্রতিষ্ঠিত একজন মানুষ। আগের মত যোগাযোগ এখন নেই বললেই চলে। চলতে পথে বা কোন অনুষ্ঠানে দেখা হয়, কথা হয় মাঝে মাঝে। হাজারো ব্যস্ততায় বন্ধুত্বের গভীরতা কমে গেছে, চাপা পরে গেছে সেই নীলাঞ্জনা নামটি। কিন্তু সেই সম্পর্কের সুখের আবেশটুকু জড়িয়ে আছে আমার হৃদয়ের গভীরে সুখ স্মৃতির ছোঁয়া হয়ে মিশে আছে আমার জীবনের সবখানে।

হয়ত তার ও আছে তবে তা কেবলি অতীত আর স্মৃতি। তাই কোন গানই হোক, কবিতাই হোক বা কারো নামই হোক যখনই নামটা শুনি আমি চমকে উঠি, পিছন ফিরে তাকাই মনে হয় আমার বন্ধুটি বুঝি আমার নাম ধরেই ডাকছে। জানিনা আমার এই লেখাটা তার নজরে পড়বে কিনা। যদি পরেও যায় তবে বলছি রাগ করোনা বন্ধু... তোমার কথা শেয়ার করেছি বলে। তুমি যেমন আমার হৃদয়ে একটা স্থায়ী আসন পেতে বসে আছ তেমনি তোমার দেয়া নীলাঞ্জনা নামটিও আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছে এবং থাকবে চিরদিন।

ভাল থেকো তুমি... যেখানেই থাক সুখে থাকো এবং ভাল থাকো...। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।