আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের মধ্য দিয়ে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হল শারদীয় দূর্গাউৎসব

‘মহা মায়ের মহামায়া/সোনার আলোয় কতো পাওয়া/চারটি দিনের অনেক চাওয়া/ঊমাশশীর উতল হাওয়া/ কাঁদিস নে মা উমা ওরে/আবার তোরে আসবো নিয়ে একটি বছর পরে। ’Ñ শান্তি, সাম্য আর ভ্রাতৃত্বের অমর বাণী শুনিয়ে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা চলে গেছেন স্বর্গালোকে। পেছনে রেখে গেছেন উৎসবমুখর পাঁচটি দিন। মহালয়ায় দেবীপক্ষের শুরুতে যাকে আবাহন করে ম-পে ম-পে মৃন্ময়ীরূপে পূজার জন্য প্রাণ দেয়া হয়েছিল, গতকাল বুধবার বিজয়া দশমী ছিল সেই দেবী দুর্গাকে বিদায় দেয়ার আয়োজন। সকাল থেকেই সব ম-প ছিল ভক্তদের পদচারণায় মুখর।

বিদায়কালে দেবীর আশীর্বাদ চাইলেন সবাই। সকাল ৭টা ৫৫ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের মধ্যে দেবীর মহাদশমী বিহিত পূজা সম্পন্ন ও দর্পণ বিসর্জন এবং শান্তিজল গ্রহণ করা হয়। এরপর শুরু হয় মা দুর্গাকে তেল, সিঁদুর ও পান দিয়ে মিষ্টিমুখ করানো। এরপর বিকেল ৪টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বুড়িগঙ্গায় দেবী প্রতিমা বিসর্জন এবং সন্ধ্যায় আরতির ধুমধামে দেয়া হয় দর্পণ বিসর্জন। এই হলো কল্পনায় দেবীর বিসর্জন ও ম-পের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন।

ম-পগুলোতে তিল ঠাঁই আর নাহিরে : ঢাকেশ্বরী থেকে সিদ্ধেশ্বরী, বনানী থেকে রামকৃষ্ণ মিশন, তাঁতীবাজার থেকে ধানম-ির কলাবাগান সব ম-পেই ভক্তদের দৃপ্ত পদচারণা। শেষ মুহূর্তে দেবী দর্শনে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ। ম-পগুলোতে দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করে প্রবেশ করেন অনেকেই। সারাদিন পূজাম-পগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। রোগ-শোকমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ জীবন পেতে দুর্দশা লাঘবকারী দেবীর আশীর্বাদ নিতে উৎসবের শেষ দিন সকাল থেকেই ভক্তরা ছুটেন ম-প ম-পে।

শিশু-কিশোর-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব বয়সের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ভিড়ে ম-পগুলো পরিণত হয় মিলনমেলায়। ‘আর তো মাকে এক বছরের জন্য পাওয়া যাবে না, তাই মায়ের কাছে আমার মনের যতো ইচ্ছা আছে সব চেয়ে নিচ্ছি। জগন্নাথ হলে পূজা দিতে আসা ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক মনিকা রায় বলেন, পূজার পাঁচটি দিন অত্যন্ত আনন্দে কাটে। কিন্তু বিজয়া মানেই কষ্ট। আরো এক বছরের জন্য অপেক্ষা।

সাম্য আর ভ্রাতৃত্বের মিলনমেলা : পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় উৎসবের মূলমন্ত্র হলো সাম্য, ভ্রাতৃত্ব আর অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব গঠন। বিশ্বের সকল জীবের শান্তি ও কল্যাণ কামনায় গতকাল বিজয়ার মধ্য দিয়ে এই উৎসব শেষ হয়েছে। বিজয়ার দিনে পারস্পরিক মঙ্গল কামনা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করাটাই রীতি। আর এই রীতিতে শামিল হয়েছেন দেশের অসাম্প্রদায়িক মানুষ। এদিকে শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে পূজা ম-পগুলো হয়ে উঠেছিল নানা ধর্মের, নানা বর্ণের হাজারো মানুষের মিলনমেলায়।

বিজয়ায় বন্ধুদের নিয়ে রমনা মন্দিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বদ্যিালয়ের ডাক্তার নাসিরউদ্দিন। বললেন, পূজা সনাতন ধর্মের কিন্তু উৎসবটা সব ধর্মের, সব মানুষের। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসা অধ্যাপক মইন আহমেদ জানান, বিজয়ার আনন্দ উপভোগ করতে তিনি রমনা ও জগন্নাথ হলের মন্দিরসহ বেশ কটি ম-প ঘুরেছেন। ফার্মগেট থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসা গোমেজ রতন বলেন, ঈদ, পূজা, বড়দিন বা মাঘী পূর্ণিমা আলাদা কোনো সম্প্রদায়ের উৎসব নয়, এসব প্রাণের উৎসব। এসব উৎসবে নিজেকে শামিল করতে পারাটাই আনন্দের।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রমেন ম-ল বলেন, মহাসমারোহে পূজা পালিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত সতর্ক ছিল। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেছেন। কলবাগান সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এল ভৌমিক বলেন, অশুভ শক্তি দমনের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই দুর্গোৎসবের মূল বাণী।

স্বর্গ, মর্ত্য থেকে অসুরদের দমন করার জন্য সকল দেবতার ঐক্যবদ্ধ শক্তি থেকে মাতৃরূপে দেবীর আবির্ভাব। আমরা মূলত মায়ের পূজার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সকল অপশক্তির বিনাশ প্রার্থনা করি। সবার মধ্যে অশুভ চিন্তা দূর হোক বিজয়ায় এটাই কামনা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পূজায় জনসমাগম হয়েছে অনেক বেশি। সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তার কারণে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।

মুখরিত মঙ্গল শোভাযাত্রা : দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। বিকেল ৪টার পর মানবজাতির জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে বিজয়া শোভাযাত্রা বের করা হয় ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে। এর আগে রাজধানীর ১৯৬টি পূজাম-পের প্রতিমা এনে জড়ো করা হয় পলাশীর মোড়ে। এরপরই শঙ্খধ্বনি, কাঁসর ঘণ্টা, ঢাকের বাদ্য আর উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা। কয়েক হাজার ভক্তের কলরব আর উচ্ছ্বাসে মুখরিত শোভাযাত্রায় প্রতিমাগুলোকে রাখা হয় ট্রাকে।

মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃত্বে বিশেষ শোভাযাত্রা ওয়াইজঘাট গিয়ে শেষ হয়। ঢাকঢোল বাজিয়ে একদিকে উৎসব-আনন্দ, অন্যদিকে বিদায়ের বেদনার আতিশয্যে শোভাযাত্রা করে নগরীর বিভিন্ন সড়ক, মহল্লা ঘুরে সদরঘাটের দিকে এগিয়ে যায়। সদরঘাটে নির্মিত বিশেষ পন্টুনে গিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রতিমা, পরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমা, রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিমা এবং পরে অন্যান্য প্রতিমা বিসর্জন দেয়া শুরু হয় বিকেল ৫টায়। এছাড়া সন্ধ্যায় গুলশান সার্বজনীন পূজা কমিটির শোভাযাত্রাটি পূজাম-প থেকে শুরু হয়ে গুলশান ২ নম্বর, ১ নম্বর, মহাখালী, বিমানবন্দর ও উত্তরা দিয়ে আশুলিয়া হয়ে তুরাগ নদীতে বিআইডব্লিউটিএর ঘাটে গিয়ে শেষ হয়।

প্রসঙ্গত, এবার সারা দেশে প্রায় ২৮ হাজার ম-পে পূজা হয়েছে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, এ বছর দেবী দুর্গা শ্বশুরালয় থেকে বাবার বাড়িতে এসেছেন গজের (হাতি) পিঠে চড়ে আর ফিরে গেলেন নৌকায় চড়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস দেবী গজে চড়ে এলে পৃথিবী শস্যে সুজলা সুফলা হয়ে উঠবে। এদিকে বিজয়া উপলক্ষে গতকাল ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দিনব্যাপী রক্তদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিজয়া দশমীর দিনটি ছিল সরকারি ছুটির দিন।

এ দিনে বঙ্গভবন, সুপ্রিম কোর্ট, সচিবালয় ও নগর ভবনে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করে সরকার।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.