আমি খুব সাধারণ একজন .... রুগ্ন রাজনীতি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যা-গুম ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন দেশের দুই জ্যেষ্ঠ নাগরিক অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন। এই ঐক্যে সামিল হওয়ার জন্য তারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক শক্তি, দেশপ্রেমিক জনগণ এবং সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান রেখেছেন। গতকাল রবিবার রাজধানীর হোটেল রেডিসনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা এই আহ্বান জানান।
আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তারা দু’জনই অভিন্ন কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থান নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে দেশবাসী নির্বাচন চায় না।
’ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায় অনুযায়ীই আগামী আরও দুটি মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বি. চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তারা বলেন, আমরা জাতীয় মৌলিক বিষয়ে উদ্ভূত সমস্যার আশু সমাধানে জোরদার ইষ্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে পরামর্শমূলক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা, লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, গণস্বাস্থ্যের প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বি. চৌধুরী ও ড. কামালের পক্ষে দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতি ঐক্যের ডাক সম্পর্কিত ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
যৌথ ঘোষণায় দলীয়করণের অসুস্থ ধারা থেকে মুক্ত হতে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বি. চৌধুরী ও ড. কামাল বলেন, অশুভ-অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আসুন আজ আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই।
উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ গড়ি। দেশের তরুণ ও যুব সমাজ যারা দেশকে কিছু দিতে আগ্রহী তারা ঐক্যবদ্ধ হই। সামনের দিনগুলো উজ্জ্বলতায় ভরিয়ে তুলি। উপহার দেই একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’।
তারা বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও আজকে জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। ২০০৮ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অর্জিত হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আজকে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে।
যেখানে জাতীয় সংসদের দায়িত্ব ছিল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের জবাবদিহিতা আদায় করা, সেখানে সংসদ সদস্যদের নিরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা উল্লেখযোগ্য।
যৌথ ইশতেহারে দেশের আর্থিক খাতের বিপর্যয়ে জাতীয় অর্থনীতি এখন মহাসংকটে দাবি করে এই দুই রাজনীতিবিদ বলেন, প্রথমত শেয়ার বাজারের মাধ্যমে জনগণের পুঁজিকে লোপাট করা হয়েছে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপরেই ব্যাংকের মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। হলমার্ক, ডেসটিনিসহ বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি প্রতারণার মাধ্যমে অনেকটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থ লুটপাট করেছে।
তারা বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন? রেলমন্ত্রীর এপিএস টাকাসহ ধরা পড়েছে এবং এপিএস-এর ড্রাইভার তত্কালীন রেলমন্ত্রীর সরাসরি নিয়োগ বাণিজ্য ও দুনীর্িততে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি, পার্লামেন্ট, কেন্দ ীয় ব্যাংক এসব বিষয়ে নীরব। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নখ-দন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে এবং চি?হ্নিত দুর্নীতিবাজদের সাফাই সার্টিফিকেট দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। দুই নেতা বলেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ে যথেচ্ছাচার শুরু হয়েছে। বিদ্যুত্ ব্যবস্থায় কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল পাওয়ারের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় হচ্ছে।
আজ বাংলাদেশের জন্য একটি দুর্নীতিমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এজন্য রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।
বি. চৌধুরী ও ড. কামাল বলেন, সরকারের দিন বদলের প্রতিশ্রুতিতে ছিল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। কিন্তু যা ঘটেছে তা হলো শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু ও বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের উপর হামলা এবং তাদের প্রার্থনাস্থল ধ্বংস করা।
তারা বলেন, দেশের সাংবাদিক সমাজ চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। বিরুদ্ধ মত নিষিদ্ধ। ঘরের মধ্যে খুন হয়ে যান সাগর-রুনিসহ অসংখ্য সাংবাদিক। দেশে গুম-খুনের ঘটনা ঘটছে।
তারা বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষ ও সাড়ে আট কোটি ভোটারের অংশ গ্রহণে নির্বাচন হোক।
এই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক দেশ আমরা দেখতে চাই। তাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যেভাবে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল, আজ সময় এসেছে এমনিভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবার। বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় আমাদের মধ্যে ঐক্য হয়ে আছে।
তাদের দু’জনের বক্তব্যের পর মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেন, ৪২ বছর ধরে আমরা শুধু প্রত্যাশাই করে গেলাম।
কিন্তু আজও প্রত্যাশিত বাংলাদেশ দেখলাম না।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দুই-এক কোটি টাকার জন্য অনেক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপী হয়ে পথে বসছেন। অন্যদিকে অনেকে ব্যাংক থেকে চার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ সরদার আমজাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক আইজিপি নুরুল আলম, সাবেক এমপি হুমায়ুন কবির হিরু, ফরোয়ার্ড পার্টির চেয়ারম্যান আনম মোস্তফা আমিনসহ চিকিত্সক, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ফ্রান্স, জাপান, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও এতে উপস্থিত ছিলেন।
তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও কেউ এতে সাড়া দেয়নি।
হ্যালো-টুডে ডটকম : ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।