আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্যা থ্রিডি শো (পিপলস রেডিও এর একটি বস্তুনিষ্ঠ রম্য শো)

সামু আমার মামু ছবিতে বা হতে ডানে পৃথিবী, আরজে মুকুল ও শাশ বেবী থ্রিডি কি শুধুই দেখা যায় ?? এটা কি শোনা যায় না ? যদি বলি আমি প্রতি সপ্তাহেই থ্রিডি শো শুনি তাহলে অনেকে অবাক হবেন। আসলে এটা একটা রেডিও প্রোগ্রামের নাম। যা পিপলস রেডিও(৯১.৬ FM) তে প্রতি রবি-সোমবার রাত ১০.১০ মিনিটে হয়। এই বছর ফেব্রুয়ারী মাসে চোখে ভাইরাসের আক্রমণ হলে আমার টিভি দেখা ও কম্পিউটার ব্যবহার একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। সেই মাসে শুধু রাত-দিন রেডিও শুনেছি।

তখন পরিচয় ঘটে থ্রিডি শোর সাথে। এটা একটা বস্তুনিষ্ঠ রম্য শো। তিন জন এই শো পরিচালনা করেন। তারা হলেন উন্মাদ ম্যাগাজিনের আইডিয়া বাজ ডাক্তার শাহরিয়ার শরীফ ওরফে শাশ বেবী (এছাড়াও তিনি উত্তরার কোন এক বেসরকারী হাসপাতালে কর্মরত, সায়েন্সফিকশন নিয়ে তার দুটি বই আছে) , আরজে (কুল) মুকুল এবং সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার পৃথিবী । থ্রিডি শো তে শাহরিয়ার শরীফ এর কথা শুনে হাসিতে মাঝেমাঝে গড়াগড়ি খাই।

তিনি ব্রাশফায়ারের মতো একে একে কৌতুক , মজার তথ্য (এগুলো কে তিনি গেটিস বলে থাকেন) বলেন , সাথে পুরান দিনের গান গেয়ে থাকেন ও নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা বলেন। আরজে মুকুল টানা SMS পড়েন ও আর শাশ বেবী SMS সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা বলেন। সাথে মুকুল একটু পর পর এক দুই লাইন করে বিভিন্ন গান গেয়ে থাকেন এবং তার জীবন থেকে নেওয়া বিভিন্ন জিনিস শেয়ার করেন। অন্য দিকে "পৃথিবী" সাউন্ড এর বিভিন্ন কেরামতি দেখান। আর আরজে মুকুল যা বলে তা তিনি রাইট রাইট বলেন।

ঢাকা শহরে কোন চিপায় কোন হোটেলে কম খরচে ভালো খাবার পাওয়া যায় তা তার বা হাতের তালুর মতো চেনা। থ্রিডি শোতে শোনা কিছু ঘটনা (সব ঘটনা একুরেট মনে নাই - একটু এই দিক ঐ দিক হতে পারে ) ১ শাহরিয়ার শরীফ আগে কোন এক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন যেখানে সহজে ছুটি পাওয়া যেত না। কিন্তু এক এমার্জেন্সি কাজে তার ছুটি লাগবেই লাগবে। তাই একেবারে সকালে সরাসরি তিনি ছুটির দরখাস্ত নিয়ে গেলেন HR এর কাছে। আর সাথে সাথেই ছুটি মঞ্জুর হয়ে গেল।

লাফাতে লাফাতে নিজ অফিসে ঢুকে জানতে পারলেন যে বিশেষ কারণে আগামীকাল হতেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাবে। আর সেই HR মজা করে ছুটি মঞ্জুর করেছে। ২। বসুন্ধরা কনভেশন সেন্টারে মুকুল ও শাশ ভাইয়ের কলিগের বোনের বিয়ে ছিল। দুই জন আলাদা আলাদা একা গিয়ে ছিলেন।

শাশ ভাই যেখানে নেমেছেন তা বসুন্ধরা কনভেশন সেন্টারের আরেক মাথা। তো কিভাবে যাবেন সেখানে ? রাতে বসুন্ধরার ভেতরে হারিকেন ছাড়া রিক্সা ঢুকতে দেয় না। কিন্তু অনেক্ষণ অপেক্ষার পরেও হারিকেন ওয়ালা রিক্সা পাচ্ছিলেন না। শেষে তিনি হারিকেন এর দোকান এর খোঁজ শুরু করলেন যাতে যে কোন রিক্সাতে সেটা লাগানো যায়। ঠিক তখন একটা হারিকেন ওয়ালা রিক্সা পেলে গেলেন।

(শিক্ষাঃ যা আমারা চাই তা সহজে পাওয়া যায় না কিন্তু যখন অন্য কিছু চাই তখন সেটা পাওয়া যায়) মুকুল ভাই মনে করে ছিলেন কাছেই, তাই হাটা ধরলেন। কিন্তু মাঝ পথে এসে বুঝলেন যে কত বড় ভুল করেছেন। এক গার্ড বললো যে, এটা অনেক দূরে। রাস্তার ধারে একটু পরপর ইন্ডিকেটর দেওয়া আছে বসুন্ধরা কনভেশন সেন্টারের পথ দেখানোর জন্য। এমন একটা রাস্তা যেখানে খালি রিক্সার নাম নিশানা নেই।

একটু পরে এক গাড়ি এসে থেমে তাকে বসুন্ধরা কনভেশন সেন্টারের লোকেশন জানতে চাইলো। কিন্তু তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলো আপনারা কি এনার বিয়েতে যাচ্ছেন নাকি ? হ্যা সূচক জবাব পেয়ে। বললেন, হ্যা চিনি না মানে (কিন্তু তার এটা প্রথম যাওয়া) আমিও সেখানে যাচ্ছি, আপনাদের সাথে গেলে ভালো ভাবে রাস্তা চিনিয়ে নিতে পারবো। বলে জবাবের অপেক্ষা না গাড়িতে উঠে পরলেন। (শিক্ষাঃ বসুন্ধরা কনভেশন সেন্টারে গাড়ি ছাড়া যাওয়া বোকামি ) ৩।

আরজে মুকুল আগে চামেলীবাগে থাকতেন। এক বার ভোরে শোয়া অবস্থায় দেখেন যে একটি লম্বা কঞ্চি জানালা দিয়ে ঢুকছে। সাথে সাথে তিনি চোর চোর বলতে বলতে দরজা বের হলেন চোর ধরতে। চোরকে আবছা আবছা দেখে দুই গলি পর্যন্ত তাড়া করলেন তারপরে দেখলেন যে এক লোক আস্তে আস্তে তার দিকে আসছে কিন্তু চোর আর নাই। সেই লোক কে প্রশ্ন করলেন, কাউকে কে তিনি পালাতে দেখেছেন।

সে বললো ঐ দিকে গিয়েছে। তখন দেখলেন যে সেই লোকো তার মতো হাঁপাচ্ছে। "আপনি হাঁপাচ্ছেন কেন ?" প্রশ্ন করলো মুকুল। সে দিল দৌড় কিন্তু সামনে কিছু লোক থাকায় ধরা পড়ে গেল চোর। ৪।

১৯৮৮ সালের বন্যায় সময় সব রাস্তা ঘাট ঢুবে গেছে তা দেখতে বের হলেন মুকুল। নটরডেম কলেজের কাছে এক দেয়ালের ওপরে বসে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা মানুষদের দেখছিলেন। তিনি দেখলেন যে দূর থেকে এক লম্বা ও এক খোটো লোক স্যান্ডেল হাতে করে তার দিকেই আসছে। প্রায় কাছাকাছি আসার পরে একটা বড় গাড়ি সেই জায়গা পার হয়ে গেল। সেই পানির ঢেউ যখন সেই দুই লোকের কাছে আসলো তখন লম্বা লোকের গলা পর্যন্ত পানি উঠলো আর খাটো লোকটি নাই হয়ে গেল।

ঢেউ চলে গেলে আবার তার মাথা উদয় হলো। ৫। সিনেমার এক প্রসংগে কথা উঠলে শাহরিয়ার শরীফ একটি কৌতুক বললেন, এক দিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। এক সিনেমা হলের সামনে বৃষ্টি হতে বাঁচার জন্য অনেক লোক আশ্রয় নিল। সেই সময় সিনেমা হলে কোন শো হচ্ছিল না।

সিনেমা হলের মালিকের অনেক মায়া হলো। তিনি লোক গুলোর কাছে গিয়ে বললেন, ভাইসব বৃষ্টি থামা পর্যন্ত আপনারা সিনেমা হলের ভেতরে গিয়ে বসতে পারেন। সবাই বসলো কিন্তু বৃষ্টি আর থামছে না। সবাই বোর হচ্ছিল তাই সিনেমা হলের মালিকের আরো দয়া হলো, তিনি বললেন আপনাদের কোন টাকা দেওয়া লাগবে না, আমি একটি সিনেমা ছেড়ে দিচ্ছি। একটু পরে পর্দায় ফুটে উঠলো আরজে মুকুল পরিচালিত সিনেমা ......(ড্রাশ ড্রাশ ড্রাশ )।

সাথে সাথে লোক গুলো যে দিকে পারে সেই দিকে বাঁচাও বাঁচাও বলে ছোটাছুটি করতে লাগলো। সিনেমা হল হতে বৃষ্টি এর মধ্যেই সবাই দৌড়ে পালিয়ে গেল। নোটঃ আরজে মুকুল ভবিষ্যতে সিনেমার পরিচালক হতে চান। কৌতুক শেষ হবার পরে ১০ সেকেন্ড সবাই চুপ। এর পরে আরজে মুকুল টানা ২০ টা sms পরে সোজা সুজি বিজ্ঞাপনে গেলেন।

সেই দিন আরজে মুকুল হেবী মাইন্ড করেছিলেন। বিজ্ঞাপনে বিরতিতে শাশ ভাইকে মাইর দিয়ে ছিলেন কিনা তা জানা যায় নাই। ৬। শো তে ৪০% SMS মিরপুর হতে আসে। কিন্তু মুকুল ভাই মিরপুর ও এর লোক জন কে তেমন পছন্দ করেন না।

তার অন্যতম কারণ অনেক আগে আরজে মুকুলের সাথে তার বড় ভাইয়ের বন্ধুর সাথে খাতির ছিল। তিনি ছিলেন মিরপুরের বাসিন্দা। একবার সেই বড় ভাইয়ের বন্ধু মুকুল ও মুকুলের তিন বন্ধুকে ফার্মগেটে এক হোটেলে নিয়ে গেল দুপুরের খাবার খাওনের জন্য। খাওয়া শেষে সে বললো যে তোরা একটু বয়, আমি বাইরে হতে পান খেয়ে আসতেছি। তারপরে সে গেল তো গেল আর আসে না।

বেশখানিক পরে হোটেল বয় এসে বলে, স্যার বিল দেবেন না ? মুকুলদের কাছে বিল দেবার মতো টাকা সাথে ছিল না। তখন তারা বলে আমাদের বড় ভাই আসলে দেব। হোটেল বয় শান্ত কন্ঠে বললো, আপনাদের ভাই যাবার সময় আপনাদের দেখি দিয়ে গেছে, টাকা আপনাদের কেই দিতে হবে। তখন তাদের মাথা বাজ পরলো। এখন কি হবে ? ডিশ ধোয়া লাগবে নাকি !! তারপরে তাদের মধ্যে হতে একজন বাড়ি গিয়ে টাকা নিয়ে আসে।

তারপরে তারা মুক্তি পায়। আবার সেই বড় ভাইয়ের সাথে আবার দেখা হলে তিনি বলেন, সেই দিন তিনি এমনি মজা করে ছিলেন। ৭। কলেজ লাইফে পৃথিবী ভাই মিরপুর ৬ হতে ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজে বাসে করে জার্নি করতেন। বাস ভাড়া ৫ টাকার মতো ছিল।

একদিন বাসে করে কলেজে যাচ্ছিলেন। বাসের সব সিট ফুল ছিল তখন এক মেয়ে বাসে উঠলো। আর পৃথিবী ভাইয়ের পাশে দাঁড়ালো। একটু পরে পৃথিবী ভাই মেয়েটিকে নিজের সিট দিলেন বসার জন্য। আরো কিছু দূর যাবার পরে বাস একটা কঠিন ব্রেক করলো।

সাথে সাথে উষ্ঠা খেয়ে পৃথিবী মেয়েটির ওপরে পরলেন/ ধাক্কা খেলেন । তখন সেই মেয়েটি বললো, তোমাদের মতো ছেলেদের ভালো করে চিনি, সুযোগ পেলেই মেয়েদের সাথে এমন করো। চেচামেচি করে সেই দিন পৃথিবী কে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে ছিল। এরপর থেকে পৃথিবী ভাই বাসে আর মেয়েদের জন্য সিট ছাড়েন না। ৮।

কোরবানির ঈদের কিছু দিন আগের ঘটনা। তখন শাহরিয়ার শরীফ জিগাতলায় থাকতেন। এপার্টমেন্টের নিচে বিশাল পার্কিং লট ছিল আর গেটে দারোয়ান থাকতো সব সময় আর গেটের ভেতরে একটু সামনে ড্রাইভারেরা আড্ডা দিত। কিন্তু সেই দিন গেট দিয়ে ঢুকে দেখে কেউ নাই। একটু সামনে গিয়ে দেখে পিলারের পিছনে দারোয়ান লুকিয়ে আছে আর ইশারাতে শাশ ভাইকে ডাকছে।

এই দিক সেই দিক তাকিয়ে তার কাছে গিয়ে জানতে পারলো যে, এক মস্ত বড় ষাঁড় ছুটে গেছে তাকে ধরার প্রচেষ্টা চলছে। একটু পরেই দেখা পরলো মস্ত বড় ষাঁড় এর। একটুর জন্য বেচে গিয়ে ছিলেন শাশ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.