বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... বাজেট আসলেই সব সরকারের চোখ যায় সিগারেটের উপর। আমার প্রশ্ন যে দেশে শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষক। সেদেশে কৃষকদের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ বিড়ি হুক্কা তামুক খায়। সিগারেট খায় একটু যারা সাবলম্বী তারা। আমি প্রথম সিগারেট খেয়েছি আমাদের হাইস্কুলের স্যারের স্টার সিগারেট।
স্যার সিগারেট কিনতে দোকানে পাঠিয়েছেন। আমরা তিন বন্ধু প্রানেশ, প্রকাশ আর আমি স্যারের সিগারেট থেকে একটা গায়েব করে দিলাম। তখন সেই সিগারেটে ফিল্টার ছিল না। তবুও আমরা ভারী মজা পেলাম। পরে স্কুল কামাই দিলেই আমাদের জমিতে নামা চাষী ভাইদের হুক্কা ধরিয়ে দেবার নাম করেই হুক্কা টানতাম।
তাদের বিড়িও টানতাম। ১৯৮০ সাল থেকেই সেই তামুকের সঙ্গে পরিচয়। যারা সিগারেট খাবার তারা খাবেই। বাজেটের অতিরিক্ত করারোপে তাদের একটু কষ্ট হবে। কিন্তু বাজেটে সিগারেটের উপর করারোপ করে দেশে কয়জন সিগারেট বর্জন করেছে? একজনও না।
বরং প্রতি বছর তরুণদের একটি বিশাল অংশ সিগারেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। সিগারেট হচ্ছে তরুণদের কাছে প্রথম তারুণ্যের প্রতীক। আমাদের মন্ত্রী এমপিদের অনেকেই সিগারেট খান। তাদের বাপদাদারাও তামুক খাইতো। কিন্তু তামাকের উপর করারোপ করে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।
মাঝখানে একটা চোরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সিগারেট বিড়ির দাম বাড়িয়ে সরকারকে যে বাড়তি কর দিতে হবে তা এই বাজেট কার্যকর হবার আগেই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জুন মাসেই তুলে নেবে। শুধুমাত্র সিগারেটের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার চিত্র সকল সরকারেরই সময় থেকেই ঘটছে। অর্থ্যাৎ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে একটা চোরাকারবারী সিন্ডিকেট কারো ইসারায় এই আকাম করছে। সেই ভাগ চলে যাচ্ছে উপর মহল পর্যন্ত।
পাবলিক ট্রেডেট সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানির জন্য বর্তমানে আমরা যারা ভোক্তা তারা কর দিচ্ছি ৩৫%।
এই ৩৫% করের টাকার অর্ধেকও সরকার পায় না। তবু আমরা ভোক্তারা দিচ্ছি। সেই কর আরো থেকে ৫% বাড়িয়ে বাজেটে করা হয়েছে ৪০%। আমরা সেই ৪০% করও দেব। কিন্তু সরকার পাবে না।
আবার আর নন-পাবলিক ট্রেডেট সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানির জন্য আমরা ভোক্তারা বর্তমানে কর দিচ্ছি ৪২.৫%। সরকার সেখান থেকেও অর্ধেক করে পয়সাও পায় না। সেই কর আরো ২.৫% বাড়িয়ে বাজেটে করা হয়েছে ৪৫%। আমরা ভোক্তারা তাও দেবো। মাগার সরকার বাহাদুর কিন্তু সেই বাড়তি করের টাকা পাবে না।
কে পাবে সেই টাকা? একটি চোরাককারবারী সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কারা জড়িত? মন্ত্রী থেকে শুরু করে মোড়ের টহলদার পুলিশ পর্যন্ত সবাই ভাগ পায়। মাঝখানে ভুক্তভুগী কারা? আমজনতা। কারণ, যে দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ কৃষক সেদেশে তামুক ভোক্তার সংখ্যা মন্ত্রী এমপি পুলিশের চেয়ে কয়েক হাজার গুন বেশি। আইনের নামে এরা বেআইনি আকাম করছে।
জাতীয় বাজেটের মোট আয়ের শতকরা কত ভাগ সিগারেট থেকে আসে? তবুও সেখানে প্রতি বছর কমন কর বাড়াতে হবে। এটা কাদের ইসারায়? চোরাকারবারী সিন্ডিকেটদের ইসারায়? তাদের ভোট কত? সিগারেট ভোক্তার শতকরা ৫০ ভাগের এক ভাগও না। কিন্তু তারা এই আকামটা করে যাচ্ছে।
যদি দেশে সরকার নামে কোনো প্রতিষ্ঠান থাকে আর আইনের শাসন থাকে তাহলে সিগারেট নিয়ে এই তামাশা চলতে পারে না। এই তামাশা চলার মানেই হল দেশের সরকারের চেয়ে চোরাকারবারী সিন্ডিকেট বেশি শক্তিশালী।
তা প্রমাণ পায়। আমরা চাই, দেশের ট্যোবাকো কোম্পানিগুলো'র কাছে সরকার এ বিষয়ে একটি জবাবদিহিতা চাবে। সিগারেটের পরিবর্তে যদি একই কাণ্ড চালের বা লবনের বা তেলের বেলায় ঘটতো, এতোক্ষণে সরকার বাহাদুরের গদি নড়ে উঠতো। অথচ সিগারেটের বেলায় ঘটছে বলে এটা যেনো কোনো অন্যায় নয়? আহারে আইন? কোনটার বেলায় আইন আর কোনটার বেলায় আইন নয় তা বিধিমালা ঠিক করে সরকারি ঘোষণায় বলে দেওয়া হোক।
কালোটাকা সাদা করা যাবে।
এর প্রথশ অর্থ দাঁড়ায়, আপনি যতো খুশি আকাম করে কালোটাকার মালিক হন, সরকার আপনার পাশে আছে। কালোটাকা বানানোর সকল পথই তো অবৈধ। তারমানে কালোটাকা আইনের চোখে অবৈধ। সেই অবৈধ টাকা রাখা যাবে। তা দিয়ে কিছু করের নামে দান খয়রাত দিয়ে তা জায়েজ করা যাবে।
মাগার কালোটাকার মালিককে ধরতে অভিযান পরিচালনা হবে না। কারণ, সেই দলে মন্ত্রী এমপি পুলিশ অফিসার সবাই আছে। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেসো তৃণ সমদহে। রবী বাবু কথাটা আর এমনিতে বলেননি। আইনের চোখে সবাই সমান।
কিন্তু কালোটাকার যে মালিক সে আইনের উর্ধ্বে। দেশ থেকে অন্তঃত মাত্র ১০ জন কালো টাকার মালিক র্যাবের অভিযানে গুলি খেয়ে মরলে দেশের আইনের শাসনের অনেক উন্নতি ঘটতে পারে। অনেকে তখন কালো টাকা কামাইয়ের পথে আগাতে ভয় পাবে। মাগার, কালো টাকা সাদা হয়ে যায় যে দেশে, সে দেশে আইন বলে কিছু আছে কিনা সেটাই অবিশ্বাস লাগে।
কিন্তু সাধু সাবধান।
গরিব মানুষের জন্য আইন কিন্তু ভারী কড়া। একটু বেলাইনে হাঁটলেই গডাম। রাম রাম। এ কোন মগের মুল্লুকে হল জন্ম। কোথায় হরি, কোথায় যীশু ধাম।
কি যেনো তোমার নাম? বেশি আকুপাকু করলে আইনের আওতায় তোমার হবে বদনাম। অতএব সাধু এখ থাম। । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।