গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী “সাংবাদিকরা সত্য কথা লেখেন না। পুলিশের দেওয়া তথ্য দিয়ে বানোয়াট এবং মিথ্যা কথা লিখেন। ” এ কারণে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। তাকে অনেকভাবে নিশ্চিত করা হল, সাংবাদিকরা কারও পক্ষের নয়। সত্যের পক্ষে।
ঘটনা এবং আলিফ সম্পর্কে যা বলবেন তাই লেখা হবে। এরপর একে একে কথা বলতে শুরু করেন এ নারী। তার নাম সাজেদা বেগম শিমুল। তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে সংঘটিত বৌদ্ধ বিহার এবং বসতি হামলা ঘটনায় অভিযুক্ত এবং ৯ অক্টোবর চট্টগ্রামে থেকে আটক হওয়া আব্দুল মুক্তাদির আলিফ এর মা।
সাজেদা বেগম শিমুল শুরুতেই জানতে চান, তার ছেলে আলিফ এখন কোথায় আছেন।
তাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে কিনা।
আলাপে-আলাপে আলিফের মা জানালেন নানা কথা। তার ৩ ছেলে। আলিফ সবার বড়। মেঝো ছেলে আবদুল মোতালেব রায়হান (১৬) এসএসসি শেষ করে ঢাকায় বিমান পাইলট বিষয়ে অধ্যনয়ন করছে।
ছোট্ট ছেলে আবদুল মাবুদ (১৫) এসএসসি পাস করে রামু টেক্সটাইলে অধ্যনয়ন করছে।
আলিফের মা জানান, তিনি নিজেই শিক্ষিত নারী। কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছেন। এখন একজন গৃহিণী। তিনি কোনো সময় কোনোভাবে রাজনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন না।
তার পরিবারের মধ্যেও আলোচিত কোনো রাজনৈতিক নেতা নেই। কিছু পত্রিকায় তিনি নিজেই রাজনীতি করেন বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে। এটা সত্য নয়। একই সঙ্গে ছেলের সম্পর্কে তা একটি বাক্য ‘তার ছেলেরা রাজনীতি করেন এটা কোনোভাবে সত্য নয়। ’
২৯ সেপ্টেম্বর ঘটনা সম্পর্কে কি জানেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সাজেদা বেগম শিমুল জানান, আব্দুল মুক্তাদির আলিফ চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ থেকে এসএসসি শেষ করে চট্টগ্রামে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়।
সে চট্টগ্রাম মুরাদপুরস্থ শ্যামলী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ৬ষ্ঠ সেমিস্টার শেষ করে সপ্তম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত রয়েছে। আলিফ চট্টগ্রামে হোস্টেলে থাকেন। ওখানে পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার ৪ দিনের ছুটির ফাঁকে টাকার জন্য ২৮ সেপ্টেম্বর সে চট্টগ্রাম থেকে রামুতে আসে। ২৯ সেপ্টেম্বর ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে আমার বোন (আলিফের খালা) এর মোবাইল সেট মেরামত করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে ফকিরা বাজারে ফারুকের কম্পিউটার দোকানে যায়।
তিনি জানান, আলিফ যে তথ্য তাকে জানিয়েছে ওই তথ্য মতে মোবাইল মেরামতের ফাঁকে সে ফারুকের দোকানের কম্পিউটারটিতে বসে। ওখানে ফারুক এর ফেইসবুকের পৃষ্ঠাটি খোলা ছিল। আর ফারুকের ফেইসবুকেই ছিল পবিত্র কুরআন শরীফ অবমাননার সেই বির্তকিত ছবিটি। ওটা উত্তম কুমার বড়–য়ার ফেইসবুক ছিল না। ফারুকের ফেইসবুকে ছবিটি দেখেই তার ছেলে আব্দুল মুক্তাদির আলিফ চিৎকার দিয়েছে ছিল এটা সত্য।
ধর্মীয় অনুভূতির কারণে তার ছেলে এ চিৎকার দেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি জানান, এ চিৎকারের শব্দ শুনে দোকানে বসে থাকা লোকজন এবং আশে পাশের অনেক লোকজন জড়ো হয়। ওখানে লোকজনের সমাগম বেশি দেখে আলিফ মোবাইল নিয়ে সাড়ে ৭ টার দিকে বাড়িতে ফিরে আসে। এর পর কি হয়েছে তা জানা নেই। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার দিকে রামু থানা থেকে পুলিশের ২ জন সদস্য বাড়িতে এসে আলিফকে খোঁজ করে।
পুলিশ সদস্যরা ওসি’র কথা বলে আলিফকে বাড়ি থেকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। তার ছেলে আলিফ সাড়ে ৮ টা থেকে ওই দিন ভোর সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত রামু থানায় ছিল।
তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যে একজন মা হিসেবে বিষয়টির খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে জানতে পারেন যে ছবিটি আলিফ দেখে চিৎকার দিয়েছিল তার সূত্র ধরে ফারুকের কম্পিউটারের দোকান থেকে একটি মিছিল বের করা হয়েছে। মিছিল বের করার আগেই ওই স্থানে রামু থানার ওসি এবং উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুন্নী ফারুকের দোকানে এসেছিলেন। ফারুকের কম্পিউটারও জব্দ করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আর তারপরই বের করা হয় মিছিল। ওই মিছিলের লোকজন চৌমুহনীতে গিয়ে সমাবেশ করেছে এবং বৌদ্ধ বিহারে ও বসতিতে অগ্নিসংযোগ করেছে।
এ পুরো সময় তার ছেলে ছিল রামু থানার ভেতরে। ভোর সাড়ে ৩টায় তিনি নিজে গিয়ে ছেলেকে বাড়িতে ফিরে আনেন বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর দিনে এসপি’র কথা বলে পুলিশ তার ছেলেকে আবারও থানায় নিয়ে যায়।
ওইদিন থানায় আলিফ অনেকক্ষণ ছিল। ওখানে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয়ে ছনুয়ার নামের এক ব্যক্তি আলিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ছনুয়ার আলিফকে মোবাইল নম্বরও দেয়। রামু থানার ওসি, সিআইডি কর্মকর্তা ছনুয়ার এর সঙ্গে আলাপ করেই আলিফ পরের দিন ১ অক্টোবর পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে ফিরে যায়।
তার ছেলে পলাতক থাকার বিষয় সত্য নয় উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যে কেউ বাড়িতে এসে আলিফকে খোঁজ করেনি।
যদি কেউ জানতো তাহলে ছেলে পুলিশের কাছে এনে দেওয়ার দায়িত্ব মা হিসেবে তার। শিক্ষিত মা হিসেবে ছেলের সব খবর তিনি রাখেন। কিন্তু তার ছেলেকে পলাতক বলে অপ-প্রচার, একজন মাকে না জানিয়ে ৯ অক্টোবর পরীক্ষা শেষে হোস্টেলে আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। ওই সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকেও অবহিত করা হয়নি।
এখন ঘটনা সম্পর্কে মিডিয়ায় প্রচারিত সংবাদ অতিরঞ্জিত বলে দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশ এবং মিডিয়া এর জন্য দায়ী।
তার ছেলেকে দোষী করা হচ্ছে। তার ছেলে রাজনীতি করে না। ঘটনার দিন ফারুকের কম্পিউটার থেকে ছবি প্রিন্টের কথা বলা হলেও তা সত্য নয়। ফারুকের দোকানে প্রিন্টারও নেই। ঘটনার দিন প্রথম মিছিলকারিরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
তিনি মনে করেন, তার ছেলে মিথ্যা কথা বলবে না। নিশ্চিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানিয়েছে।
তিনি জানান, আলিফের বাবা সাহাব উদ্দিন এখন হৃদরোগে আক্রান্ত। অসুস্থাবস্থায় তিনি ঢাকার একটি মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আলিফ আটকের বিষয়টি তার বাবা এখনও জানেননা।
একজন সাংবাদিক হিসেবে সত্যানুসন্ধানের দাবি জানান তিনি।
আলাপের ফাঁকেই আলিফের মায়ের অনেক প্রশ্ন ছিল। যদি ফারুকের দোকানে প্রিন্টার না থাকে তাহলে যেসব ছবি প্রিন্ট করে সরবরাহ করা হয়েছে তা কোথায় থেকে প্রিন্ট করা হল ? যেখানে ঘটনার সূচনা, যেখান থেকে প্রথম মিছিল, যেখানে সমাবেশ এবং যেখানে অগ্নিসংযোগ ও হামলা সেই খানেই ঘুরে ফিরে একই লোকজন কেনো ? এরা আটক হচ্ছে না কেনো? তার ছেলে অপরাধি হলে তাকে ২/২ বার থানায় ডেকে নেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হল কেন? আবার চট্টগ্রাম যেতে দেওয়া হল কেন?
আলিফের মা জানান, তার ছেলে অপরাধ করলে শাস্তি পাবে। আর অপরাধ না করলে হয়রানি করার কোনো কারণ নেই। রামুর ঘটনায় জড়িত চিহ্নিতদের গ্রেফতারের দাবিও তার।
এসব প্রশ্নের ভেতরেই আলিফের মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পালা। ফেরার সময় আলিফের মায়ের কাছ থেকে শ্যামলী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের মোবাইল নম্বর নেওয়া হল। ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আশে-পাশে ঘুরে দেখা হল। ওখানে কথা হল, আলিফের প্রতিবেশি, বুলবুল আকতার, রমা বালা ধর, বাবুল ধর, রুবিয়া আকতার, খতিজা, নিতু বালা, শাস্তি বালা নামের কয়েকজনের সঙ্গে। তার কেউ আলিফ সম্পর্কে তেমন কোনো মন্তব্য করতে রাজী নন।
তাদের সবাই জানালেন, আলিফ ভালো বলে তারা জানেন। সে ষড়যন্ত্রের শিকার কি না? এটাই অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে।
অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে কক্সবাজার শহরের ফেরার পালা। ট্যাক্সিতে বসেই মোবাইল ফোনে আলাপ হলো চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আশুতোষ চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, আলিফকে হোস্টেল থেকে ৯ অক্টোবর বিকেলে পুলিশ আটক করেছে।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তাকে বিষয়টি জানানো হয়নি। পরে জানতে পেরেছেন। আলিফ ছাত্র হিসেবে মেধাবী। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে শুনেননি।
তবে আলিফের মায়ের দেওয়া ছনুয়ার নামের কোনো সিআইডি কর্মকর্তার সন্ধান মেলেনি।
এর ভেতরে অনেক প্রশ্ন এবং অনেক রহস্য জন্ম নিলো। আর হয়তো ওই প্রশ্নের ভেতরেই আলিফ এ ঘটনার মূল হোতা না কি অন্য কেউ? এর সঙ্গে আরও কারা জড়িত ? এ প্রকৃত সত্যের সন্ধান মিলতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২৯ সেপ্টেম্বর ফেইসবুকের একটি ছবিকে কেন্দ্র করে রামুতে শুরু হয় তা-ব। ভোর পর্যন্ত এ তা-বে ১৩টি বৌদ্ধ বিহার ও ৩০টি ঘর আগুনে পোড়ে দেওয়া হয়। এরপরের দিন উখিয়া ও টেকনাফে একই ঘটনা ঘটে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।