কবে যাবো পাহাড়ে... কবে শাল মহুয়া কণকচাঁপার মালা দেব তাহারে.... ফেসবুকে, ব্লগে দেখি দলে দলে সবাই রামুতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চাইছেন। বলছেন, একজন বাংলাদেশী হিসাবে নাকি তাঁরা লজ্জিত, একজন মুসলমান হিসাবে নাকি তাঁরা লজ্জিত। আমি লজ্জিত না। আমি মর্মাহত না। কারণ? কারণটা বলার জন্যই আবার লিখতে বসলাম।
রামুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কারা? কেউ বলবেন- বৌদ্ধরা, কেউ বলবেন সংখ্যালঘুরা, অমুসলিমরা। আক্রমণ করেছে কারা? কেউ বলবেন- বাঙালিরা, কেউ বলবেন- মুসলমানরা। আমার প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশের নাগরিক তথা ‘বাংলাদেশী’দের মধ্যে এই বাঙালি আর অবাঙালি বিভাজনটা শুরু হলো কবে থেকে ভাই? ১৯৭১ এ আমরা যে মুসলমান-অমুসলিম ভেদাভেদটাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিয়ে এক হয়ে যাবার দীক্ষা নিয়েছিলাম, সেই দীক্ষাই বা গেলো কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পরে আজও আমরা বৌদ্ধদেরকে, হিন্দুদেরকে যথেচ্ছা অত্যাচার করি, আবার অত্যাচারের পর মায়াকান্না কাঁদি। তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বারবার মনে করিয়ে দিই, ওরা-আমরা এক জাতি নই। ওদেরকে বারবার মনে করিয়ে দিই- ওরা সংখ্যালঘু, আর আমরা সংখ্যাগুরু।
তাই অত্যাচারের অধিকারটাও আমাদের, আর ক্ষমা চাওয়ার অধিকারটাও আমাদের। ওদের সাহায্যের জন্য এখন ফান্ড গঠন করা হচ্ছে। দলে দলে লোকজন যাচ্ছেন কক্সবাজারে; ত্রাণ বিতরণ করে, ক্যামেরায় ছবি তুলে ফেরার আগে সী-বীচটাও ঘুরে আসবেন বলে। এই প্রতিদিনকার নাটকে ওদের ভূমিকা কেবলই কলাগাছের।
দুর্বৃত্তরা যখন দলে দলে মারতে এলো- তখন ওরা মার খেলো।
তারপর যখন গাড়ির বহর নিয়ে সাংবাদিকরা এলো, ছবি তুললো- ওরা সেও সহ্য করে নিলো। তারপর এলো সমাজসেবীরা, ত্রাণকর্তারা। সেই ত্রাণ, সাহায্যও ওরা মাথা পেতে নিলো। এখন আবার তাঁদের নিয়ে ফেসবুকে রংবেরঙের প্রোফাইল পিক, কভার ফটো বানানো হচ্ছে, শেয়ার হচ্ছে। ওরা যেন মানুষ নয়, খুকুর সাধের টেডি বিয়ার।
খুকুর যখন খুশি খেলবে, যখন খুশি ছুড়ে ফেলে দেবে।
আমি কাউকে ‘সংখ্যালঘু’ বলে ট্যাগ করার বিরুদ্ধে। আপনি, আমি, আমরা সবাই একই দেশের নাগরিক। একই চালের ভাত খাই, একই নদীর পানি পান করি। এর মধ্যে লঘু-গুরুর বিভাজন করা অপ্রয়োজনীয়।
কখনও বলবেন না- অত্যাচার হয়েছে মাইনরিটির উপর। বলুন, অত্যাচারিত হয়েছে বাংলাদেশী নাগরিক। অত্যাচার করেছে কিছু কুলাঙ্গার দুর্বৃত্তরা, যাদের খুঁজে বের করে সাজা দিতে হবে।
আগেই বলেছি, আমি লজ্জিত নই। বাঙালি হিসেবেও লজ্জিত নই, মুসলমান হিসেবেও লজ্জিত নই।
কারণ, রামু’র ঘটনার জন্য আমার বাঙালিয়ানাও দায়ী নয়, আমার ধর্মও দায়ী নয়। যারা দায়ী- সেই অকালকুষ্মান্ডদের গায়ে ‘বাঙালি’ আর ‘মুসলমান’ লেবেল লাগাবেন না দয়া করে। ওই কাজ যারা করেছে- তারা মানুষ নয়। আর অমানুষের কোনো জাত থাকে না, ধর্ম থাকে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।