আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন বেকারের দিনলিপি...

বেকার শব্দটার উদ্ভব কিভাবে হইল তাহা খুজিয়া পাওয়া মুস্কিল। বেকার কথাটা উচ্চারন করিলে আমাদের নিকট যে চিত্রটা ফুটিয়া ওঠে তাহা হইল মুখভর্তি খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি, গায়ে ময়লা শার্ট ,ছেড়া জুতো ইত্যাদি । এহেন এক চিত্রের প্রতিচ্ছবি আমাদের রাতুল। অধিকাংশ বেকাররা আর্লি রাইজার (বেকারদের মতে) হইয়া থাকেন। অবশ্য পরিবারের সদস্যরা এ ব্যপারে দ্বিমত পোষন করিয়া থাকেন।

রাতুলও ইহার ব্যাতিক্রম নহে। রাতুলের ঘুমভাঙ্গে তাহার মা কিংবা বোনের চিল্লাচিল্লীতে (রাতুলের মতে)। কিন্তু যাহারা এইভাবে ডাকিয়া তোলেন তাহারা ইহাকে চিল্লাচিল্লি বলিতে একেবারেই নারাজ। সকাল-৮ টাঃ ভোরবেলার অযাচিত চিল্লাচিল্লির (রাতুলের মতে) ফলে চক্ষু কচলাইতে কচলাইতে রাতুলের বাথরুমে গমন। বাথরুম হইতে ফিরিয়া তার নিত্য দিনের আবিস্কার নাস্তার প্লেটের ( নাস্তা প্লেটে থাকিতে পারে আবার নাও থাকিতে পারে) পাশে বাজারের লিস্টের সাথে বাজারে থলি।

ইহার মানে নাস্তা না করিলেও চলিবে কিন্তু বাজার ইহা না করিলে কোন মতেই চলিবেনা। সকাল-৯ টাঃ ঘুম ঘুম চক্ষু লইয়া গৃহ হইতে বাহির হইলেও বাজারের পথে পা বাড়াইবার সাথে সাথে ঘুম যে কোথায় পালাইয়া যায় তাহা যাহারা কখনো বাজারে যাননি তাহাদের বোধগম্য হইবেনা। বাজারে ঢুকিয়া রাতুলের মনে হইতে থাকে সে পুর্বজন্মে কোন পাপ হয়ত করিয়াছিল, এখন তাহারই প্রায়শ্চিত্ত করিতেছে। মাছ বিক্রেতার সাথে মোলামুলি করিয়া সব্জিওলার সাথে তর্কাতর্কি করিয়া অবশেষে সে তাহার বাজারের থলিটি আংশিক পুর্ন করিয়া বাসায় প্রত্যার্পন করে। এই প্রসঙ্গে বলিয়া রাখা প্রয়োজন বাসায় ফিরিবার সময় তাহার কোন মুটে কিংবা রিকশা জোটেনা , চরন যুগলকে ভরসা করিয়াই তাহাকে ফিরিতে হয়।

সকাল-১১টাঃ বাজার হইতে ফিরিয়া কিঞ্চিত বিশ্রাম লইয়া তাহাকে ব্যাংকে যাইবার জন্য প্রস্তুতি লইতে হয়। এইখানে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগিতে পারে বেকারদের আবার ব্যাংকে যাইবার প্রস্তুতি কিসের। এই প্রসঙ্গে বলিয়া রাখা প্রয়োজন বেকারদের সাথে ব্যাংকের গভীর সম্পর্ক রহিয়াছে। মাঝে মাঝে মনে হয় বেকাররা না থাকিলে ব্যাংকগুলো চলিত কি করিয়া। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও চাকরী নামক সোনার হরিন খানার (চাকুরী দাতাদের কাছে সোনার ডিমপাড়া হাঁস) লোভ দেখাইয়া বেকারদের পকেট কাটিত ও বা কি করিয়া।

বিভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির জন্য ডিডি /টিটি কাটিবার জন্য ২/৩ ঘন্টা লাইনে দাড়াইয়া থাকিতে থাকিতে সে ভাবে এইভাবে বৃথা চেস্টা আর কতকাল করিবে। সৃস্টিকর্তা তাহাকে একখানা মামা দিলেই তো পারিত। তাহা হইলে তো তাহাকে আর লাইনে দাড়াইয়া এইভাবে দিনগুলি পার করিতে হইতনা। এইসব আবোলতাবোল চিন্তা করিতে করিতে সে কাউন্টার পর্যন্ত পৌছাইয়া যায়। দুপুর-২টাঃ ব্যাংক হইতে কার্য সমাধা করিয়া সে বাসায় ফিরিয়া একেবারে ক্লান্ত হইয়া পরে।

কিন্তু তাহার এই ক্লান্তির মর্যাদা কে দিবে, সে যে বেকার। বেকারদের কখনও ক্লান্ত হইতে হয়না। অতঃপর দুপুরের স্নান করিয়া দুপুরের খাবার খাইতে বসে তখন সে নিজেকে কিছুটা হতাশ মনে করে , হতাশ হইবার কারন হইল সকাল বেলা সে যাহা বাজার করিয়া আনিয়াছিল তাহার কোন কিছুরই উপস্থিতি সে তাহার খাবারের মেন্যুতে দেখিতে পায়না। অতঃপর যাহা পাওয়া যায় তাহা ভক্ষন করিয়া সে সকালের খবরের কাগজ লইয়া বসে। এই সময়টাই খবরের কাগজ পড়ার উপযুক্ত সময় কেননা এই সময়টাতে বাসার কারও খবরের কাগজ পড়িবার তেমন কোন চাহিদা থাকেনা।

খবরের কাগজ পড়িতে পড়িতে রাতুল ভাবে ইশ দেশের জন্য যদি কিছু করিতে পারিতাম । কিন্তু সে কিভাবে করিবে? তাহার সাধ আছে কিন্তু সাধ্য কোথায়? এই সব চিন্তা করিতে করিতে খবরের কাগজের পৃষ্ঠা উল্টাইতে থাকে। হঠাৎ মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনের দিকে তাহার চোখ আটকাইয়া যায় আর ভাবিতে থাকে এইরকম একখানা মোবাইল সেট যদি সে কিনিতে পারিত। এইসব অবান্তর কিছু ভাবনা চিন্তা করিতে করিতে বিকাল হইয়া যায়। বিকাল-৫টাঃ বিকাল বেলা রাতুলের সবচেয়ে বিরক্তিকর সময়।

আগে বিকাল বেলাটা রাতুলের কাছে খুবই প্রিয় ছিল। বিকাল হলেই সকল বন্ধু বান্ধব মিলিয়া একসাথে আড্ডা দিত। সকলে একসাথে কোথাও না কোথাও বেড়াইতে যাইত। ইদানিং রাতুলের বন্ধু বলতে আকাশ আর রাতের ধ্রুব তারারা। আসলে বেকারদের সাথে কেউ বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চায়না।

ইদানিং রাতুল আরেকটা সমাস্যায় পড়িয়াছে। পরিচিত সবাই তাহাকে জ্ঞান দিয়া বেড়ায়। এইতো সেদিনও লাস্ট বেঞ্চার রাসেল তাহাকে পুরো পনেরো মিনিট ধরিয়া জ্ঞান দিলো কিভাবে জীবনে উন্নতি করা যায় অথচ স্টুডেন্ট লাইফে রাসেল টুকলি করিয়া এর ওর খাতা টানাটানি করিয়া পরীক্ষায় কোনমতে পাশ করিত। আজ সেই রাসেল তাকে জ্ঞান দিয়া বেড়াইতেছে, আর বেড়াইবেনাও বা কেন আজ সে যে একজন সরকারী কর্মকর্তা। আজকাল এইসব অনাকাংকিত লোকজনের দেয়া জ্ঞানের ভয়ে রাতুলের ঘর হইতে একদম বাহির হইতে ইচ্ছা করেনা।

সন্ধা-৭টাঃ সন্ধার হওয়ার সাথে সাথে রাতুল তাহার সাধের পিসি খানা অন করিয়া বাইরে পায়চারি করিতে থাকে। ঘন্টা খানেক পরে রাতুল ঘরে ফিরিয়া দেখে পিসিখানা এখনও লোডিং হইতেছে, হইবে নাই বা কেন ইহা যে বয়সের ভাঁড়ে নুইয়া পড়িয়াছে। পিসি অন হইবার পর নেট ব্রাউস করিতে আরেক সমস্যায় পরে, সেই কবে থিকা তাহার একখানা হাইস্পিড ইন্টারনেট লইবার শখ কিন্তু তাহাকে মোবাইলকে মডেম বানাইয়া ব্যবহার করিতে হয়। মিনিট ত্রিশেক অপেক্ষা করিয়া সে ফেইসবুকে ঢুকিতে সক্ষম হয়। বেশ কিছুক্ষন ফেইসবুকে সময় কাটাইবার পরে সে জব সাইট গুলোতে চাকরি খুজিয়া বেড়ায়।

এইভাবে সে কত যে চাকরির আপ্লাই করিয়াছে আর পরীক্ষা দিয়াছে তাহার ইয়াত্তা নাই। কিন্তু তাহার দৌড় ভাইভা পর্যন্ত। রাত-১০টাঃ রাত দশটার দিকে খাবার টেবিলে তাহার ডাক পড়ে। খাবার টেবিলে বসা মাত্র রাতুলের বাবা তাহাকে জিজ্ঞেস করে কিরে তোর চাকরি বাকরির কি খবর। এই কথাটা শুনিতে শুনিতে রাতুলের কান পচিয়া গিয়াছে।

কোন মতে নাক মুখ বুজিয়া খাবার টেবিল হইতে উঠিতে পারিলেই সে বাঁচে। রাত-১২টাঃ এই সময়টায় রাতুল টিভি দেখিতে বসে। সারাদিন রাতুল টিভি দেখিতে সুযোগ ই পায়না। সারা দিন ঘরে টিভি মানে বস্তা পচা ইন্ডিয়ান চ্যানেলগুলোর সিরিয়াল। রাতুল বুঝিয়াই পায়না এইসব সিরিয়াল গুলো দেখিয়া তাহার মা ও বোন কি মজা পায়।

মাঝে মাঝে পাশের বাসার পিচ্চিটাও তাদের সাথে যোগ দেয়। পিচ্চিটা বাসায় আসিলে ডরেমন নামক আরেক উপদ্রব শুরু করে। ইদানিং রাতুল লক্ষ্য করিতেছে পিচ্চিটা বাসায় আসিয়া সকলের সাথে হিন্দিতে কথা বলিবার চেস্টা করে। মাঝে রাতুলের একটা টিভিকার্ড কিনিতে ইচ্ছা করে কিন্তু তাহা কিনিবার সামর্থ ও যে তাহার নাই। রাতুলের প্রিয় খেলা ক্রিকেট কিন্তু সিরিয়ালের যন্ত্রনায় সে কোন সময়ই প্রিয় দলের খেলা দেখিতে পারেনা।

রাত-১টাঃ ঘন্টা খানেক টিভি দেখিবার পর রাতুল ঘুমাইতে যায়। কিন্তু তাহার চোখে ঘুম আসেনা, কারন সে জানে আগামী কালও তাহার একই ভাবে কাটিবে। এহেন চিন্তা করিতে করিতে সে একসময় ঘুমাইয়া পড়ে .............................. ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.